ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢালাওভাবে বাংলাভাষী মুসলমানদের নোটিস

ভারতীয় বাহিনীতে চাকরি করেও ‘অবৈধ বাংলাদেশী’!

প্রকাশিত: ০৪:০২, ৩ অক্টোবর ২০১৭

ভারতীয় বাহিনীতে চাকরি করেও ‘অবৈধ বাংলাদেশী’!

ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করার পর অসম পুলিশের কাছ থেকে ‘অবৈধ বাংলাদেশী’ হিসেবে নোটিস পেয়েছেন গুয়াহাটি এলাকার মুহাম্মদ আজমল হক। আজমল হক জানান, এত লম্বা সময় ধরে দেশের সেবা করার পর তাকে এভাবে অপমানিত ও অপদস্ত হতে হবে তা তিনি কখনও কল্পনাও করেননি। অসমের মানবাধিকার আইনজীবীরাও বলছেন, রাজ্যে যেরকম ঢালাওভাবে বাংলাভাষী মুসলিমদের কাছে অবৈধ বিদেশী হিসেবে নোটিস পাঠানো হচ্ছে আজমল হকও তার সাম্প্রতিকতম ভিক্টিম। বাংলাদেশী খোঁজার এই হিড়িকে অসমে লাখ লাখ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তোলা হচ্ছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ত্রিশ বছরের কর্মজীবনের শেষে গতবছরই জুনিয়র কমিশনড অফিসার হিসেবে অবসর নিয়েছেন মুহাম্মদ আজমল হক। তার গ্রামের বাড়ি অসমের রাজধানী গুয়াহাটির ছায়াগাঁও এলাকায়। অবসর নেয়ার পর সেখানে কাটাবেন বলে যখন জন্মস্থানে ফিরে যান তখনই পুলিশের কাছ থেকে নোটিস আসে তিনি অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়েছিলেন। খবর বিবিসির। আজমল বলেন, আমি ভারতের নাগরিক। ত্রিশ বছর ধরে দেশের সেবা করেছি। এখন অবসর গ্রহণ করার পর সন্তানদের নিয়ে গুয়াহাটিতে নিজের বাড়িতে থাকি। এখন হঠাৎ আমাকে নোটিস পাঠিয়ে বলা হচ্ছে আমি না কি অবৈধ। আমি না কি ১৯৭১ সালের পর অসমে এসেছি। এই খবর শুনে তো খুবই আশ্চর্য হলাম। আমার মনটা একেবারে ভেঙ্গে গেল। নিজের দেশেই আজ আমি বিদেশী হয়ে গেলাম। তাও আবার ত্রিশ বছর দেশকে সেবা দেয়ার পর? অথচ সেনাবাহিনীতে নিয়োগ পাওয়ার পর এই অসম পুলিশই আমাকে ভারতের নাগরিক হিসেবে ভেরিফাই করেছিল। আর এখন তারাই আবার তার নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। যখন একজন জওয়ান ভারতীয় সেনায় ভর্তি হয় পুলিশ তার প্রপার ভেরিফিকেশন করে। পুলিশ তার গ্রামে গিয়ে মা-বাবার কাগজপত্র খতিয়ে দেখে। বংশপরিচয় খোঁজ নিয়ে রিপোর্ট পাঠায়। তারপরই আমাদের ‘কসম প্যারেড’ হয়। এত কিছুর পরেও আজ যে তাদের সন্দেহ হচ্ছে, এটা আমার জন্য অত্যন্ত দুঃখের, অপমানের ও লজ্জার বিষয়। এটা কিন্তু আমার প্রাপ্য ছিল না। রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম সাহেব আমাকে সেনাবাহিনীতে জেসিও হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। ত্রিশ বছর ধরে দেশের হয়ে বিভিন্ন কঠিন পোস্টিংয়ে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আমি ডিউটি করেছি। তার পরেও অসম সরকার আমাকে এভাবে চরম অপমান করে, আমি শুধু ন্যায্য বিচারই দাবি করব। আসলে আজমল হক হলেন অসমের সেই লাখ লাখ বাঙালী মুসলিমদের একজন, যাদের অবৈধ বিদেশী বলে ঢালাও নোটিস পাঠানো হচ্ছে আর ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে তাদের ভারতীয় প্রমাণ করতে হচ্ছে। এ রকম বহু কেস নিয়ে লড়েছেন রাজ্যের শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার আইনজীবী আমন ওয়াদুদু। তিনি বলেন, কেউ কিন্তু আজমল হকের কাছে কোন কাগজ বা নথিপত্র চায়নি। কোন তদন্ত ছাড়াই বলে দেয় হচ্ছে যে তিনি নাকি ১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশ থেকে অসমে এসেছিলেন। আর এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, অসমে লাখ লাখ লোকের সম্পর্কে কোন তদন্ত না করেই পুলিশ তাদের অবৈধ অভিবাসী বা বাংলাদেশী বলে রিপোর্ট করে দিচ্ছে। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে শতকরা আশি ভাগ কেসই ভারতীয় নাগরিক বলে প্রমাণিত হচ্ছে। তার মানে এটাই যে পুলিশ কোন ঠিকঠাক তদন্ত ছাড়াই এই রিপোর্টগুলো দাখিল করে দিচ্ছে।
×