ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীদের অস্ত্র ও বিস্ফোরক আনার প্রধান করিডর চাঁপাই সীমান্ত!

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ২ ডিসেম্বর ২০১৭

জঙ্গীদের অস্ত্র ও বিস্ফোরক আনার প্রধান করিডর চাঁপাই সীমান্ত!

শংকর কুমার দে ॥ চাঁপাইয়ের সীমান্ত এলাকাকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যাতায়াতের করিডর হিসেবে ব্যবহার করছে জঙ্গীগোষ্ঠী। চাঁপাই ও রাজশাহী সীমান্তবর্তী পদ্মার চরকে ওরা সশস্ত্র ট্রেনিং সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাই পথে জঙ্গীরা ভারত থেকে অস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য আনছে। গত এক বছরে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১০৩ আগ্নেয়াস্ত্র, ৬৭৮ রাউন্ড গুলি, ১৬১ ম্যাগজিন ও ৬ কেজি গানপাউডার উদ্ধার করেছে। এসব ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে অর্ধশতাধিক। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত সম্পর্কে এই ধরনের তথ্য উঠে এসেছে র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পদ্মার দুর্গম মধ্যচরে মঙ্গলবার র‌্যাবের জঙ্গীবিরোধী অভিযানের সময়ে আত্মঘাতী হয়ে নিহত হওয়া তিন জঙ্গী চরাঞ্চলকে জঙ্গীদের ট্রেনিং সেন্টার, পশ্চিমবঙ্গ থেকে আনা অস্ত্র ও বিস্ফোরক জমানোর আস্তানা গড়েছিল। তারা চাঁপাই সীমান্তকে বাংলাদেশ ও ভারতে যাতায়াতের করিডর হিসেবে ব্যবহার করেছিল। র‌্যাবের তদন্তে উঠে এসেছে, তিন জঙ্গী আত্মঘাতী হয়ে নিহত হলেও ওই এলাকায় আরও জঙ্গীর যাতায়াত ছিল। তবে তারা র‌্যাবের অভিযানের আগেই অন্যত্র চলে যায়। আলাতুলি ইউনিয়নের মধ্যচরের জঙ্গী ঘাঁটি থেকে যে দুই পিস্তল, সাত আইডি (হাতে তৈরি গ্রেনেড) এবং বেশ কিছু পাওয়ার জেল, বিস্ফোরকদ্রব্য ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে, তা ভারত থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। জঙ্গী সংগঠনের জন্য চাঁপাইন সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য চালান আনতেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের আতাতুলি ইউনিয়নের মধ্যচরের ঘাঁটি তৈরি করেছিল নিহত তিন জঙ্গী। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে প্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে অস্ত্র ব্যবসায়ী ও জঙ্গীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে দেশে ঢুকছে আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও বিস্ফোরকের চালান। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ওপারে ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা এলাকাগুলোতে গড়ে উঠা ছোট ছোট কারখানায় তৈরি হচ্ছে এসব মারণাস্ত্র। বাংলাদেশে পাচার হয়ে আসার পর অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র পৌঁছে যাচ্ছে জঙ্গীগোষ্ঠী আর সন্ত্রাসীদের হাতে। আর এসব আগ্নেয়াস্ত্রের জোরে ক্রমেই আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে সন্ত্রাসী ও জঙ্গীগোষ্ঠী। গত মঙ্গলবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আলাতুলি ইউনিয়নের মধ্যচর এলাকায় র‌্যাবের জঙ্গী বিরোধী অভিযানের সময়ে আত্মঘাতী হয়ে নিহত হওয়া তিন জঙ্গীও অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য মজুদ করার জন্য জঙ্গী ঘাঁটি গড়েছিল পদ্মার দুর্গম চরাঞ্চলে। গোয়েন্দা সূত্র মতে, গত ১৭ নবেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কিরণগঞ্জ সীমান্ত এলাকা থেকে তিন বিদেশী পিস্তল, পাঁচ ম্যাগজিন ও ১৩ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিজিবি। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুল এহসানের নেতৃত্বে গত ১৭ নবেম্বর রাত আটটার দিকে কিরণগঞ্জ সীমান্তের বিনোদপুর ইউনিয়নের কালীগঞ্জ মাঠ এলাকায় অভিযান চালায় বিজিবি। এ সময় এক ব্যক্তিকে ব্যাগসহ ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেখে তাকে থামার সঙ্কেত দিলে তিনি ব্যাগ ফেলে পুনরায় ভারতের অভ্যন্তরে পালিয়ে যান।
×