ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিলুপ্তির মুখে ইন্দোনেশিয়ার বার্ডস অব প্যারাডাইস

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২ নভেম্বর ২০১৭

বিলুপ্তির মুখে ইন্দোনেশিয়ার বার্ডস অব প্যারাডাইস

ইন্দোনেশিয়ার গভীর প্রত্যন্ত প্রদেশে বিখ্যাত বার্ডস অব প্যারাডাইসকে এক দৃষ্টি দেখার জন্য অত্যন্ত উৎসুক হয়ে পাখি পর্যবেক্ষকরা অপেক্ষা করেন। পপুয়ার বনাঞ্চলে এক সময় প্রচুর দেখা যেত এ পাখি। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত শিকার ও বন উজাড়ের কারণে এ পাখির সংখ্যা বিপর্যয়করভাবে হ্রাস পেয়েছে। পর্যটকরা সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন গাছের পাতা থেকে পাতায় দ্রুত ছোটাছুটি করছে লাল কিং বার্ড-অব-প্যারাডাইস দেখবেন বলে। তাদের পুরস্কৃত করতে হয় ধৈর্যের জন্য। প্রত্যন্ত গ্রাম মালাগুফুকের কাছে একটি লম্বা গাছের শাখায় বসে বিশ্রাম নেয় পাখিগুলো। পপুয়াতে কৃষি আবাদ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বলা হচ্ছে, এতে অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা অবারিত হবে। কিন্তু কিছুসংখ্যক গ্রামবাসী ও বন সংরক্ষণবাদী সতর্কতা উচ্চারণ করছেন যে, এ কৃষি আবাদের কারণে বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এবং পাখিগুলো এ বৈরী পরিবেশে টিকতে পারছে না। পরিণামে এদের অস্তিত্ব লোপ পাওয়ার উপক্রম হয়েছে। পপুয়ার বার্ড-অব-প্যারাডাইসের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে এর মধ্যেই। এদের শিকার ও হত্যা করা হচ্ছে এবং অলংকরণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ এ প্রজাতির পাখি বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কিন্তু এ পাখি নিয়ে এখনও চলছে অবৈধ বাণিজ্য। কারণ এদের জন্য আন্তর্জাতিক চাহিদা বেশ শীর্ষে। বর্তমানে বন্য পশু-পাখির ওপর যে হুমকি আসছে তা কেবল শিকার থেকে নয়, বৃক্ষ কর্তন থেকেও। বনাঞ্চলকে পাম অয়েল ও কোকা আবাদে পরিণত করা হচ্ছে এবং এটা সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে পাখিদের জন্য বলেছেন, পাখি গাইড চার্লস রোরিং। তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়ায় বৃষ্টিপ্রধান ক্রান্তীয় অঞ্চলের বনে ৪১ প্রজাতির বার্ড-অব-প্যারাডাইসের বাস এবং ৩৭ প্রজাতি দেখা যায়, পপুয়ার জঙ্গলে। পাখিগুলোর রয়েছে হলদে ও সাদা পুচ্ছ। আকর্ষণীয় রঙের এ পাখিগুলো অলংকরণ হিসেবে আটক করে এগুলো নিয়ে ব্যবসা করা হয়। পরিবেশবিষয়ক এনজিও ট্র্যাফিকের অনুষ্ঠান-কর্মকর্তা মেরিন কং বলেছেন, এ পাখিগুলো ইন্দোনেশিয়ার অন্যান্য অংশে ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাচার করা হয়। তিনি এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, আইন প্রয়োগ সংস্থার সামর্থ্য এ ব্যাপারে অত্যন্ত সীমিত। ইন্দোনেশিয়ার ওয়েস্ট পপুয়া প্রবেশে অন্যতম বৃহত্তম শহর সোরংয়ে এক মুভেনির বিক্রেতা এএফপিকে বলেছেন, পাখির পালক দিয়ে তৈরি ঐতিহ্যবাহী মাথায় বাঁধার ফিতা বা হেডব্যান্ড ব্যবসায়ে প্রায় ১৫ লাখ রুপীসহ ১শ’ ১২ ডলার আয় করা যায়। ইন্দোনেশিয়ার অবশিষ্ট বৃষ্টি প্রধান বনাঞ্চলের এক-তৃতীয়াংশ হচ্ছে পপুয়াতে। কিন্তু এ অঞ্চলের বৃক্ষগুলো কর্তন করা হচ্ছে দ্রুত। পরিবেশবাদী ম্যাক্স বাইনুর বলেন,পাম অয়েল কোম্পানিগুলো প্রায় তিন বছর আগে মালাগুফুক গ্রামের কাছে তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। বাইনুর পাখিগুলোর জন্য বনাঞ্চল রক্ষার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, তিনি জানেন, কোম্পানিগুলো বনের পরিবেশ ঐতিহ্যপূর্ণ গ্রাম-জীবন ধ্বংস করে দেবে বলে বাসিন্দারা উদ্বেগে রয়েছেন। তিনি মালাগুফুককে একটি প্রতিবেশপূর্ণ গ্রামে পরিণত করার জন্য সহযোগিতা করছেন। বাসিন্দারা এখন গাইড হিসেবে কাজ করছে বা পর্যটকদের জন্য থাকার ব্যবস্থা গড়ে তুলছে। প্রতিমাসে প্রায় ২০ পর্যটক বার্ড-অব-প্যারাডাইস দেখতে এখানে আসেন। পর্যটকদের কোন প্রত্যন্ত এলাকায় খুঁটির ওপর তৈরি এ বাসস্থানগুলোতে পৌঁছাতে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে দু’ঘণ্টা হেঁটে যেতে হবে অবশ্য।
×