ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পাচার হচ্ছে সারাদেশে

ইয়াবা চালান বন্ধ হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ১০ অক্টোবর ২০১৭

ইয়াবা চালান বন্ধ হচ্ছে না

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ নাফ নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হলে ইয়াবার চালান আসা বন্ধ করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মিয়ানমার থেকে টেকনাফ হয়ে শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গারাই নিয়ে আসছে ইয়াবার চালান এমন তথ্য গ্রেফতারকৃতদের। ফলে শরণার্থী শিবির থেকেই ইয়াবার চালান রাতের আঁধারে পাচার হচ্ছে এমন অভিযোগ রোহিঙ্গা তরুণদের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন সময়ে টেকনাফের নাফ নদী হয়ে রোহিঙ্গারা ইয়াবার চালান নিয়ে আসার সময় ধরা পড়ছে বিজিবি, র‌্যাবসহ পুলিশের হাতে। অভিযান করেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রোহিঙ্গা ঠেকাতে পারছে না। ফলে ইয়াবার চালান আসাও বন্ধ হচ্ছে না। গত প্রায় দেড় মাস ধরে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণেই এবার দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশের তরুণ সমাজের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে ইয়াবা। গত ১৫ দিনে কয়েক দফায় কক্সবাজার, টেকনাফ ও চট্টগ্রামে ইয়াবার চালান পাচারের ঘটনায় ৬ রোহিঙ্গাকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে অভিযানকারীরা। শরণার্থী ক্যাম্পে ইয়াবা মজুদের পর রোহিঙ্গা তরুণরা এসব সারাদেশে পাচারের জন্য চট্টগ্রাম হয়ে রাতের আঁধারে দেশের বিভিন্ন শহরে পাচার শুরু করেছে। অভিযোগ রয়েছে, টেকনাফ থেকে রোহিঙ্গার নামে যেসব শরণার্থী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে এদের সঙ্গে ইয়াবার চালানও আসছে বলে ধারণা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের। কারণ বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অভিযানে প্রায় ৬শ’ কোটি টাকার ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে গত ৯ মাসে। এর মধ্যে গত দেড় মাসে শুরু রোহিঙ্গার নামে মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হিসেবে এদেশে অনুপ্রবেশকারী তরুণরাই ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও পরিবার-পরিজনের সঙ্গে তারা ইয়াবার মজুদও করছে শরণার্থী ক্যাম্পে। প্রশ্ন উঠেছে, যদি এসব রোহিঙ্গা তরুণরা ইয়াবার মজুদ না করে থাকে তাহলে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানের মাসখানেক পর কিভাবে রোহিঙ্গারা টেকনাফ ও চট্টগ্রাম শহরে ধরা পড়ছে ইয়াবার চালানসহ। কোতোয়ালি থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ অক্টোবর ইয়াবাসহ ২ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। গত শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কোতোয়ালি থানা এলাকার স্টেশন রোডসংলগ্ন এলাকায় আবুল কাশেম ও রাজা মিয়াকে সন্দেহ হলে তাদের দেহ তল্লাশি করা হয়। তাদের কাছ থেকে ৩ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত এসব ইয়াবার মূল্য প্রায় আড়াই লাখ টাকা। গত প্রায় এক মাস আগে তারা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। এরপর থেকে তারা টেকনাফের মোছনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিল। বাকলিয়া থানা সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের বিভাগীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে পরিচালিত এক অভিযানে দুই রোহিঙ্গা যুবককে গ্রেফতার করে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। এরা সপ্তাহখানেক আগেই উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পে শরণার্থী হিসেবে অবস্থান নেয়। কিন্তু তারা মিয়ানমার থেকে আসার সময় ইয়াবার চালান নিয়ে আসে। পরে এসব ইয়াবা বিক্রির উদ্দেশ্য চট্টগ্রাম শহরের দিকে যাত্রা শুরু করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ দফতরের গোয়েন্দা টিম নগরীর ফিশারীঘাট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মোহাম্মদ কামাল ও মোহাম্মদ নুর কামাল নামের দুই রোহিঙ্গা তরুণকে আটক করে। তাদের দেহ তল্লাশি করে আড়াই হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এসব ইয়াবার আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টাকা। অভিযানের পর এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী পরিচালক জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মাত্র সাতদিন আগে এই দুই রোহিঙ্গা তরুণ কক্সবাজারের উখিয়াস্থ বালুখালী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিল। মিয়ানমার থেকে আসার সময় তারা ইয়াবা নিয়ে আসে। এর আগে বিজিবির এক অভিযানে প্রায় ৫ লাখ ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ২৪ সেপ্টেম্বর ভোর ৫টার দিকে টেকনাফের নাজিরপাড়াস্থ কেওড়া বাগান থেকে ৬০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। কিন্তু এ সময় কোন ইয়াবা পাচারকারী আটক হয়নি। আরেকটি অভিযানে ২৩ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৩টার দিকে হ্নীলা এলাকার নেচার পার্ক নামক স্থানে অভিযান চালায় বিজিবি। ঐ সময় নাফ নদীর তীরে থাকা একটি ডিঙ্গি নৌকা থেকে প্রায় ৪ লাখ ৩৬ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। এসব ইয়াবার মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা। অভিযানের সময় ঐ নৌকায় ৮ রোহিঙ্গা ছিল। কিন্তু বিজিবি দুই মিয়ানমার নাগরিককে আটক করে। এরা হলো মিয়ানমারের মংডু এলাকার কামাল আহম্মদ ও ইলিয়াস।
×