ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

কেমন হলো বাংলাদেশ আরচার এবং আয়োজকদের পারফর্মেন্স

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২ ডিসেম্বর ২০১৭

কেমন হলো বাংলাদেশ আরচার এবং আয়োজকদের পারফর্মেন্স

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বৃহস্পতিবার শেষ হলো এশিয়ান আরচারির সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা ‘এশিয়ান আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপে’র ২০তম আসর। প্রায় সপ্তাহব্যাপী তীর-ধনুকের এই লড়াইয়ে তীরন্দাজদের পদচারণায় মুখরিত ছিল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। ১০ ইভেন্টে ৩০টি পদকের জন্য ২৮৬ আরচার লড়েন। ইভেন্টগুলো হলো : রিকার্ভ পুরুষ দলগত, রিকার্ভ নারী দলগত, রিকার্ভ পুরুষ একক, রিকার্ভ নারী একক, কম্পাউন্ড পুরুষ দলগত, কম্পাউন্ড নারী দলগত, কম্পাউন্ড পুরুষ একক, কম্পাউন্ড নারী একক, রিকার্ভ মিশ্র দলগত এবং কম্পাউন্ড মিশ্র দলগত। এই আসরে গত আসরের মতো এই আসরেও শ্রেষ্ঠত্ব অক্ষুণœ রেখেছে দক্ষিণ কোরিয়া। টুর্নামেন্টের মোট ৩০ পদকের প্রায় অর্ধেক এবং মোট স্বর্ণের প্রায় সবগুলোই জিতে নেয় তারা। তাদের প্রাপ্তি ৮ স্বর্ণ, ৪ রৌপ্য এবং ২ তাম্রপদক। গতবারের মতো এবারও রানার্সআপ হয় ভারত (২-৩-১)। তৃতীয় হয় জাপান (২টি রৌপ্যপদক)। এবারের আসরে মোট ৩২ দেশ অংশ নেয়। তাতে মাত্র ১০ দেশই পদক জেতে। এর মধ্যে কোরিয়া আর ভারত ছাড়া আর কোন দেশ স্বর্ণপদক করায়ত্ত করতে পারেনি। এছাড়া বাংলাদেশসহ বাকি ২৩টি দেশই কোন পদক জিততে পারেনি। পদক না জিতলেও দারুণ পারফর্মেন্স করেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। দলগত র‌্যাঙ্কিংয়ে সেরা ১০-এ থাকার লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের। আর রিকার্ভের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলেই যথেষ্ট। সেই প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে বাংলার ধনুর্বিদরা। এই আসরে যে কোন ইভেন্টের সেমিফাইনালে ওঠাই হচ্ছে স্বাগতিক বাংলাদেশের আরচারির ইতিহাসে সেরা সাফল্য। কিন্তু মেয়েদের কম্পাউন্ড দলগত ইভেন্টে ভারতের কাছে হেরে শেষ চারেই থমকে যেতে হয় সুস্মিতাদের। হেরে যায় ২২৮-২১৩ পয়েন্টে। ফাইনালে উঠতে না পেরে স্বর্ণ ও রৌপ্য জেতার সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেলেও সুযোগ ছিল তাম্রপদক জেতার। কিন্তু সেই লড়াইয়ে ইরানের কাছে হার মানতে হয়। মনোসংযোগের অভাব এবং আবহাওয়ার কারণে প্রত্যাশিত ফল পায়নি বাংলাদেশÑ খেলা শেষে এমন কথাই জানান বাংলাদেশের তীরন্দাজরা। বাংলাদেশ দলের কোচ নিশীথ দাস বলেন, ‘টুর্নামেন্টে দলগত কম্পাউন্ডের পারফর্মেন্সে আমি দারুণ খুশি। আমাদের ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা খুবই কম। বেশি বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলে আমার দল ভবিষ্যতে আরও ভাল ফল করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রিকার্ভের ব্যক্তিগত ইভেন্টেও ভাল করতে পারতো রোমান সানা। তার দুর্ভাগ্য যে তাকে দক্ষিণ কোরিয়ার মতো চ্যাম্পিয়ন দলের বিপক্ষে লড়তে হয়েছে।’ বাংলাদেশের যে দলটি তাম্রপদকের লড়াইয়ে ইরানের কাছে হারে সে দলের অন্যতম নারী আরচার বন্যা আক্তার বলেন, ‘টেম্পারামেন্টের কারণে সেমিতে হেরে গেছি। কিছুটা নার্ভাসনেসও কাজ করেছে। বড় দলগুলোর বিপক্ষে কম খেলার কারণেই মূলত এটা হয়েছে।’ আরেক আরচার রোকসানা আক্তারের ভাষ্য, ‘সেমিফাইনালে হেরেছি ... আসলে খেলা হচ্ছে ভাগ্যের বিষয়। আমরা কোন ফাঁকি দেইনি। সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করেছি। যাদের সঙ্গে খেলেছি তারা অনেকদিন ধরেই খেলছে। আমাদের অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। আন্তর্জাতিক ইভেন্ট কম খেলি। বিদেশের টুর্নামেন্টগুলোতে খুব কম অংশ নেই। ওরা প্রতি মাসেই একটা করে টুর্নামেন্ট খেলে। আমরা চাই বেশি বেশি করে আন্তর্জাতিক ম্যাচ। দেশের বাইরে ট্যুর। এটা করতে পারলে আশাকরি সামনের টুর্নামেন্টগুলোতে দেশকে আমরা পদক এনে দিতে পারব। এই টুর্নামেন্ট সামনে ভাল করতে আমাদের বাড়তি উৎসাহ যোগাবে। সামনের গেমে আমাদের স্বর্ণ জেতাই লক্ষ্য।’ আরেক আরচার সুস্মিতা বণিকের অভিমত, ‘চাইনিজ তাইপে খুবই ভাল দল। কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের হারিয়ে আমরা সেমিফাইনালে উঠি। কিন্তু সেমিতে ইরানের কাছে হেরেছি। টেম্পারামেন্ট লসের কারণে ইরানের সঙ্গে পেরে উঠিনি।’ পুরুষ বিভাগের কম্পাউন্ড নিয়ে বাংলাদেশের কোন প্রত্যাশাই ছিল না। অথচ সেখানে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত উঠে চমক দেখান আবুল কাশেম মামুন। কোয়ার্টার ফাইনালে তিনি হেরে যান ভারতের অভিষেক ভার্মার কাছে, ১৪৮-১৮১ পয়েন্টে। পুরুষদের রিকার্ভ বিভাগে বাংলাদেশের আশার প্রতীক ধরা হয়েছিল যাকে সেই রোমান সানা চতুর্থ রাউন্ডে চাইনিজ তাইপের লি ইয়ান ইউর কাছে হেরে বিদায় নেন। এবার আসা যাক আয়োজন নিয়ে। একেবারেই অনাড়ম্বর আয়োজনে শুরু হয় এশিয়ান আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপ। উদ্বোধনীপর্বে জাঁকজমকের বালাই ছিল না। একই অবস্থা পরিলক্ষিত হয়েছে সমাপনীতেও। এত বড় আয়োজন অথচ বিস্ময়করভাবে আয়োজকদের উদাসীনতা ছিল দৃষ্টিকটু। বিভিন্ন দেশ থেকে আরচাররা এই আসরে খেলতে এসেছে। অথচ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল শিথিল, ঢিলেঢালা! ভেন্যু বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে যে কেউই প্রবেশ করতে পেরেছেন বিনা বাধায়। গত মাসের ২৬ তারিখে এই আসরের লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠানে আনা হয়েছিল যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জাহিদ আহসান রাসেলকে। অথচ আসরের উদ্বোধন করতে ওই পর্যায়ের কাউকেই হাজির করতে পারেনি আরচারি ফেডারেশন! শেষে বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজাকে দিয়েই উদ্বোধন করানো হয়। প্রথমদিনে আরচারদের অনুশীলন শেষে পল্টনে অবস্থিত শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। সেখানেও বহিরাগতদের ঢুকতে বাধা দেয়া হয়নি। এছাড়া রাস্তায় তীব্র যানজটের কারণে আরচারদের আসা-যাওয়ায় পোহাতে হয় নানা বিড়ম্বনা। অথচ এতকিছুর পরও আরচারি ফেডারেশন দাবি করে আসরটি তারা নাকি সফলভাবেই সম্পন্ন করেছেন! বিশ্ব আরচ্যারি এশিয়ার উদ্যোগে আয়োজিত হয় এশিয়ান আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপ। ১৯৮০ সালে টুর্নামেন্টের যাত্রা শুরু। এবারের আয়োজক ছিল বাংলাদেশ। রিকার্ভ এবং কম্পাউন্ড দুই ইভেন্টে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। অনুশীলনের জন্য রাখা হয় মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়াম। টুর্নামেন্ট সামনে রেখে গত ৯ মাস ধরে টঙ্গী নিজস্ব আরচারি গ্রাউন্ডে অনুশীলন করে বাংলাদেশের তীরন্দাজরা। টুর্নামেন্ট সামনে রেখে ১৮ সদস্যের বাংলাদেশ দল ঘোষণা করা হয়।
×