ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

জনপ্রিয় হচ্ছে গাইঞ্জা ধানের আবাদ

প্রকাশিত: ০৪:২০, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

জনপ্রিয় হচ্ছে গাইঞ্জা ধানের আবাদ

‘হামরা এখন গাইঞ্জে ধানের আবাদ করতিছি। ভাতের কি সোয়াদ। হারে‌্যই গেছিল। ফির রোয়া আরজিচ্চি। (আমরা এখন সুগন্ধি গাইঞ্জে ধানের আবাদ করছি। ভাতের কি স্বাদ। হারিয়েই গিয়েছিল। ফের চারা বুনছি)।’ যমুনার তীর ও চর এলাকার গাইঞ্জা ধান এখন বগুড়ার পূর্বাংশের কৃষকের মধ্যেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। একদার সুগন্ধী গাইঞ্জা ধানের আবাদে তারা কোমর বেঁধে নেমেছে। এই সময়টায় যমুনার চরগুলোতে গাইঞ্জা ধানের চারা হয়েছে। নারী শ্রমিকরা এখন সেই চারা বিক্রির জন্য আঁটি বেঁধে হাটে বাজারে নিয়ে যাচ্ছে। গাইঞ্জা ধানটি পুরনো। এই ধানের চাল কিছুটা চিকন। ধানের মতো চালও সুগন্ধি। এই চালের ভাত খুবই স্বাদের। যে কাউকে শুধু আলু ভর্তা দিয়ে এই চালের ভাত খেতে দিলে স্বাভাবিক খাবারের চেয়ে কিছুটা বেশি পেটে যাবে। আর ওই চালের ভাতের সঙ্গে তরকারি হলে তো কোন কথাই নেই। ভোজনবিলাসীদের পোয়াবারো। আর সাধারণের ভোজন দ্বিগুণ হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রেই এই চালের ভাত পোলাও বিরিয়ানির চেয়ে ভাল। বগুড়ার পূর্বাংশের সারিয়াকান্দি, গাবতলি, সোনাতলা, ধুনট ও শেরপুর উপজেলায় এবার গাইঞ্জা ধানের আবাদের হিড়িক পড়েছে। কৃষক তাদের জমিতে অন্যান্য আবাদের পাশপাশি গাইঞ্জা ধানের আবাদ করছে। এবার কার্তিকের মধ্যভাগে আমন আবাদের মাড়াই কাটাই শুরু হয়ে যাবে। আমন ওঠার পর মধ্যবর্তী সময়টায় কৃষক গাইঞ্জা আবাদ করে নেবে। এরপর তারা নামবে বোরো আবাদে। ষাটের দশকে বগুড়া অঞ্চলে গাইঞ্জে ধানসহ নানা জাতের ধানের আবাদ হতো। এগুলোর মধ্যে ছিল পঙ্খীরাজ, গন্ধরাজ, সাইটাল, দুধকলম, কস্তুরা, কলমি, নাকডুগি, বালাম ভোজন কুমড়া, পঞ্চরতœ ইত্যাদি। নিকট অতীতের এ ধরনের একশ’র বেশি জাতের ধান বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। কিছু ধান দেখতে ছিল পাখির ঠোঁট ও পালকের মতো। এই ধানগুলোর কমন নাম ছিল ‘মিষ্টি ধান’। খই, মুড়ি, চিড়ার জন্য আলাদা জাতের ধান ছিল। যেমন বিন্নি ধানের খই ছিল অতুলনীয়। প্রবীণ কৃষক ও কিষাণি আজও বিন্নি ধানের খইয়ের কথা ভোলেনি। বর্তমানে যে খই বানানো হয় তা বিন্নি ধানের খইয়ের মতো নয়। সারিয়াকান্দির কৃষক আশরাফ আলী বললেন, গাইঞ্জা ধান দিয়ে চিড়া মুড়ি খই বানানোর চেষ্টা করেছিলেন। তাও সুগন্ধির হয়। তবে এই ধানে ভাতই সুস্বাদের হয়। বগুড়ার পূর্বাংশের মানুষের বাড়িতে অতিথি আপ্যায়নে, বিয়ে শাদির অনুষ্ঠানে উৎসব পার্বণে গাইঞ্জা ধানের চাল লাগবেই। গৃহস্থ ও কৃষক এই ধানের চাল বানিয়ে অতিথি আপ্যায়নে ও অনুষ্ঠানের জন্য তুলে রাখেন। মাঝে মধ্যে তারা এই ধানের ভাত খান। বর্তমানে এই ধানের আবাদ আগের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে। এই ধানের আবাদ সবচেয়ে বেশি হয় যমুনার চর এলাকায়। তবে পূর্বাংশের বেলে দোঁআশ মাটিতেও এই ধান ফলছে। বগুড়া নগরীর অনেকে অতিথি আপ্যায়নে পোলাওয়ের সাইল্লা চালের চেয়ে গাইঞ্জা চালে অতিথি আপ্যায়ন করছেন। অতিথিরাও তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন এই চালের ভাত খেয়ে। সমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×