ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিভেদ ও জোরজবরদস্তির রাজনীতি পরিহারের আহ্বান

ট্রাম্পের নিন্দায় ওবামা ও বুশ

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২১ অক্টোবর ২০১৭

ট্রাম্পের নিন্দায় ওবামা ও বুশ

যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রচ্ছন্নভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বের সমালোচনা করে সেদেশের সাবেক দুই প্রেসিডেন্ট তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্রেসিডেন্ট দু’জন হলেন জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বারাক ওবামা। খবর বিবিসি। বারাক ওবামা আমেরিকানদের প্রতি ‘বিভেদ ও ভীতি প্রদর্শনের’ রাজনীতি পরিহারের আহ্বান জানান। অপরদিকে সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট বুশ পৃথক এক বার্তায় ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে জনজীবনে তার জোরজবরদস্তি ও পক্ষপাতমূলক আচরণের সমালোচনা করেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি সব সময়ই তার এই দুই পূর্বসূরির সমালোচনায় মুখর থাকেন; এখন পর্যন্ত তাদের এই সমালোচনার কোন জবাব দেননি। উত্তর আমেরিকা বিষয়ক বিবিসির সংবাদদাতা এ্যান্থনি জুরচের বলেছেন, প্রচলিত সংস্কৃতি অনুযায়ী সাবেক প্রেসিডেন্টগণ সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকা- থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখেন। কারণ, হোয়াইট হাউসের সাবেক কর্ণধার হিসেবে সেখানের পরবর্তী উত্তরসূরির সমালোচনা করা কুরুচির বহির্প্রকাশ বলে গণ্য করা হয়। বিবিসির এই সাংবাদিক আরও বলেন, রাজনৈতিক আচার-আচরণের বাধ্যবাধকতা এবং নীতি ও আদর্শের মৌল বাণী যা পাথরে খোদাই করার মতো অলঙ্ঘনীয় ছিল তা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বর্জ্যরে মতো পরিত্যক্ত হয়েছে। নিউজার্সির নেওয়ার্কে ডেমোক্র্যাটদের এক নির্বাচনী প্রচার অভিযানে অংশ নিয়ে ওবামা বলেন, সময় এসেছে বিশ্ববাসীর কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেয়ার যে, আমরা বিভক্তির রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করছি, সেই সঙ্গে ভীতি প্রদর্শনের রাজনীতিকেও। ওবামা বলেন, বিগত শতাব্দী বা তারও আগে আমরা রাজনৈতিক বিভক্তির যে রূপ দেখেছিলাম, আমরা আর পুরনো সেই দিনগুলোতে ফিরে যেতে চাই না। কিন্তু এখন এমন কিছু রাজনৈতিক কর্মকা- চলছে, যা আমরা অনেক আগেই নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। যারা এসব করছে তারা পঞ্চাশ বছর পেছনে ফিরে যেতে চাইছে। মনে রেখ, এটি একবিংশ শতাব্দী, ঊনবিংশ শতাব্দী নয়। এরপর ওবামা ভার্জিনিয়ার রিচমন্ডে আয়োজিত অপর এক অনুষ্ঠানে বলেন, আমাদের মধ্যে কিছু লোক আছে যারা তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সুচিন্তিত ও সুপরিকল্পিতভাবে জনগণকে উত্তেজিত করে তুলছে। এই উগ্র জনগোষ্ঠীর আসুরিক শক্তি কাজে লাগিয়ে তারা ঘোলা পানিতে সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে তাদের অশুভ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চায়। ভার্জিনিয়ায় ওবামার দেয়া বক্তৃতার কয়েক ঘণ্টা আগে নিউইয়র্কে জর্জ ডব্লিউ বুশ বলেন, এখন মনে হচ্ছে গোঁড়ামিজনিত অসহিষ্ণুতা অনেক সাহসী হয়ে উঠেছে। আমাদের রাজনীতি এখন ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ও পুরোদস্তুর মিথ্যা উদ্ভাবনী শক্তির কাছে পরাজিত হতে চলেছে। মার্কিন গণতন্ত্রকে রক্ষা করার লক্ষ্যে যারা বিশেষ করে যে তরুণ সমাজ এগিয়ে আসতে পারত, তাদের মধ্যে ও এর সপক্ষে জোরালো আওয়াজ তোলার কণ্ঠস্বর স্তিমিত হয়ে গেছে। এতে আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, আমাদের ঐক্যবদ্ধ করে রাখার শক্তির চেয়ে আমাদের বিভক্ত করে রাখার চক্রটি অনেক বেশি শক্তিশালী। বুশ বলেন, এখন দেখা যাচ্ছে, মার্কিন জাতিয়তাবাদ তার নাগরিকদের জন্মস্থান নিয়ে জাতিত্ব প্রশ্নে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে। তারা ভুলে গেছে যে, অভিবাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই আজকের আমেরিকা সমৃদ্ধি ও গতিশীলতা পেয়েছে। সাবেক এই দুই মার্কিন প্রেসিডেন্ট এতদিন পর্যন্ত কখনও ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি সম্পর্কে প্রকাশ্যে কোন ধরনের মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছেন। পৃথক পৃথকভাবে দুই প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের কোথাও ট্রাম্পের নাম উচ্চারিত না হলেও, কারও বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে; কে এসব মন্তব্যের লক্ষ্যবস্তু। একসঙ্গে বা একইস্থানে বক্তব্য না দিলেও তাদের কথার মূল সুর ছিল একই এবং এতে উভয়েই যে বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিয়ে শঙ্কায় আছেন তার প্রকাশ ঘটেছে।প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, যার স্বভাবই হচ্ছে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা, এখন পর্যন্ত সাবেক এই দুই পূর্বসূরির কথার কোন জবাব দেননি। গতবছর ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে বারাক ওবামা এবং জর্জ ডব্লিউ বুশ উভয়েরই তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, আমেরিকার ইতিহাসে এই দু’জন সম্ভবত নিকৃষ্টতম প্রেসিডেন্ট।
×