ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গিজার পিরামিড রহস্য উদ্ঘাটন -এম আজিজুল হক

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২০ ডিসেম্বর ২০১৭

গিজার পিরামিড রহস্য উদ্ঘাটন   -এম আজিজুল হক

হাজার হাজার বছর আগে এই পৃথিবী থেকে মিসরীয় ফারাওরা গত হয়েছেন তবু তাদের জীবনাচরণ, রাজ্যশাসন পদ্ধতি, ধ্যান-ধারণা সবকিছু নিয়ে আধুনিককালের মানুষের কৌতূহলের অন্ত নেই। মৃত্যুর পর আরেক জীবনে যাতে শরীর অক্ষত থাকে এই চিন্তার প্রেক্ষিতে রাজা-রানী বা তাদের নিকটাত্মীয়দের শরীর মমি করা হতো- সেই সঙ্গে দেয়া হতো তাদের ব্যবহার্য মূল্যবান আসবাবপত্র ও দামী দামী জিনিসপত্র। এসব যাতে কোন দুর্বৃত্ত চুরি বা হস্তগত করতে না পারে সে জন্য তৈরি হতো সুকঠিন দেয়াল নির্মিত উঁচু উঁচু পিরামিড। সাদা চুনাপাথর নির্মিত পিরামিডের উজ্জ্বলতা দিন-রাত সব সময়ই মানুষের বিমুগ্ধ দৃষ্টিকে আকর্ষণ করেছে। সেই সঙ্গে সবার মনে নানা ধরনের প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। প্রাচীনকালে যখন আধুনিককালের মতো ক্রেন ছিল না তখন কয়েক টন ওজনের বড় বড় পাথরের চাই কীভাবে পাহাড় সমান উঁচুতে তোলা হয়েছিল। সেই পিরামিড এলাকার আশপাশে কোন গ্রানাইট অথবা চুনাপাথরের উৎস নেই। অথচ গিজাতে ফারাও রাজা খুফুর যে বিশাল পিরামিড আছে তাতেই লেগে গেছে ১ লাখ ৭০ হাজার টনের বেশি চুনাপাথর। খুফুর এই সমাধি তৈরি হয় খ্রিস্টপূর্ব ২৫৫০ সালে অর্থাৎ সাড়ে চার হাজার বছরেরও আগে। দীর্ঘদিন যাবত প্রত্নতত্ত্ব¡বিদদের ধারণা ছিল যে, গিজা থেকে আট মাইল দূরে তূরা নামের এক জায়গা থেকে চুনাপাথর সংগ্রহ করা হতো এবং এরও পাঁচ শ’ মাইল দূরের এক পাথরঘাটা থেকে গ্রানাইট পাথর আহরণ করা হতো। কিন্তু কীভাবে এত বড় বড় পাথরের চাই পরিবহন করা হতো সে সম্পর্কে প্রত্নতত্ত্ব প-িতদের ভাসা ভাসা ধারণা থাকলেও তা ছিল অনুমাননির্ভর এবং তা নিয়ে মতপার্থক্যও ছিল প্রচুর। এবার আকস্মিকভাবে ফারাও রাজা খুফুর গিজা পিরামিড এলাকা থেকে কয়েকজন প্রত্নতত্ত্ব¡বিদ একটি প্রাচীন পেপিরাসলিপি, একটি নৌকার অংশবিশেষ এবং পিরামিড সংলগ্ন এলাকায় এক জলপথের সন্ধান পান। এতে অনেক প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়। পিয়েরে টেল নামের এক ইজিপ্টোলজিস্ট চার বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করার পর এই পেপিরাসের ভাষান্তর করে যে অর্থ উদ্ধার করেন তা তিনি সম্প্রতি ব্রিটেনের চ্যানেল ফোরের ‘দি নিউ এডিভেন্স’ নামে এক প্রামাণ্য অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন পিয়েরে টেল দাবি করেন যে, তিনি মিসরীয় সভ্যতার সবচেয়ে প্রাচীন পেপিরাসের ভাষান্তর করতে পেরেছেন। এই পেপিরাসটি লেখা হয়েছিল প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে। পিরামিডের জন্য গ্রানাইট ও চুনাপাথর বহনকারী বিশেষ পদ্ধতিতে নির্মিত নৌকা বহরের দলপতি ছিল সে। তার নাম মেরের। ৪০ জন দক্ষ নাবিকের ওপর নজরদারি করা ছিল তার দায়িত্ব। তার লেখা থেকে জানা যায় যে, গ্রানাইট ও চুনাপাথর পরিবহনের কাজে হাজার হাজার দক্ষ শ্রমিক নিয়োজিত ছিল। তারা নীল নদ বরাবর খাল কেটে জলপথ তৈরি করে পাথর কেয়ারি থেকে পাথর নৌকাগুলোতে তুলত। বিশাল পাথরের ভারে নৌকাগুলো যাতে ডুবে না যায় সে জন্য অনেক নৌকা মোটা মোটা পাকানো দড়ি দিয়ে এক সঙ্গে বাঁধা হতো। প্রত্নতত্ত্ব¡বিদরা এসব দড়ির অনেক অক্ষত অবস্থায় পেয়েছেন। পাথরগুলো নৌকায় তোলা হলে তা দিয়ে নদীপথের নির্দিষ্ট দূরত্ব অতিক্রম করে পিরামিডের একেবারে কাছাকাছি খননকৃত একটি খালের পারে। সেগুলো নামানো হতো এভাবে দুই যুগেও বেশি সময় ধরে প্রায় ২৩ লাখ পাথরের চাই পিরামিডের মূল কাঠামোর কাছে বহন করে আনা হয়েছিল। সূত্র : ইন্ডিপেনডেন্ট
×