ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

কন্যাশিশুর জন্য

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ২৯ অক্টোবর ২০১৭

কন্যাশিশুর জন্য

প্রতিবছর কন্যাশিশু দিবস পালন করা হয়ে থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে বিরাজমান পরিস্থিতিতে লক্ষ্যযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয় এমনটা বলা যাবে না। এই সত্যটিই উঠে এসেছে বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা রুম টু রিড-এর মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস ২০১৭ উদযাপন অনুষ্ঠানে। সংস্থাটি মেয়েশিশুদের শিক্ষা সহযোগিতা কার্যক্রমের আওতায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। উল্লেখ্য, ২ অক্টোবর বিশ্ব শিশু দিবস পালন করা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘কন্যাশিশুর জাগরণ আনবে দেশের উন্নয়ন’। সঠিকভাবে কন্যাশিশুকে গড়ে তোলার দায়িত্ব অভিভাবকের ওপর। সরকার কন্যাশিশুদের শিক্ষায় অবৈতনিক ও উপবৃত্তি দিচ্ছে। এ টাকা যাচ্ছে তাদের মায়ের মোবাইলে, যাতে মা তার মেয়ের পড়ালেখা ও বেড়ে উঠায় সাহায্য করতে পারেন। মিলিনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলে মেয়েরা প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে এগিয়ে থাকলেও উচ্চশিক্ষায় মেয়েরা এখনও পিছিয়ে। এর কারণ বাল্যবিয়ে। এটা বন্ধের জন্য সরকার কঠোর আইন ও শাস্তির ব্যবস্থা করেছে। প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় কিশোর-কিশোরী ক্লাব করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, রুম টু রিডসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাও এ ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছে। এসব ব্যবস্থা কন্যাশিশুদের উন্নত জীবনের জন্য লক্ষ্যযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হবে বলে আশা করা যায়। ছেলে হোক মেয়ে হোকÑ মানুষ হওয়াটাই আসল কথাÑ অনেকে তা মানলেও কেউ কেউ সেই চিন্তা ধারণ করেন না। তাদের প্রথম প্রত্যাশা ‘সন্তান হতে হবে ছেলে’। কন্যাসন্তান হওয়ার ক্ষেত্রে একজন নারীর কোন ভূমিকা নেইÑ প্রমাণিত এই সত্যটি এখনও কেউ কেউ মানতে চায় না। অনেক ক্ষেত্রেই এ দায় চাপিয়ে দেয় নারীর ওপর। ফলে দেশে বহু নারী কন্যাসন্তান জন্ম দেয়ার অভিযোগে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন ভোগ করে থাকেন। বহু পরিবারেই দেখা যায় মেয়ে শিশুর প্রতি অন্যরকম দৃষ্টিভঙ্গি ও বৈষম্যমূলক আচরণ। ফলে অনেকাংশেই দরিদ্রতার প্রথম শিকার হয় কন্যাশিশুরা। কিছু সামাজিক কথিত নীতির কারণে শিশুকাল থেকেই কন্যাশিশুদের এমনভাবে গড়ে তোলা হয় যাতে করে তাদের অধিকার সচেতন করা যায় না, যা পরবর্তী সময়ে নারীর প্রতি নির্যাতন ও সহিংসতার পথটিকে প্রশস্ত করতে সাহায্য করে। শিক্ষা নারীর ক্ষমতায়নের চাবিকাঠি। শিক্ষা কন্যাশিশুর উন্নয়ন, বাল্যবিয়ে রোধ এবং শিশু মৃত্যুর হার কমানোর নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। সরকারের যুগোপযোগী শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক শিক্ষায় কন্যাশিশুর অগ্রগতি উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পেলেও এখনও তাদের ঝরে পড়ার হার অনেক বেশি। অনেক ক্ষেত্রে নারী শিক্ষার প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, পারিবারিক কাজের দায়ভার, নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি কারণে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ থেকে নারীরা বঞ্চিত হয়। জরিপ মতে, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করা ২৬ শতাংশ নারীর বিয়ে হয়েছে ১৮ বছরের আগে। নিরক্ষর নারীদের বেলায় এই সংখ্যা ৮৬ শতাংশ। সরকার বিগত বছরগুলোতে নারীদের শিক্ষায় অংশগ্রহণে উৎসাহিত করার জন্য নারীবান্ধব কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। যার ফলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলসমূহে ছাত্রী অনুপ্রবেশ এবং লিঙ্গসমতা নিশ্চিতকরণে পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। তাই কৈশোর থেকেই মেয়েশিশুদের ক্ষমতায়ন ও সহিংসতা রোধের প্রতি সব মহলের সচেতনতা জরুরী। ক্ষমতায়নের ধারণা সৃষ্টির মাধ্যমে মেয়েশিশুদের মধ্যে সকল প্রকার বৈষম্য ও সহিংসতা দূর করার শক্তি যোগাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত বিশ্বে পরিণত করতে চাইলে অবশ্যই মেয়েশিশুদের যোগ্য করে তুলতে হবে। কন্যাশিশুদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নিজের সন্তানের মধ্যে ছেলে এবং মেয়ে সন্তান আলাদা করে দেখা চলবে না। কন্যাশিশুর সমঅধিকার এবং নিরাপত্তার বিষয়টি পরিবার থেকেই নিশ্চিত করতে হবে। কারণ মা-বাবাকে দেখেই সন্তানরা শেখে। তাই ঘরে ছেলে-মেয়ের পার্থক্য কখনও তুলে ধরা ঠিক নয়। ছেলে-মেয়ে উভয় সন্তানকেই বড় করে তুলতে হবে মানুষ হিসেবে।
×