ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

জুবায়ের আহাম্মদ

উদাসীনতা পরিহার

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ৭ ডিসেম্বর ২০১৭

উদাসীনতা পরিহার

হলুদ পাতার বাংলা দ্বিতীয়পত্র বইতে মা পড়িয়েছিলেন একটা রচনা। সময়ের মূল্য। এরপর থেকেই দেখেছি এই এক রচনা সবসময়ই গুরুত্ব পাচ্ছে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে রচনার আকারটাও। কথাটা আমার জন্য না। সবার জন্যই সত্য। দেশের সব ক’টা শিক্ষার্থীর কাছে এই রচনা বেশিই মূল্যবান। কিন্তু বাস্তবতা হলো আড়ালে থাকে সেই সত্যিকারের ‘সময়ের মূল্য।’ ব্যাপারটা হতাশার। সময় নিয়ে আমাদের ভাবনা-চিন্তার জায়গা আসলেই বেশ ছোট। আজকের দিনে বিশ্ববিদ্যালয় আঙ্গিনায় নিজেদের কথাই যদি বলি, প্রায়ই সহপাঠীরা বলে, ‘এত আগে গিয়ে কি হবে? নয়টার ক্লাস কবে। নয়টায় হয়েছে শুনি?’ আসলে এই আচরণ আবহমানকাল থেকেই। একটা সময়ের কথা আমরা সবাই জানি, ‘গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ।’ প্রাকৃতিক সম্পদে আর আশীর্বাদে এদেশ এতটাই পুষ্ট ছিল আমরা শুরু থেকেই আমরা বাঙালীরা ছিলাম উদাসীন। ফিরে আসি সময়ের কথায়। অতীতে না হয় আমাদের উদাসীনতা কাটা পড়ে গেছে প্রাকৃতিক প্রাচুর্যে। কিন্তু এখন? সেই স্বর্ণালি দিন তো হারিয়ে ফেলেছি। দেশের পরিস্থিতি এমন স্বাধীনতার ৪৭ বছরে এসেও আমরা লক্ষ্য স্থির করি স্বাধীনতার ৭০ বছর পর আমরা হব মধ্যম আয়ের দেশ। ঠিক একই সময়ে জাপানকে একটু দেখি? ২য় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশটা প্রায় ৭০ বছর পর আজকের অবস্থানে আছে। তারা যে সময় উন্নত দেশ, সে সময় আমরা কোথায় ছিলাম? জাপানে সময় ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ তার একটা পরিসংখ্যান দিই, ২০১৪ সাল থেকে সারা জাপানে সমস্ত বুলেট ট্রেনের দেরি হবার গড় মাত্র ৫৪ সেকেন্ড। আর আমরা ঘর থেকে স্টেশনের উদ্দেশে বের হই ট্রেন ৫৪ মিনিট দেরি করবে এই ভরসায়। দোষ কার? অবশ্যই আমাদের। সেই সঙ্গে দোষ আমাদের সামাজিক ব্যবস্থার, প্রশাসন আর নিয়মের। নিয়ম আছে সরকারী কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট সময়ে আসতে হবে কর্মস্থলে। দেরি করলেই থাকবে উপযুক্ত ব্যবস্থা। কিন্তু ...। ওয়াটারলু যুদ্ধে নেপোলিয়নের পরাজয়ের কারণ সবাই জানি। কিন্তু সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবন গড়ার জন্য যেন কেউই নেই। সময়ের প্রতি এই অবহেলার জন্যই আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বা স্টেশনের প্লাটফর্মে বসে থাকলে চিন্তা করি ‘ফোনের চার্জ চলে গেল।’ কিন্তু কখনোই ভাবি না কোটি মানুষের দেশটা কত বেশি শ্রমশক্তি হারাল। উন্নতি আর সমৃদ্ধির পথে কতটা পিছিয়ে গেলাম। তবু আমরা বাঙালী জাতি। আমরা সবকিছু নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে জানি অথবা জানি না। দেশে শিক্ষিত মানুষের হার বাড়ছে। বাড়ছে চিন্তা চেতনায় অগ্রগামী মানুষের সংখ্যা। যারা জানে সময়ের মূল্য। সে কারণেই আজ লাখো তরুণ গতানুগতিক চাকরি খোঁজার পেছনে সময় না দিয়ে ঝুঁকে পড়ছে ফ্রি ল্যান্সিং, গ্রাফিক্স ডিজাইনের মতো কাজে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। দেশকে যারা স্বপ্ন দেখাচ্ছে। আর সবকিছুর মূলে সত্য একটা। ওরা জানে সময় কি। ওরা জানে সময়ের মূল্য কি। ----কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×