ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পার্থ টেস্ট, স্পট ফিক্সিং শঙ্কায় উত্তাপহীন লড়াই

মালানের শতকে ওয়াকায় প্রথম দিন ইংল্যান্ডের

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭

মালানের শতকে ওয়াকায় প্রথম দিন ইংল্যান্ডের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এ্যাশেজ সিরিজ আবারও হাতছাড়া হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে পার্থের ওয়াকা গ্রাউন্ডে লড়াইয়ে নেমেছে ইংল্যান্ড। কারণ ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া। ঐতিহাসিক এ মাঠে এরপর আর কোন টেস্ট হবে না। এ ছাড়া এই টেস্টে ‘স্পট ফিক্সিং’ কা- হতে পারে এমন গুঞ্জন বাতাসে। এতসব জল্পনা-কল্পনার মধ্যে তাই এ্যাশেজের ময়দানী লড়াইয়ের উত্তাপ অনেকখানিই কমে গেছে। তবে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে বৃহস্পতিবার প্রথমদিনটা দারুণ কাটিয়েছে সফরকারী ইংল্যান্ড। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ডেভিড মালান। ওপেনার মার্ক স্টোনম্যান ও জনি বেয়ারস্টোর দুটি অর্ধশতকও আছে। দিনশেষে তাই ৪ উইকেটে ৩০৫ রান তুলে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইটা প্রাথমিকভাবে দারুণ হয়েছে ইংলিশদের। আরেকটি এ্যাশেজ সিরিজ হারানোর শঙ্কায় পড়েছে ইংল্যান্ড। প্রথম দুই টেস্টে প্রায় বিনাযুদ্ধে আত্মসমর্পণ করেছে তারা স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। তাই পার্থের ওয়াকা গ্রাউন্ডে ক্রিকেটীয় লড়াইটা হওয়ার কথা জমজমাট। পার্থের সোয়ান নদীর অপরপ্রান্তে ৬০ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার নতুন স্টেডিয়াম নির্মিত হয়েছে। এ কারণে ৪৪তম এই টেস্ট সমাপ্তির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে নাম মুছে যাবে ওয়াকা গ্রাউন্ডের। কিন্তু ক্রিকেটীয় লড়াইয়ের চেয়ে এখন বিতর্কে গরম আবহাওয়া। সম্প্রতিই বিখ্যাত ‘দ্য সান’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে পার্থ টেস্টকে ‘স্পট ফিক্সিংয়ের’ মঞ্চ হিসেবে নিয়েছে জুয়াড়িরা। এজন্য প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড নিয়ে নেমেছে তারা। এখন তাই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু সেদিকে। এটা নিয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) দুর্নীতি দমন বিভাগ (আকসু) ও আইসিসি তৎপর আছে। আইসিসির আকসু মহাব্যবস্থাপক এ্যালেক্স মার্শাল এবং সিএ প্রধান নির্বাহী জেমস সাদারল্যান্ড তেমন কোন সম্ভাবনা নেই বলে বিষয়টিকে উড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু স্পট ফিক্সিং বিষের শঙ্কা কাটেনি। তবে সেসব নিয়ে অবশ্য সফরকারী ইংল্যান্ড দলের ভাবলে চলবে না। তাদের ব্যাট-বলের লড়াইটা চালাতেই হবে। বৃহস্পতিবার সেটা মাথায় নিয়েই নেমেছে জো রুটের দল। টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নামে ইংলিশরা। কিন্তু শুরুটা ভাল হয়নি অভিজ্ঞ ওপেনার এ্যালিস্টার কুক দ্রুত বিদায় নেয়াতে। ওয়াকার গতিময় উইকেটে মিচেল স্টার্কের গতির কাছে পরাভূত হয়ে সাজঘরে (৭) ফেরেন এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে আটকে। তখন সবেমাত্র দিনের পঞ্চম ওভার, স্কোরবোর্ডে রান ২৬। তবে দ্বিতীয় উইকেটে স্টোনম্যান ও জেমস ভিন্স প্রতিরোধ গড়ে তোলেন অসি পেসারদের বিরুদ্ধে। বেশ স্বাচ্ছন্দ্য নিয়েই খেলে যাচ্ছিলেন তারা। ৬৩ রানের জুটি হওয়ার পর ভিন্সকে সাজঘরে ফিরিয়ে অসিদের আরেকটি সাফল্য এনে দেন পেসার জশ হ্যাজলউড। ২৫ রান করতে পেরেছিলেন তিনি। এরপর অধিনায়ক রুট যোগ দিলেও তেমন সুবিধা করতে পারেননি। তৃতীয় টেস্ট মাঠে গড়ানোর আগে রুটকেই টার্গেট করেই পরিকল্পনা এঁটেছিল অসিরা। সেটা বাস্তবায়ন করেছেন প্যাট কামিন্স তাকে ২০ রানে সাজঘরে ফিরিয়ে। তবে এর মধ্যে অর্ধশতক পেয়ে গেছেন স্টোনম্যান। এরপর অবশ্য বেশিদূর যেতে পারেননি। ১১০ বলে ১০ চারে ৫৬ রান করে আউট হয়ে যান। দলীয় ১৩১ রানের মধ্যেই চার টপঅর্ডারকে হারিয়ে বিপদে পড়ে ইংলিশরা। ওয়াকায় এমনিতেই বেশ বাজে ইতিহাস সফরকারীদের। ৩৯ বছরে এখানে কোন জয়ের মুখ দেখেনি তারা। এবারও যেন শুরুটা সেই ভয়াল স্মৃতিগুলোই সামনে আনছিল। তবে অসিদের সেই স্বপ্ন সফল হতে দেননি মালান ও বেয়ারস্টো। দু’জন মিলে দারুণ প্রতিরোধের প্রাচীর গড়ে তোলেন। সেখানে আর ফাটল ধরাতে পারেনি স্টিভেন স্মিথের বোলিং আক্রমণগুলো। পঞ্চম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন থেকে মালান ও বেয়ারস্টো যোগ করেন ১৭৪ রান। সেই জুটিতেই শেষ পর্যন্ত দিনটা নিজেদের পক্ষে নিতে পেরেছে ইংল্যান্ড। মালান ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকান। তিনি ১৭৪ বলে ১৫ চার ও ১ ছক্কায় ১১০ রানে অপরাজিত আছেন। আর বেয়ারস্টো ১৪৯ বলে ১০ চারে এখন পর্যন্ত করেছেন ৭৫ রান। ৪ উইকেটে ৩০৫ রান নিয়ে ১ ওভার আগেই দিন শেষ করেছে ইংল্যান্ড। সংগ্রহাটা কতখানি বাড়িয়ে নিতে পারবে সফরকারীরা তার পুরোটাই হয়তো এ জুটির ওপর নির্ভর করবে আজ। তবে এরপরও মঈন আলীর মতো ব্যাটসম্যান আছেন এবং ক্রিস ওকস দারুণ ব্যাট করতে পারঙ্গম। তাই প্রথমদিনের পর আপাতত চাপমুক্ত ও ফুরফুরে মেজাজেই আছে ইংলিশরা। স্কোর ॥ ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস- ৩০৫/৪ (৮৯ ওভার মালান ১১০*, বেয়ারস্টো ৭৫*, স্টোনম্যান ৫৬, ভিন্স ২৫, রুট ২০, কুক ৬; স্টার্ক ২/৭৯, কামিন্স ১/৬০, হ্যাজলউড ১/৬২)। *প্রথমদিন শেষে।
×