ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মীম নোশিন নাওয়াল খান

অমীমাংসিত পাঁচ রহস্য

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

অমীমাংসিত পাঁচ রহস্য

ফ্রান্সিস লেভির হাতের ছাপ ১৯২০-এর দশকে ফ্রান্সিস লেভি নামক এক ব্যক্তি দমকলকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। তিনি খুব হাসিখুশি এবং পরোপকারী ছিলেন। তার সহকর্মীরাও তাকে খুব পছন্দ করত। কিন্তু একদিন হঠাৎ হাসিখুশি মানুষটা মনমরা হয়ে যান। তিনি সকালে কাজে এলে তার সহকর্মীরা দেখেন, তিনি মনমরা হয়ে একটি কাঁেচর জানালা পরিষ্কার করছেন। তাকে মন খারাপের কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি মনে হয় আজই মারা যাব। তার কথায় পরিবেশ ভারি হয়ে যায়। ঠিক সেই মুহূর্তে একটি ফোন আসে এবং দমকলকর্মীরা সংবাদ পান যে দূরে একটি জায়গায় আগুন লেগেছে। ফ্রান্সিস লেভি তার দল নিয়ে সেখানে যান আগুন নেভাতে। আগুন যখন প্রায় নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে, তখন হঠাৎ ভবনটির নিচতলায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং দেয়ালগুলো ধসে পড়ে। এতে ফ্রান্সিস লেভিসহ কয়েকজন মারা যান। পরেরদিন তার সহকর্মীরা অফিসে গিয়ে দেখেন আগেরদিন লেভি যেই জানালা পরিষ্কার করছিলেন, সেখানে তার হাতের ছাপ। অনেকবার ধোয়া-মোছা করার পরেও জানালা থেকে লেভির হাতের ছাপটি মোছা সম্ভব হয়নি। এমনকি কোন কেমিক্যাল দিয়েও হাতের ছাপটি মোছা যায়নি। কেন এমন হয়েছিল, সেই রহস্য আজও অমীমাংসিত। চীনের বামন গ্রাম বিজ্ঞানীদের গবেষণা বলে, প্রতি ২০ হাজারে একজন মানুষ বামন হয়। কিন্তু চীনের ইয়াংসি গ্রামের চিত্রটা মোটেই তেমন না। এই গ্রামে প্রায় অর্ধেক মানুষ বামন। কিন্তু কেন এখানকার মানুষদের উচ্চতা কম, তার কোন যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা কেউই দিতে পারেনি। গ্রামবাসীদের ধারণা, অনেক আগে এক রোগ গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই রোগের কারণে শিশুরা লম্বা হতো না। আর যেই পূর্ণবয়স্ক মানুষেরা এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের সন্তানরা ৩ ফুটের বেশি লম্বা হতো না। এই রোগটি কেন ছড়িয়েছিল- সে বিষয়ে গ্রামবাসীদের ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। কেউ মনে করেন, এক সময়ে গ্রামের মানুষ একটি কালো কচ্ছপকে রান্না করে খেয়ে ফেলেছিল। তারই অভিশাপে এই রোগ দেখা দেয়। আবার কেউ কেউ মনে করেন, অনেক আগে মৃত ব্যক্তিদের যথাযথভাবে সৎকার না করার কারণে তারা অভিশাপ দিয়েছিলেন। গ্রামবাসী এমন রোগের কথা বললে কী হবে, এর কোনো যথার্থ প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই চীনের বামন গ্রামটি এখনও একটি রহস্য। আগুনমানব জো গিরারডেলি ১৮০০ শতাব্দীর শুরুর দিকে জো গিরারডেলি নামক এক ব্যক্তি অবিশ্বাস্য সব ঘটনা ঘটিয়ে আলোচনায় আসেন। তিনি জ্বলন্ত জিনিস মুখে পুরে খেয়ে ফেলতেন। নাইট্রিক এসিড দিয়ে কুলি করতেন, কিন্তু তার মুখের ভেতরের কোন অংশে কোন ক্ষত হতো না। অথচ তিনি যখন ঐ নাইট্রিক এসিড মুখ থেকে লোহার রডের ওপর ফেলতেন, এসিডের কারণে লোহার রড ক্ষতিগ্রস্ত হতো। এমনকি জো গলিত সীসা, গরম মোম এবং গরম করা ধাতব জিনিস তার চামড়ায় চেপে ধরতেন, কিন্তু এতে তার চামড়ার কোন ক্ষতিই হতো না! জো-এর এই ঘটনাগুলোর পেছনে কোন কৌশল আছে কিনা তা কেউ খুঁজে বের করতে পারেনি। আর তিনি ইংল্যান্ড ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তার কোন সন্ধানও পাওয়া যায়নি। তাই তিনি আজও এক রহস্য। ঘুমের গ্রাম কালাচি হঠাৎই কাজাখিস্তানের কালাচি গ্রামে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে শুরু করল। গ্রামের লোকজন দিনের বেলা হুটহাট করেই ঘুমিয়ে পড়তে শুরু করল। তাদের ঘুম ভাঙে অন্তত দুই ঘণ্টা পর। ক্লান্ত না থাকা সত্ত্বেও অনেকেই দিনের বেলায় কর্মস্থলে ঘুমিয়ে পড়ে। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন শিক্ষার্থীরা স্কুলে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তবে এই অদ্ভুত ঘটনার পেছনে কোন কারণ খুঁজে পায়নি কেউ। যারা এভাবে অকারণে ঘুমিয়ে পড়েন, তারা জানান, তাদের ভয় হয় যে ঘুমের মধ্যেই হয়তো তাদের মৃত্যু ঘটবে। ঘুম থেকে ওঠার পর স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া, হ্যালুসিনেশনসহ বিভিন্ন সমস্যা হয় বলে জানান অনেকেই। বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন, কিন্তু এই ঘটনার কোন কারণ তারা এখনও খুঁজে পাননি। ওই গ্রামে এবং আশপাশের এলাকায় রযা ডিয়েশন পরীক্ষা করা হয়, কিন্তু ফলাফল ছিল স্বাভাবিক। পরবর্তীতে ওই এলাকায় কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসের আধিক্য আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানীরা। তবে তা এই রহস্যের কোন সমাধান করতে পারেনি। হইয়া বাকিউ বনের রহস্য ট্রানসিলভানিয়ার হইয়া বাকিউ বন খুব রহস্যময় একটি জায়গা। এই বনের গাছগুলো বাঁকানো এবং পেঁচানো, অর্থাৎ স্বাভাবিক আকৃতির নয়। ফলে বনে ঢুকলেই মনে হবে চলে এসেছেন কোন হরর মুভির দৃশ্যে। শুধু এটুকুই নয়। এই বন থেকে বেরুনোর পর অনেক পর্যটকের গায়ে পোড়া এবং ফোস্কা দেখা গেছে। অনেক পর্যটক বলেন, বনে ঢোকার পর কয়েক ঘণ্টা ‘নেই’ হয়ে যায়। তারা বলেন, ওই কয়েক ঘণ্টায় কী হয়েছে তা তারা মনে করতে পারেন না। আবার অনেকেই বলেন, এখানে তারা কাটা মুণ্ডু উড়ে বেড়াতে দেখেছেন এবং অশরীরী কণ্ঠ শুনেছেন। এই ঘটনাগুলো কিন্তু প্রথম থেকে ঘটত না। এই বনটা ছিল অন্য দশটা বনের মতোই স্বাভাবিক। কিন্তু ১৯৬৮ সালে আলেক্সান্ড্রু সিফট এই বনের ভেতরে একটি ছবি তোলেন, যেই ছবিতে একটা অদ্ভুত জিনিস দেখা যায়, যেটিকে অনেকেই ইউএফও মনে করেন। সেই ঘটনার পর থেকেই অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটতে শুরু করে এখানে। এসব ঘটনার পেছনে কোনো কারণ এখনও জানা যায়নি। তাই পৃথিবীর মানুষের কাছে এই বনটি এক রহস্য।
×