ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

আইএস এখন চতুর্দিক দিয়ে কোণঠাসা

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আইএস এখন চতুর্দিক দিয়ে কোণঠাসা

প্রথম দিকে ধীরে ধীরে হলেও এখন সহসাই দ্রুত ভূখ- হাতছাড়া হয়ে চলেছে ইসলামিক স্টেট বা আইএসের। স্বঘোষিত খিলাফতের দুই দিকেই এই অবস্থা হচ্ছে। গত ২৭ আগস্ট তারা তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন সর্ববৃহৎ ইরাকী শহর আল আফার থেকে নিঃশব্দে সরে যায়। একই সময় শত শত আইএস যোদ্ধা তাদের পরিবার পরিজন সিরিয়া-লেবানন সীমান্তসংলগ্ন কালামুন পর্বতের গুহা থেকে বেরিয়ে বাসে করে পূর্বদিকে যাত্রা করে। সিরিয়া ও লেবানন বাহিনীর দ্বিমুখী চাপ ৩ রুশ বিমানের বোমাবর্ষণের মুখে তারা সপ্তাহব্যাপী লড়াইয়ে ছেদ টেতে পাততাড়ি গুটায়। চারদিক দিয়ে নিষ্প্রেষিত হয়ে জিহাদীরা এখন ফারাত নদী উপত্যকার একটি ফিবতার মতো জায়গায় চলে এসেছে। ইরাকের মসুল নগরীর জরোটা ও সিরিয়ার বাকা নগরীর অধিকাংশ হাতছাড়া হওয়ায় তাদের এখন শেষ ঘাঁটি সম্ভবত হবে সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলের দেইর এজ-জোর। কিন্তু সেখানেও তাদের অবস্থা হবে নাজুক। কারণ নগরীর পশ্চিম প্রান্তের দুটি ছিটমহল সিরীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। আইএসের পশ্চাদপসরণ এত ত্বরান্বিত হয়েছে যে প্রত্যেকেই এতে বিস্মিত না হয়ে পারছে না। তাল আকার ইরাকের সঙ্গে খিলাফতের রাজধানী রাকার সংযোগকারী গ্যাবিসন হিসেবে কাজ করছিল। জিহাদীদের বেশ কিছু নেতা ছিল এই নগরীর সুন্নি তুর্কমেন। এদের মধ্যে ২জন ছিল স্বঘোষিত খলিফা আবু বকর আল বাগদাদীর দুই ঘনিষ্ঠ সহকর্মী। আইএসের ভয়াল ধর্মীয় পুলিশ হিজবাহর অনেক সদস্যই তাল আকারের বাসিন্দা। এরাই নিকটবর্তী পার্বত্য শহর সিনজার এ ইয়াজিদী সম্প্রদায়ের ওপর গণহত্যা ও যৌনদাসত্ব সঙ্গত কারণেই ইরাকী সেনাবাহিনী তাল আকারের ২ হাজারের মতো আইএস যোদ্ধার কাছ থেকে প্রবল প্রতিশোধ আশা করছিল। সে তুলনায় প্রতিরোধ এসেছে সামান্যই। মসুলে ৯ মাস ধরে রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ হয়েছিল। নগরী ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। তাল আকারের যুদ্ধের পর পর্ববেমাকরা নগরীতে প্রবেশ করে অল্প কিছু লাশ পড়ে থাকতে দেখে। নগরীর কেন্দ্রস্থল বহুলাংশেই ছিল অক্ষত। মসুলে যেখানে বেশ কয়েক হাজার ইরাকী সৈন্য নিহত হয়েছিল সেখানে তাল আকারে তাদের একশরও কম সৈন্য মারা যায়। এর একটা কারণ নগরীর টপোগ্রাফি। দ্বিতীয় কারণ জিহাদীরা পালানোর পথ পেয়েছিল। লোকালয়ে তারা শিয়া মিলিশিয়া হিজবুল্লাহর সঙ্গে একটা বোঝাপড়ায় আসে যাতে তাদেরকে পূর্বদিকে তাদের পাহাড়ী ঘাঁটি থেকে নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়। বিনিময়ে তারা লেবাননী সৈন্যদের লাশ ফেরত দেয়। ওদিকে কুর্দী ও আরব সৈন্যদের মিলিত বাহিনী সিরিয়ান ডোমাক্রেটিক কোর্সেস জুন মাসে সিরিয়ার রাকা নগরীতে অভিযান শুরু করার পর থেকে এ পর্যন্ত নগরীর দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা দখল করে নিয়েছে। পাল্টা আক্রমণ থামাবার মতো কিছু শক্তি আইএসের এখনও আছে। তাল আকারের বাইরে আল-আয়াদিয়া শহরে তারা ঘাঁটি গাড়ার চেষ্টাও করছে। চাইলে তারা সবসময়ই সন্ত্রাসী হামলায় আশ্রয় নিতে পারে। তবে ভৌগোলিক রাষ্ট্র হিসেবে আইএস প্রায় নিঃশেষিত হয়ে গেছে। নিজস্ব প্রশাসন ও সেবামুখী ব্যবস্থার জন্য আইএস একদা গর্ববোধ করত। কিন্তু এখনও সেসব এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে সেগুলোতে এই ব্যবস্থাগুলো বলতে গেলে ধসে পড়েছে। বিদ্যুত ও পানি সরবরাহ বন্ধ। খাদ্যের মওজুদ সামান্য। রাকায় চিকিৎসার যে সামান্য ব্যবস্থা আছে তা শুধু আইএস যোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত- সিভিলিয়ানদের জন্য নয়। এ অবস্থাায় আইএসের আদেশ অগ্রাহ্য করে পরিবারগুলো ঐ এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছে। পালানোর সময় সাবধানে এড়িয়ে চলতে হচ্ছে স্নাইপার ও স্থূলমাইন যা তাদের জিম্মি করার জন্য রাখা হয়েছে। নানা ফ্রন্টে লড়তে গিয়ে আইএসের শক্তি প্রসারিত হয়ে গেছে। সংহত অবস্থায় নেই। নতুন ঘাঁটি দেইর-এজ জোর-এ একটি এলাকায় ধর্মীয় পুলিশের সংখ্যা কমিয়ে ফেলা হয়েছে। তেমনিভাবে রাকা ও এর আশপাশে আত্মঘাতী বোমাবাজি বহুলাংশে কমে গেছে। এই প্রথমবারের মতো আইএস দেইর এজ-জোর এ ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী পুরুষদের বধ্যতামূলকভাবে তাদের বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করছে। আইএসের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলাও ধসে পড়ছে। খাদ্য, চিকিৎসা ও বেতনের ক্ষেত্রে স্থানীয় ও বিদেশী যোদ্ধাদের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য করা হচ্ছে। ধর্মীয় উদ্দীপনা আর আগের মতো জিহাদীদের মধ্যে কাজ করছে না। যোদ্ধা কমায় তাদের দিন ফুরিয়ে এসেছে। শক্তি নিঃশেষিত হতে চলেছে। চলমান ডেস্ক সূত্র: দি ইকোনমিট
×