ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

হাসিনা হত্যাচেষ্টায় মুফতি হান্নানের জবানবন্দীর প্রতি ১২ সাক্ষীর স্বীকারোক্তি

কাদের আশ্বাসে, কোত্থেকে কারা, কিভাবে গ্রেনেড এনেছিল?

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২১ নভেম্বর ২০১৭

কাদের আশ্বাসে, কোত্থেকে কারা, কিভাবে গ্রেনেড এনেছিল?

বিকাশ দত্ত ॥ স্পর্শকাতর ও বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা দুটি মামলায় আসামিদের মধ্যে জঙ্গী মুফতি আব্দুল হান্নান স্বীকারোক্তিমূলক যে দুটি জবানবন্দী পেশ করেছিলেন, সেই জবানবন্দী সমর্থন করে রাষ্ট্রপক্ষের ১২ সাক্ষী জবানবন্দীপ্রদান করেছেন। ১২ সাক্ষীর জবানবন্দীতে কারা গ্রেনেড সরবারাহ করেছিল, কোন জায়গা থেকে গ্রেনেড আনা হয়, কারা প্রশাসনিক ও আর্থিক সহযোগিতা করেছিল, কার নির্দেশে ঐ হামলা করা হয়, তাদের কি টার্গেট ছিল তা উঠে এসেছে। সাক্ষীরা বলেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড মামলাসহ সব গ্রেনেড মামলায় মুফতি হান্নান জড়িত ছিলেন। মুফতি হান্নান স্বাীকার করেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড মামলাসহ সব গ্রেনেড মামলায় তিনি জড়িত। এ সব হামলায় তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন ও পরিচালনা করেছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামালায় আবদুস সালাম পিন্টু, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং তারেক রহমান জড়িত ছিলেন। মুফতি হান্নান জানান, গ্রেনেড হামলার পূর্বে তিনি অন্যান্য শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের নিয়ে তারেক জিয়ার হাওয়া ভবনের অফিসে উপস্থিত হন। তারেক জিয়া তাকে ও নেতাদের আশ্বাস প্রদান করেন যে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করলে তাদের নিরাপত্তা প্রদান করা হবে, হামলার পর তারা নিরাপদে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে পারবে। আর্জেজ গ্রেনেড হামলায় দেশী-বিদেশী পাঁচটি জঙ্গী সংগঠন সম্পৃক্ত ছিল। সংগঠনগুলো হচ্ছে-হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ, কাশ্মিরী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন হিজবুল মুজাহিদী, তেহরিক জিহাদ-ই ইসলাম, লস্করই তৈয়েবা এবং মিয়ানমার আরাকানের সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)। মুফতি হান্নানের দুটি জবানবন্দীর সমর্থন করে যে ১২ সাক্ষী জবানবন্দী দিয়েছেন তারা হলেন , ডিজিএফআইয়ের সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব) মোঃ সাদিক হাসান রুমি, আবু হেনা মোহাম্মদ ইউসুফ (রমনা বটমূলের তদন্তকারী কর্মকর্তা), লে. কমান্ডার (এক্স) মিজানুর রহমান (নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও সাবেক ডিজিএফআই কর্মকর্তা) মেজর (অব) মোঃ আতিকুর রহমান (সাবেক র‌্যাবের পরিচালক), মোঃ আজিজ সরকার (র‌্যাবের সাবেক ডিজি), নাহিদ লালনা কাকন (মাজেদ ভাটের স্ত্রী ) মোঃ মোসাদ্দেক বিল্লা (আহসান উল্লাহ কাজলের সাবলেট), মোঃ গোলাম রাব্বানী (মুফতি হান্নান যে বাসায় থাকতেন), মেজর (অব) সৈয়দ মনিুরুল ইসলাম (ডিজিএফ আইয়ের সাবেক কর্মকর্তা) মোঃ তারেক আযম (আহসান উল্লাহ কাজলের ভাড়াটিয়া), মোঃ সাদেরক হোসেন, মোঃ মকবুল হোসেন (সাদেকের ভাই)। রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে। মামলায় চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছেন। তিনি মুফতি হান্নান ও এই ১২ সাক্ষীর সমর্থনে যে জবানবন্দী প্রদান করেছেন তা আদালতে তুলে ধরেছেন। চীফ প্রসিকিউটরকে যুক্তিতর্কে সহায়তায় রয়েছেন এ্যাডভোকেট আকরাম উদ্দিন শ্যামল, এ্যাডভোকেট ফারহানা রেজা। আসামিদের মধ্যে জঙ্গী মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সী দুটি জবানবন্দী পেশ করেন (অন্য মামলায় তার মৃত্যুদ- কার্যকর হয়েছে)। রাষ্ট্রপক্ষের যে ১২ সাক্ষী মুফতি হান্নানের জবানবন্দীকে সমর্থন করেছেন তাদের জবানবন্দী সংক্ষিপ্ত আকারে দেয়া হলো। আবু হেনা মোহাম্মদ ইউসুফ ॥ আবু হেনা মোহাম্মদ ইউসুফ (পিডাব্লিউ-৬২) জবানবন্দীতে বলেন, ২০০৫ ইং সালের অক্টোবর মাসে মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সী র‌্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারের পর বিভিন্ন মামলায় পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে তৎকালীন বিশেষ পুলিশ সুপার ঢাকা জনাব রুহুল আমিন ২১ আগস্ট ২০০৪-এর তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান এবং আমি বিভিন্ন সময় মুফতি আঃ হান্নান রিমান্ডে থাকাবস্থায় জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদকালে মুফতি আঃ হান্নান মুন্সী জানান যে, তিনি হরকত-উল জিহাদের একজন নেতা। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোটালীপাড়া সভাস্থল এবং হেলি প্যাডের নিকটে বোমা পেতে রাখে ২০০০ইং সনে (আপত্তি)। মুফতি আঃ হান্নান আরও জানান, সিলেট হযরত শাহজালাল (র)-এর মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাই কমিশনার জনাব আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা করে, সিলেটের মেয়র জনাব বদর উদ্দিন কামরানের সমাবেশে তার ওপর গ্রেনেড হামলা করে। সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করে। এছাড়াও মুফতি আঃ হান্নান জানান যে, তৎকালীন উপ-মন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর বাসায় মুফতি হান্নান, মাওলানা তাইজউদ্দিন, মাওলানা আব্দুস সালাম ও জান্দাল এবং আরও নেতাকর্মী ২০০৪ ইং সনের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাস্থল ২৩ নম্বর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ-এ গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা করেন। মুফতি হান্নান অরও জানান যে, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পূর্বে তিনি অন্যান্য শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের নিয়ে জনাব তারেক জিয়ার হাওয়া ভবনের অফিসে উপস্থিত হন। তারেক জিয়া তাকে ও নেতাদের আশ্বাস প্রদান করেন যে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করলে তাদের নিরাপত্তা প্রদান করা হবে, হামলার পর তারা নিরাপদে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে পারবে। এই আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে মাওলানা তাইজউদ্দিন থেকে আসামি মুফতি হান্নান গ্রেনেড সংগ্রহ করে উল্লেখিত হামলার জন্য নেতা কর্মীদের কাছে গ্রেনেড সরবরাহ করে। পূর্বের হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড মুফতি আঃ হান্নান মুন্সী আসামি মাওলানা তাইজউদ্দিনের কাছ থেকে সংগ্রহ করে। আসামি জনাব তারেক জিয়া আসামি মুফতি হান্নানকে আশ্বাস দেয়ার বিষয়টি সম্পর্কে তৎকলীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জনাব লুৎফুজ্জামান বাবরকে নির্দেশ দিয়েছিল বলে জানায়। মেজর জেনারেল (অব) রুমী ॥ মেজর জেনারেল (অব) সাদিক হাসান রুমী (পি ডাব্লিউ -৬৫) জবানবন্দীতে বলেন, মওলানা আবদুস সালামের মাধ্যমে তার তথ্যের ভিত্তিতে ডিজিএফআই সিলেট থেকে বিপুল নামের একব্যক্তি, যে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড হামলা মোকদ্দমার অন্যতম আসামি, তাকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড হামলাসহ, সব গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত এবং অন্যান্য হুজী নেতারাও জড়িত এবং মুফতি আবদুল হান্নান তাকে গ্রেনেড সরবরাহ করেছে। মুফতি হান্নানকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে মুফতি হান্নান বিপুলের দেয়া তথ্য হুবহু স্বীকার করেন। মুফতি হান্নান অরও স্বীকার করেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড মামলাসহ সব গ্রেনেড মামলায় তিনি জড়িত। এবং তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন ও পরিচালনা করেছেন। গ্রেনেডগুলো মুফতি হান্নান মাওলানা তাইজউদ্দিনের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন। মুফতি হান্নান অরও জানান, তাইজউদ্দিন তৎকালীন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ছোট ভাই। টিএফআই সেলে মুফতি হান্নান অরও স্বীকার করেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামালায় আবদুস সালাম পিন্টু, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং তারেক রহমান জড়িত ছিলেন । (আপত্তি)। টিএফআই. সেলে মুফতি হান্নান অরও বলেন, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর সরকারী বাসভবনে আবদুস সালাম পিন্টু, লুৎফুজ্জামান বাবর, মওলানা তাইজউদ্দিন, মওলানা আবু তাহের এবং অন্যান্য হুজী নেতাগণ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রস্তুতিমূলক মিটিং করেন। সেখানে আবদুস সালাম পিন্টু ও লুৎফুজ্জামান বাবর প্রশাসনিক সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন। লে. কমান্ডার মিজানুর রহমান ॥ লে. কমান্ডার মিজানুর রহমান (পিডাব্লিউ ৬৮) জবানবন্দীতে বলেন, মুফতি হান্নানের জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারি আগস্ট ১৮ বা ১৯, ২০০৪ ইং সনে মওলানা আবু তাহের, মুফতি হান্নানকে মোহাম্মদপুরে যেতে বলেন। মুফতি হান্নান জিজ্ঞাসাবাদে অরও বলেন সে মতে সে নিজে ও তার একজন সহযোগীসহ মোহাম্মদপুর যান। মওলানা আবু তাহের, তৎসহযোগী ও মুফতি হান্নান তৎকালীন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর বাড়িতে যান। মুফতি হান্নানের ভাষ্য মতে তারা গিয়ে দেখেন আবদুস সালাম পিন্টুর বাসায় তার ভাই মওলানা তাইজউদ্দিন পূর্ব থেকেই অবস্থান করছিলেন। সেখানে তার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে আলাপ আলোচনা করেন মর্মে আসামি মুফতি হান্নান জিজ্ঞাসাবাদে জানান। মুফতি হান্নানের ভাষ্য মতে জানতে পারি মাওলানা মনির, অরও একজন সহযোগীর মাধ্যমে মুফতি হান্নানের কাছে টাকা ও গ্রেনেড সরবরাহ করা হয়। মুফতি হান্নান অরও জানায়, টাকা ও গ্রেনেড পেয়ে ২০০৪ ইং সনের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে তারা গ্রেনেড হামলা পরিচালনা করে। মেজর (অব) মোঃ আতিকুর রহমান ॥ মেজর (অব) মোঃ আতিকুর রহমান (পিডাব্লিউ-৭২) জবানবন্দীতে বলেন, ১৭/৮/০৫ ইং তারিখে দেশব্যাপী বোমা হামলার রহস্য উন্মোচনের সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া বোমা স্থাপনের মূল নায়ক মুফতি হান্নানের নাম জানতে পারি। মুফতি হান্নানের নাম জানার পর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মুফতি হান্নানকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা কার্যক্রম ও অভিযান পরিচালনা করি। বিগত ১/১০/০৫ ইং তারিখে আমার নেতৃত্বে র‌্যাব গোয়েন্দা শাখার একটি দল টঙ্গী স্টেশন রোডের একটি বাসা থেকে মহিবুল্লাহ ওরফে অভিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। অভিকে সঙ্গে নিয়ে একই দিনে সকাল ৬:৩০ মিনিটে আনন্দ নগর মেরুল বাড্ডা ঢাকা থেকে মুফতি হান্নানকে গ্রেফতার করি। জানতে পারি অভি ও মুফতি হান্নান আপন দুই ভ্রাতা। গোয়েন্দা শাখার পরিচালক প্রয়াত কর্নেল গুলজারের কাছ থেকে জানতে পারি যে, মুফতি হান্নান ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সংক্রান্তে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছে। সে তথ্যের মধ্যে মুফতি হান্নান উল্লেখ করেছে যে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পূর্বে মফতি হান্নান, জনৈক মাওলানা তাইজউদ্দিন, আহসান উল্লাহ কাজল, হাফেজ আবু তাহের, আবু জান্দাল ওরফে মুফতি মঈন গণ, তাইজউদ্দিনের আপন ভাই তৎকালীন উপমন্ত্রী জনাব আব্দুস সালাম পিন্টুর সরকারী বাস ভবনে মিটিং করেছে। কর্নেল গুলজারের কাছে অরও জানতে পারি যে, মুফতি হান্নান অরও বলেছে, উক্ত মিটিংয়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সংক্রান্তে সব সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদকালে মুফতি হান্নান জানায় যে, মাওলানা তাইজউদ্দিন কাশ্মীরভিত্তিক একটি জঙ্গী সংগঠন হরকত-উল মুজাহিদীননের নেতা ও বাংলাদেশের সমন্বয়কারী। তাইজউদ্দিন পাকিস্তান থেকে আরজেস গ্রেনেড নিয়ে এসে ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে কাশ্মীরে মুজাহিদগণ প্রেরণ করত। এই তাইজউদ্দিনই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় ব্যবহৃত সব গ্রেনেড সরবরাহকারী বলে মুফতি হান্নান জানান। নাহিদ লায়লা কাকন ॥ নাহিদ লায়লা কাকন (পিডাব্লি¬¬¬উ-৭৩) জবানবন্দীতে বলেন, সুমন, সুমনের আম্মা, মাওলানা ইদ্রিস যিনি সুমনের দুলাভাই, সুমনের বাড়ির ভাড়াটিয়া মাওলানা তাইজউদ্দিন এরা সবাই জনৈক মাজেদ ভাটের সঙ্গে আমার বিয়ের প্রস্তাব দেন। তারা আমার বাবা-মাকে বলেন, মাজেদ ভাট পাকিস্তানী কিন্তু তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রাপ্ত হয়েছেন। তারা সবাই আমার মায়ের সঙ্গে মাজেদ ভাটের পরিচয় করিয়ে দেন। আমি ও আমার আম্মা সিরাজগঞ্জে চলে যাই। এর কয়েক দিন পর সুমন, সুমনের আম্মা, সুমনের দুলাভাই, মাওলানা তাইজউদ্দিন ও মাজেদ ভাট সবাই আমাদের সিরাজগঞ্জের বাসায় যায় এবং সেদিন সবার উপস্থিতিতে আমার বাবা-মায়ের উপস্থিতিতে ২০০৩ ইং সনের অক্টোবর মাসের ৩ তারিখে ধর্মীয় বিধানানুসারে মাজেদ ভাটের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। কিছুদিন যাবার পর লক্ষ্য করি বাসায় মাওলানা তাইজউদ্দিন, সাতক্ষীরার গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জিএম, মুফতি হান্নান, সুমনের দুলাভাই মাওলানা ইদ্রিস, মাওলানা মুনির আমাদের বাসায় আসা যাওয়া করছে। আমি আমার স্বামী মাজেদ ভাটকে জিজ্ঞেস করি তারা কেন আমাদের বাসায় আসে আর কিইবা আলাপ আলোচনা করে। মাজেদ ভাট আমায় বলে মূলত আমি পাকিস্তানী লোক নই, আমাকে মিথ্যা বলা হয়েছিল, আমি মূলত ভারতের কাশ্মীরের লোক। (আপত্তি)। ভারতের কাশ্মীরে হিজবুল মুজাহিদী সংগঠনের নেতা সে বলে আমাকে জানায়। সে আরও বলে মুফতি হান্নান, মাওলানা ইদ্রিস, মাওলানা তাইজউদ্দিন, মাওলানা মুনির উক্ত হিজবুল মুজাহিদীর লোক। মাওলানা তাইজউদ্দিনসহ সবাই সংগঠনের কাজে আমার স্বামী মাজেদ ভাটকে সহায়তা করে বলে মাজেদ ভাট আমাকে জানায়। আমি দেখেছি পাকিস্তান থেকে কিছু লোক এসে মাজেদ ভাটের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত করত। এ ঘটনার কিছুদিন পর দেখি মাজেদ ভাট এবং মাওলানা তাইজউদ্দিন এবং তাদের সঙ্গে আরও দুইজন পাকিস্তানী দুটি কার্টনে কিছু ওজনদার বা ভারি জিনিস আমার বাসায় নিয়ে এসে রাখে এবং তারা চলে যায়। মাজেদ ভাট থাকে। আমি মাজেদ ভাটকে জিজ্ঞেস করি কার্টনগুলো কিসের। মাজেদ ভাট বলে কার্টনের ভেতর গ্রেনেড ও গুলি রয়েছে। সে অরও বলে গ্রেনেড ও গুলি তাদের সংগঠনের কাজের জন্য আনা হয়েছে । কয়েকদিন পর মাওলানা তাইজউদ্দিন, মাওলানা ইদ্রিস, মুফতি হান্নান ও মাওলানা মুনির এরা আমার বাড়িতে আসে এবং উল্লেখিত কার্টনগুলো সঙ্গে নিয়ে চলে যায়। এভাবে তারা বেশ কয়েকবার আমার বাসায় গ্রেনেড ও গুলি আনানেয়া করে। তারা প্রায়ই আমাদের বাসায় এসে আলাপ আলোচনা করত। কয়েকদিন পর তারা আমাদের বাসায় অনেকক্ষণ আলাপ আলোচনা করে ও টেলিফোনে বিভিন্ন জায়গায় কথাবার্তা বলে। তাদের আলাপ আলোচনায় এইটুকু বুঝতে পারি যে, তারা আওয়ামী লীগের ওপর ভীষণ ক্ষুব্ধ। তারা যে কোন মূল্যে আওয়ামী লীগের অনেক বড় কোন ক্ষতি করতে চায়। তারা আমার বাসা থেকে চলে যাবার পর আমি মাজেদ ভাটকে বলি তোমরা আওয়ামী লীগের ওপর এত ক্ষ্যাপা কেন । মাজেদ ভাট আমায় বলে এটি রাজনৈতিক বিষয় এগুলো নিয়ে তোমার চিন্তার কিছু নেই। আমাকে মাজেদ ভাট বলে এই বিষয় নিয়ে বাইরে আলোচনারও প্রয়োজন নাই। আমি মাজেদ ভাটকে অরও বলি এদের সঙ্গে থেকে আওয়ামী লীগের কিছু হলে তোমার কোন ক্ষতি হবে নাতো। মাজেদ ভাট আমায় বলে মাওলানা তাইজউদ্দিনের ভাই সরকারের মন্ত্রী, আমাদের কিছু হবে না। মোসাদ্দেক বিল্লাহ ॥ মোঃ মোসাদ্দেক বিল্লাহ (পিডাব্লিউ-৭৪) জবানবন্দীতে বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি ২০০৪ ইং সালে ঢাকা থেকে বরমী, শ্রীপুর, গাজীপুর যাবার পথে বাসের মধ্যে মাওলানা লিটন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয়। কথাবার্তার এক পর্যায়ে তিনি বলেন আমার বাড়ি নরসিংদীর শিবপুর এবং আমি মুফতি কামাল সাহেবের ছোট ভাই। আমি জিজ্ঞাসা করি তিনি মুফতি কামালকে চেনেন কিনা। তখন তিনি বলেন মুফতি কামাল সাহেবকে চিনব না, তিনি আফগানিস্তানে যুদ্ধ করেছিলেন। উক্ত ব্যক্তি বাস থেকে নামার সময় একটি ঠিকানা দেয় ও বলেন আমাকে যাবার জন্য। আমি ১০/১২ দিন পর ঐ ঠিকানা অনুযায়ী পূর্ব মেরুল বাড্ডা ঢাকাতে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল গোলাম রাব্বানীর বাসায় যাই। সেখানে যাবার পর মাওলানা লিটন সাহেব কয়েকজন লোকের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দেয়। তারা হচ্ছেন আহসান উল্লাহ কাজল, মুফতি হান্নান, আবু জান্দাল, মুসতাকিন মুরসালিন, সবুজ ও অরও অনেকে সবার নাম স্মরণ নাই। ২০০৪ ইং সালের ২১ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে দোকান বন্ধ করে পশ্চিম মেরুল বাড্ডায় যাই। ম-৯৪ পশ্চিম মেরুল বাড্ডা বাসায় ১০/১৫ ব্যক্তিকে দেখি। উপস্থিতদের মধ্যে মাওলানা লিটন, আহসান উল্লাহ কাজল, মুসতাকিন মুরসালিন, আবু জান্দাল ও মুফতি হান্নানগণকে দেখি। যাবার পর দেখি এরা কালো ব্যাগ থেকে গোল গোল কি যেন বের করছে। আমি উপস্থিত একজনকে জিজ্ঞেস করি সেগুলো কি জিনিস। সে বলল সেগুলো শেখ হাসিনার নাস্তা। সন্ধ্যার সময় লোকমুখে ও সংবাদে শুনতে পেলাম বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বোমা হামলা হয়েছে । তখন আমি বুঝতে পারি ‘শেখ হাসিনার নাস্তা’ কথাটির অর্থ। গোলাম রাব্বানী ॥ মোঃ গোলাম রাব্বানী (পিডাব্লিউ-৭৬) জবানবন্দীতে বলেন, ২০০৩ ইং সালের অক্টোবর মাসে আহসান উল্লাহ কাজল নামে জনৈক ব্যক্তি নিজেকে লেখক ও সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আমার উল্লেখিত বাড়ির দ্বিতীয় তলায় উত্তর দিকে ৩ কক্ষ বিশিষ্ট ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন। ভাড়া নেয়ার পর ২০০৪ সনের জুন মাসের মাঝামাঝি সে আমাকে বলে যে ভাড়া দেয়া তার পক্ষে অসুবিধা হয়ে পড়েছে আর্থিক সঙ্কটের কারণে। এরপর মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ নামে এক ব্যক্তিকে দুই কক্ষ সাবলেট দেয়ার জন্য প্রস্তাব করে আমাকে ও আমি তা গ্রহণ করি। ২০০৪ ইং সালের জুন মাসের পর থেকে আহসান উল্লাহ কাজলকে আর আমার উল্লেখিত ঠিকানার বাসায় দেখি নাই। খবর নিয়ে জানতে পারি সে পশ্চিম মেরুল বাড্ডায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে চলে গেছে। এরপর থেকে মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ ও আহসান উল্লাহ কাজল ভাড়া থাকাবস্থায় কিছু লোক ইসলামী লেবাজে আমার বাসায় যাতায়াত করতেন। তাদের সঙ্গে দেখা হলে আমার সালাম বিনিময় হতো। আব্দুল আজিজ সরকার ॥ মোঃ আব্দুল আজিজ সরকার (পিডাব্লিউ-৮২) জবানবন্দীতে বলেন, ঐ সময় বিভিন্ন বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে হরকত-উল জিহাদের মুফতি হান্নানকে ১-১০-২০০৫ ইং সনে মেরুল বাড্ডা থেকে গ্রেফতার করা হয়। উল্লেখ্য যে, কোটালীপাড়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় বোমা পুঁতে রেখে তাকে হত্যা করার চেষ্টায় আনীত মামলায় তার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ছিল। মুফতি হান্নানের গ্রেফতারের বিষয়টি তৎকালীন আইজিপি মোঃ আব্দুল কাইয়ুম এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জনাব লুৎফুজ্জামান বাবরকে ব্যক্তিগতভাবে অবহিত করি। জনাব লুৎফুজ্জামান বাবর এই গ্রেফতারের বিষয়ে সন্তষ্ট হন নাই বরং কিছুটা বিরক্ত হন। তিনি এই গ্রেফতারের বিষয়ে কোন মন্তব্য করেন নাই। এরপর মুফতি হান্নানকে টিএফআই সেলে ১৭ আগস্টের বোমা হামলার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি মুফতি হান্নান কোটালীপাড়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা প্রচেষ্টা ও ২০০১ ইং সনে সিলেটে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা ও সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ)-এর মাজারে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড হামলার বিষয় স্বীকার করেন। (আপত্তি)। মুফতি হান্নানকে বিভিন্ন বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে রিমান্ডে এনে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মুফতি হান্নানকে অরও নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায় যে তার সংগঠন হরকত-উল জিহাদ বহুপূর্ব থেকেই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে হত্যার চেষ্টা করে আসছিল। কারণ তাদের মতে শেখ হাসিনা বেঁচে থাকলে এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে ইসলামকে রক্ষা করা যাবে না এবং তাদের সংগঠনের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। তাদের পরিকল্পনা মতে মুফতি হান্নান, মাওলানা তাইজউদ্দিন, মাওলানা তাহের ও অন্যান্যরা নেতারা শেখ হাসিনাকে হত্যা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। মুফতি হান্নান অরও স্বীকার করে যে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পূর্বে সে মাওলানা তাইজউদ্দিন ও অন্যান্যদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি মিটিং করে। সে অরও জানায় যে, মাওলানা তাইজউদ্দিন তৎকালীন সরকারের উপমন্ত্রী জনাব আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই, তাই সে এই হামলার বিষয় সরকারের সব প্রশাসনিক সহায়তা পাবে। মাওলানা তাইজউদ্দিনের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে মুফতি হান্নান মাওলানা তাইজউদ্দিনের ভাই আব্দুস সালাম পিন্টুর সঙ্গে তার সরকারী বাসভবনে একটি বৈঠক করে। এই বৈঠক চলাকালীন সময়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতি মন্ত্রী জনাব লুৎফুজ্জামান বাবর জনাব আব্দুস সালাম পিন্টুর বাসভবনে উপস্থিত হন ও আব্দুস সালাম পিন্টুর সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে এই হামলার বিষয়ে আব্দুস সালাম পিন্টুসহ বিস্তারিত আলাপ হয় । বৈঠকে জনাব পিন্টু আশ্বাস দিয়ে বলেন যে, মাওলানা তাইজউদ্দিন নিজেই গ্রেনেড সরবরাহ করবে এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে। সরকারের তরফ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এই সিদ্বান্ত মোতাবেক আব্দুস সালাম পিন্টু ও মাওলানা আবু তাহেরের উপস্থিতিতে জনাব আব্দুস সালাম পিন্টুর বাসভবনে মাওলানা তাইজউদ্দিন গ্রেনেডসমূহ সরবরাহ করে এবং আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করে। গ্রেনেডগুলো ২১ আগস্টের ঘটনায় ব্যবহৃত হয়। মেজর (অব) সৈয়দ মনিরুল ইসলাম ॥ মেজর ( অব) সৈয়দ মনিরুল ইসলাম (পিডাব্লিউ-৮৪)-এর জবানবন্দীতে বলেন, ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট অফিসাররা বিপুলকে জিজ্ঞাসাদ করে যে সব তথ্য পায় তা আমি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অফিসারের নিকট হতে শুনতে পাই। বিভিন্ন অফিসারের তথ্য মতে জানা যায় যে, আসামি বিপুল হুজির এক সক্রীয় সদস্য। তিনি সিলেট ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড হামলা পরিচালনাসহ সিলেটের অন্যান্য গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত। এইসব গ্রেনেড হামলা বিপুল নিজেই পরিচালনা করেছেন। এছাড়াও অরও জানতে পারি যে, আসামি বিপুল এই সমস্ত গ্রেনেড মুফতি হান্নানের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, মুফতি হান্নান তথা হুজির সদস্যগণ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে পরিচালনা করেন। ২১ আগস্ট ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের জনসভায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে উক্ত হামলা পরিচালিত হয়। ২১ আগস্ট ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডসমূহ মুফতি হান্নানকে সরবারাহ করেছে বলে স্বীকার করে। এছাড়াও আসামি বিপুল সিলেটে যে গ্রেনেড হামলা করেছে সে সম্পর্কেও তথ্য জানান। তিনি অরও জানান ২১ আগস্ট ২০০৪ সালের বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে যে গ্রেনেড হামলা হয় তা মুফতি হান্নান তথা হুজীর সদস্যগণই পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেন। তারেক আজম ॥ মোঃ তারেক আজম (পিডাব্লিউ-১৬৯) জবানবন্দীতে বলেন, আমি ২০০৩ ইং সালে ফ্ল্যাট নং ৫৩, রোড নং ১২, ডিআইটি প্রজেক্ট, মেরুল বাড্ডার কর্নেল রব্বানী সাহেবের বাসার তিন তলায় দক্ষিণ পার্শ্বের ফ্ল্যাটে আমি ও আমার ফুফাত ভাই আমিনুল ইসলাম ভাড়া নেই। তিন তলার উত্তর পার্শ্বের ফ্ল্যাটে আহসান উল্লাহ কাজল নামে এক ব্যক্তি ভাড়া নেয়। তার বাড়ি ছিল ফরিদপুরে। ২০০৪ ইং সালের মাঝামাঝিতে জনৈক মোসাদ্দেক বিল্লাহ নামে একজন ব্যক্তি উত্তর পার্শ্বের ফ্ল্যাটে একটি মক্তব খুলেন দুটি রুমে। অন্যরুমে আহসান উল্লাহ কাজল বাস করত । মোসাদ্দেক বিল্লাহর বাড়ি নরসিংদী। ২০০৪ ইং সালের শেষের দিকে তারা ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে যান। মোসাদ্দেক বিল্লাহ থাকাবস্থায় আহসান উল্লাহ কাজলের কাছে হুজুর শ্রেণীর অনেক লোক আসা যাওয়া করত। তারা কালো ব্যাগ নিয়ে আসত। পরবর্তীতে পেপার পত্রিকায় জানতে পারি আহসান উল্লাহ কাজল, মোসাদ্দেক বিল্লাহ ও অন্যান্য হুজুর যারা আসা যাওয়া করত তাদের মধ্যে অনেকে ২১ আগস্ট ২০০৪ ইং সালের গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত। আরও জানতে পারি তারা জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত । সাদেক হোসেন ॥ মোঃ সাদেক হোসেন (পিডাব্লিউ-২০৮) জবানবন্দীতে বলেন, ২০০৪ সালে জুন মাসের শেষের দিকে আহসান উল্লাহ কাজল নামে এক ব্যক্তি আমাদের বাসার নিচতলা ভাড়া নেন। বাসাটি দুই রুমবিশিষ্ট ফ্ল্যাট। একটি বাথরুম ও একটি রান্না ঘর রয়েছে। তিনি ৩/৪ মাস আমাদের বাড়িতে ছিলেন। আনুমানিক ২০০৪ ইং সালের অক্টোবর পর্যন্ত ছিলেন। তার কাছে প্রায় সময় বিভিন্ন লোকজন আসতেন। আসা যাওয়ার পথে তাদের সঙ্গে দেখা হতো। বিস্তারিত কোন আলাপ হতো না । যারা আসত তারা ধর্মীয় পোশাকে ও ধর্মীয় রীতিতে চলত। তাদের দেখে কখনও কোন সন্দেহ হতো না। পরবর্তীতে বিভিন্ন পত্রিকা ও মিডিয়াতে জানতে পারি তারা জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। জঙ্গী সংগঠনের নাম হরকত-উল জিহাদ । মকবুল হোসেন ॥ মোঃ মকবুল হোসেন (পিডাব্লিউ-২০৯) জবানবন্দীতে বলেন, ২০০৪ সালে জুন মাসের শেষ দিকে আহসান উল্লাহ কাজল আমাদের বাসার নিচতলায় গ্যারেজ সংলগ্ন দুইকক্ষ বিশিষ্ট রুম, বাথরুম, রান্না ঘরসহ ভাড়া নেয়। তিনি প্রায় ৫ মাস পর্যন্ত ঐ বাসায় অবস্থান করেন। তিনি আমাদের বাসায় অবস্থানকালে তার কাছে অনেক লোক আসতেন। যারা আসতেন তারা সবাই ধর্মীয় লেবাসে থাকতেন। আসা যাওয়ার পথে তাদের সঙ্গে দেখা হতো, শুধু সালাম বিনিময় হতো। পরবর্তীতে জানতে পারি তারা ধর্মীয় কর্মকা-ের আড়ালে ধর্মীয় জঙ্গী সংগঠন হরকত-উল জিহাদের সঙ্গে জড়িত। অরও জানতে পারি তারা ২০০৪ সালের আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
×