ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

স্বৈরাচারী মুগাবের পতন ॥ কিন্তু তারপর

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

স্বৈরাচারী মুগাবের পতন ॥ কিন্তু তারপর

৩৭ বছর ক্ষমতায় থাকার পর অবশেষে পতন ঘটল জিম্বাবুইয়ের স্বৈরশাসক রবার্ট মুগাবের। সৈনিক-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ২১ নবেম্বর তিনি পদত্যাগ করেন। তার শাসনে দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়িত জিম্বাবুইয়ের মানুষ আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় নৃত্য করতে থাকে। একসময় উৎসবের রেশও মিলিয়ে যায়। অনেকের মনে প্রশ্ন দেখা দিতে শুরু করে এরপর কি হবে? মুগাবের উত্তরসূরি হিসেবে যিনি এখন ক্ষমতায় এসে বসেছেন সেই এমারসন নানগাগওয়া কি মুগাবের চেয়ে ভাল হবেন? নানগাগওয়া মুগাবের সাবেক বশংবদ। বিরোধী দলনেতার কুখ্যাতি আছে। গুরুরাহুনদির গণহত্যায় সেখানে প্রায় ২০ হাজার লোক প্রাণ হারিয়েছিল সেই ঘটনায় তার হাত ছিল বলে অভিযোগ আছে। নির্বাচনে কারচুপি করতেও নাকি তার জুড়ি নেই। এমনকি ২০০৮-২০১৬ গেল পর্বে দেশে যে ব্যাপক আকারে হীরা লুটপাট হয়েছে তাতেও নানগাগওয়ার দায় আছে। মুগাবের পতনের পর স্বল্পদিনের নির্বাসন থেকে গত ২২ নবেম্বর নানগাগওয়ে দেশে ফিরে এক নতুন গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই, অর্থনীতিকে গড়ে তুলতে চাই, কাজ চাই।’ কিন্তু নাগাগওয়ে এসব প্রতিশ্রুতির কোনটাই পূরণ করতে পারবেন কিনা তা দুটি শর্তের ওপর নির্ভর করছে। প্রথমটি হলো তিনি পরিষ্কারই বুঝতে পারছেন যে জিম্বাবুইয়ের এখন বৈদেশিক সাহায্য খুবই প্রয়োজন। দেশটির আর্থিক ঘাটতি জিডিপির ১২ থেকে ১৫ শতাংশ। মুদ্রাস্ফীতির হার ২.৫ থেকে ৫০ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রার যে টুকু মজুদ আছে তা কয়েক মাসের মধ্যে ফুরিয়ে যেতে পারে। দেশটির অবকাঠামো ধসে পড়ার উপক্রম। দ্বিতীয়ত, নানগাগওয়ে জানেন যে বৈদেশিক সাহায্য পেতে হলে শুধু যে সরকারী ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে তাই নয়, রাজনৈতিক সংস্কারও করতে হবে যার পরিণতিতে অনুষ্ঠিত হতে হবে সুষ্ঠু নির্বাচন। সংশয়বাদীদের মনে পড়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে নির্মমভাবে কারচুপি করার পর ২০০৯ সালে যে ঐক্য সরকার গঠিত হয়েছিল সেই সরকারও অনেকটা একই রকমের আশা ও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিল। অথচ মুগাবে তার প্রতিশ্রুত বড় ধরনের সংস্কারের কোনটাই বাস্তবায়িত করতে পারেননি। এবার যদি নানগাগওয়েকে নগদ অর্থ সাহায্য পেতে এবং ৯০০ কোটি ডলারের বকেয়া ঋণ মওকুফ পেতে হয় তাহলে যা যা প্রতিশ্রুতি করেছেন তার সবই পূরণ করতে হবে। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য মুগাবের প্রবর্তিত দেশীয়করণ আইন বাতিল করতে হবে। সেটা করা কতদূর ‘সম্ভব’ হবে বলা মুশকিল। রাজনৈতিক সংস্কারের কাজটা হবে আরও কঠিন। এ পর্যন্ত যে আন্দোলন হয়েছে মূলত তা হয়েছে শাসক দল জানুÑ পিএফ পার্টির মধ্যকার লড়াই। নানগাগওয়ে ফিরে আসার আগেই মুগাবের কয়েক ডজন মিত্রকে হয় গ্রেফতার করা হয়েছিল নয়ত তারা অন্তর্ধানে গিয়েছিলেন। এদের মধ্যে সাবেক অর্থমন্ত্রী ইপনাটিয়াস চাম্বা এবং মুগাবের স্ত্রী গ্রেস মুগাবেও আছেন। মুগাবের কার্যকালের অবশিষ্ট মেয়াদ ছিল আর মাত্র বছরখানেক। তার মানে নানগাগওয়ে এই অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য প্রেসিডেন্ট পদে থাকবেন। তারপর নির্বাচন দেবেন। তবে তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন দেবেন কি না তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। কারণ নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তিনি যে পরাজিত হবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। ইতোমধ্যে কথা শোনা যাচ্ছে যে নিজের প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদ আরও অন্তত দুই তিন বছর বাড়ানোর জন্য তিনি পার্লামেন্টের উভয় পরিষদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারেন। প্রধান বিরোধী দল এমডিসির নেতা মরগ্যান সাভাঙ্গিরি এমন মেয়াদ বৃদ্ধির বিরোধিতা করলেও পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে জানু-পিএফ তা কার্যকর করার ক্ষমতা রাখে। পরিস্থিতি যাই হোক, বিরোধী দল বেদনাদায়ক রকমের দুর্বল হলেও সাভাঙ্গিরী, যার ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিশ্চিত জয় হরণ করে নেয়া হয়েছিল, আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসছেন। তার জনসভায় লোকসমাগমও হচ্ছে বিপুল। কিন্তু সমস্যা হলো তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত। তাছাড়া তার দলের মধ্যেও বিভাজন আছে। তাই বিরোধী দলের দিক থেকে আশাব্যঞ্জক কিছু হওয়ার লক্ষণ নেই। আর দেশ পরিচালনায় চালকের আসনে যদি শেষ পর্যন্ত নানগাগওয়ে ও সেনাবাহিনীই থেকে যায় তাহলে জিম্বাবুইয়ের ভবিষ্যত সম্পর্কে আশাবাদী হওয়া কঠিন। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি যে তিমিরে সেই তিমিরেই থেকে যাবে। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×