ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

মিরপুরের উইকেটের বেহাল দশা

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৪ ডিসেম্বর ২০১৭

মিরপুরের উইকেটের বেহাল দশা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ টি২০ খেলা মানেই ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং। ধুন্ধুমার ব্যাটিং প্রদর্শন। বড় স্কোর হবে। রান হবে প্রচুর। অথচ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট যেন হতাশাই ছড়িয়ে যাচ্ছে! ১০০ রানও যে এখানে হচ্ছে না! উইকেটের বেহাল দশা হয়ে গেছে। সিলেটে এবার বিপিএলের শুরু হয়েছে। সেখানেও রান হয়েছে। রান হয়েছে চট্টগ্রামেও। প্রতিটি খেলাই চট্টগ্রামে জমেছে। অথচ মিরপুরে খেলা হতেই আবারও স্কোরবোর্ডে রান যুক্ত না হওয়ার হতাশা ঘিরে ধরেছে। এবার ঢাকাপর্বের প্রথমদিনে প্রথম ম্যাচে ৯৭ রানে অলআউট হয় রংপুর রাইডার্স। দ্বিতীয়দিন প্রথম ম্যাচে ৬৭ রানেই গুটিয়ে যায় চিটাগং ভাইকিংস। দর্শকরা খেলা দেখতে আসে অনেক আশা নিয়ে। প্রচুর রান হবে। সেই রান অতিক্রম করতে গিয়ে দারুণ লড়াই হবে। অথচ রান হচ্ছে একেবারেই কম। রংপুর যে ৯৭ রানে অলআউট হয় সেটিই শনিবার পর্যন্ত এবারের আসরে সবচেয়ে কম রানে গুটিয়ে যাওয়ার রেকর্ড ছিল। পরেরদিনই সেই রেকর্ড ভেঙ্গে যায়। চিটাগং সবচেয়ে কম রানে গুটিয়ে যায়। এমন অবস্থায় বিপিএল গবর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক ও বিসিবির সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজনও উইকেট দেখতে যান। চিটাগং-সিলেট ম্যাচটি শেষ হতেই মিরপুরের কিউরেটর গামিনি ডি সিলভাকে নিয়ে উইকেট পরখ করেন। তাদের উইকেট পরখ করার পেছনে শনিবার যে মাশরাফি বিন মর্তুজা ও তামিম ইকবাল উইকেট নিয়ে হতাশা দেখান সেটিও কারণ। দর্শকরা তো এত কম রান হওয়াতে খেলা দেখতে আসা নিয়েই হতাশ হয়ে যাচ্ছেন। তবে টি২০’র জন্য আদর্শ উইকেট না হলেও উইকেট খারাপও নয় বলেই জানান ইসমাইল হায়দার মল্লিক। যুক্তিও দেখান। এই উইকেটেই যে কোন দল ২০০ রানের বেশি করছে। তাতে করে ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং করার এ্যাপ্রোচই দায়ী হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শনিবার দুটি ম্যাচ হয়। দুটির একটি ম্যাচে ঢাকা ডায়নামাইটস দুই ’শ রানের ওপরে স্কোর বোর্ডে জমা করে। এর পেছনেও কারণ রয়েছে। ৬ থেকে ৭টি ক্যাচ মিস হওয়াতে ব্যাটসম্যানরা মারমুখী হয়ে রান করার সুযোগ পেয়েছেন। এর বাইরে তিন ইনিংসে সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ১০৬। উইকেটের কি যে করুণ দশা তা বোঝাই যাচ্ছে। তাতে শনিবার ম্যাচ শেষে ক্ষেপেছিলেন রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তামিম তো ফাইনাল ম্যাচটি চট্টগ্রামে হলে ভাল হয় এমনও ইঙ্গিত দেন। মাশরাফির মতে টি২০ ক্রিকেট এমন উইকেটে গ্রহণযোগ্য নয়, ‘আমার মনে হয় আপনারা সবাই খেলা বোঝেন। আসলে এই ধরনের উইকেটে টি২০ খেলা খুব কঠিন। বিশেষ করে চট্টগ্রাম থেকে আসার পর এখানে এ ধরনের উইকেট পাওয়া, অবশ্যই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমরা জানি এখানে টস হারলে বোলিং টিম সুবিধা পায়। কিন্তু এত সুবিধা পাবে! যেমন, গুড লেন্থ বল মাথার ওপর দিয়ে চলে যাবে, স্পিনে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টেস্টে যেমন হয়েছিল, সাদা বলেও তেমন হবে এটা আসলে খুবই কঠিন। আমার কাছে মনে হয় উইকেট নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত।’ তামিম উইকেট নিয়ে বলেন, ‘আমার প্রশ্ন আপনাদের কাছে। সবসময় একটি অজুহাত দেয়া হয় যে, মিরপুরে অনেক খেলা হয়। এবার তো ১০ দিন খেলা হলো না। এরপর এমন উইকেট। এটা সে (কিউরেটর) উত্তর দিতে পারবে ভাল।’ সঙ্গে আরও বলেন, ‘আমার কাছে সবচেয়ে খারাপ লাগছে, এত দর্শক এলো মাঠে। কিন্তু এসে দেখল একদল ৯৭ করছে, আরেক দলের সেটি করতে শেষ ওভার পর্যন্ত যেতে হয়েছে, দর্শকের জন্য এটি হতাশাজনক। আমরা সবাই চাই বিপিএল পরের ধাপে যাক। কিন্তু এ রকম জঘন্য উইকেটে খেলা হলে তো হতাশাজনক। কি কারণে এ রকম উইকেট বানানো হচ্ছে আমার ধারণা নেই। আমি জানি না সমস্যাটা কি। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় এটা খুঁজে বের করা উচিত। মাটিতে সমস্যা যদি থাকে বা প্রস্তুতিতে সমস্যা যেটিই হোক, সমস্যা বের করা উচিত। কারণ টুর্নামেন্টের এই পর্যায়ে এসে সবাই চায় ভাল উইকেটে খেলতে। টসে হেরেই ম্যাচ হেরে গেছি, এই অনুভূতি নিয়ে কেউ মাঠে আসতে চায় না।’ তামিম আরও বলেন, ‘এমনিতে ঢাকার উইকেটে টস হারলেই ব্যাটিং করতে হবে, এটা প্রায় নিশ্চিত। কেউ জানে না কত রান নিরাপদ। তারপর যদি গিয়ে দেখি উইকেট এমন আচরণ করছে তাহলে যে কোন দলেরই ড্রেসিং রুম দ্বিধায় পড়ে যায়।’ সংস্কারের পর মিরপুর স্টেডিয়ামের আউটফিল্ডের অবস্থাও বাজে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টের পর তো আইসিসি এই আউটফিল্ডকে ‘বাজে’ বলে রেটিং দিয়েছিল। মিরপুরের উইকেটে বিপিএলের সবচেয়ে বেশি ম্যাচ রাখা হয়েছে। অথচ এই উইকেটেই রান দেখা যাচ্ছে না। তাতে মিরপুরের শ্রীলঙ্কান কিউরেটর গামিনি ডি সিলভাকে সরাসরিই কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন তামিম, ‘তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করা উচিত। এই ধরনের উইকেট আসলে টুর্নামেন্টের জন্য ভাল নয়। যারা খেলে, যারা দেখে, মাঠে যারা থাকে, কেউই মজা পায় না। এমন নয় যে এই মাঠে আগে রান হয়নি। রান ঠিকই হয়েছে। কিন্তু বিপিএল এলে শুধু এ রকম হয়ে যায়।’ বিপিএলের ফাইনাল চট্টগ্রাম হলে ভাল হবে কিনা এমন প্রশ্নে তামিম বলেই দেন, ‘নেয়া তো দরকার।’ এখন উইকেটে রান মিললেই হলো।
×