ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে সৌদিতে তোলপাড়

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৬ নভেম্বর ২০১৭

দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে সৌদিতে তোলপাড়

নাজিম মাহমুদ ॥ দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পর মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরবে তোলপাড় শুরু হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় সৌদি বাদশাহ সালমানের এক রাজকীয় ডিক্রীতে দুর্নীতি দমন কমিটি গঠন করা হয়। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে গঠিত ওই কমিটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ১১ জন প্রিন্স, চারজন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও কমপক্ষে ২০ জন সাবেক মন্ত্রীকে আটক করে। আটককৃতদের মধ্যে ধনকুবের ও সৌদি রাজপরিবারের প্রভাবশালী সদস্য প্রিন্স আল-ওয়ালিদ বিন তালালও রয়েছেন। একই সঙ্গে সৌদি ন্যাশনাল গার্ড ও নৌপ্রধানের পদেও পরিবর্তন আনা হয়। আটক প্রিন্স তালালের মালিকানায় রয়েছে ইনভেস্টমেন্ট ফার্ম কিংডম হোল্ডিং। পাশাপাশি তিনি মার্কিন টেক জায়ান্ট এ্যাপল ও জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারেরও শেয়ারহোল্ডার। একই সঙ্গে আল-ওয়ালিদ বিন তালালের ইউরো ডিজনি থিম ও মিডিয়া মুঘল রুপার্ট মারডকের নিউজ কর্পোরেশনেও শেয়ার রয়েছে। এছাড়া সৌদি আরবের সাবেক অর্থমন্ত্রী ইব্রাহিম আল-আসাফও গ্রেফতার হয়েছেন। এসব আটকের মধ্য দিয়ে যুবরাজ মোহাম্মদের প্রভাব আরও সুসংহত করা হলো বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। আরও আটক হয়েছেনÑ সৌদি আরবের সাবেক অর্থনীতি নীতিনির্ধারণী বিষয়ক মন্ত্রী আদেল ফেইক, রিয়াদের সাবেক গবর্নর প্রিন্স তুর্কি বিন আব্দুল্লাহ, সৌদি রয়্যাল কোর্টের সাবেক প্রধান খালিদ আল তুয়াজিরি ও বিন লাদেন কনস্ট্রাকশন গ্রুপের চেয়ারম্যান বাকের বিন লাদেন। এদের বেশিরভাগকে রিয়াদের অভিজাত রিজ কার্লটন হোটেলে আটক রাখা হয়েছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আনা হয়েছে সেসব বিষয় এখনও স্পষ্ট করেনি সৌদি কর্তৃপক্ষ। আটকের পর সৌদি আরবের স্টক একচেঞ্জে লেনদেনে ধস নামে। এছাড়া জেদ্দা থেকে কয়েকটি জেটবিমান নিয়ে পালানোর সময় বহু প্রভাবশালী সৌদি নাগরিককে আটক করা হয়। তবে বিমানে ঠিক কারা ছিলেন, প্রাথমিকভাবে তাদের নাম জানা যায়নি। এ ধরপাকড়ের প্রতি সৌদি আরবের ধর্মীয় নেতারা সমর্থন জানিয়েছেন। দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাদের কাউন্সিল রবিবার এক টুইটারবার্তায় বলেছে, দুর্নীতি দমন অভিযান সৌদি আরবের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। আটককৃতদের সঠিক বিচারের মুখোমুখি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেশটির এ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সৌদ আল মোজেব। সৌদি আরবের তথ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে রবিবার জানায়, আটককৃতদের সৌদি আরবের অন্যান্য নাগরিকদের মতো অধিকার দেয়া হবে। তবে তাদের সামাজিক অবস্থানের কারণে বিচারকাজ প্রভাবিত হবে না। খবর বিবিসি ও এএফপির। সৌদি টেলিভিশন আল আরাবিয়ার খবরে বলা হয়েছে, জেদ্দায় ২০০৯ সালের বন্যা ও ২০১২ সালে সৌদি আরবে মার্স ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে দেশটিতে নতুন করে তদন্ত শুরু হয়েছে। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, যুবরাজের নেতৃত্বে গঠিত দুর্নীতি দমন কমিটিকে গ্রেফতারি পরোয়ানার পাশাপাশি ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারিরও ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। ন্যাশনাল গার্ড বিষয়ক মন্ত্রীর পদ থেকে প্রিন্স মিতেব বিন আবদুল্লাহকে সরিয়ে খালেদ বিন আইয়াফকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আদেল আল ফাকিহর বদলে এসেছেন ওই মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-তোইজরি। সৌদি আরবের প্রয়াত বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজের ছেলে মিতেবকে এক সময় সিংহাসনের অন্যতম দাবিদার বলে মনে করা হতো। রাজপরিবারে আবদুল্লাহর বংশধরদের মধ্যে কেবল তিনিই সৌদি সরকারের সর্বোচ্চ স্তরে ছিলেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা যুবরাজ মোহাম্মদের এ রদবদলের ফলে পুরো দেশের সব নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর তার প্রাথমিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হলো। সম্প্রতি রিয়াদে এক অর্থনৈতিক সম্মেলনে তিনি বলেন, সৌদি আরবের আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে তার পরিকল্পনার মূলমন্ত্র হবে ইসলামের কট্টর অবস্থান থেকে উদার নীতিতে ফিরে আসা। চলতি বছরের জুনে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হওয়ার পর থেকেই বিশ্বে সৌদি আরবের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে বিভিন্ন ধরনের সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছেন যুবরাজ মোহাম্মদ।
×