ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

স্পিনার নাথান লিয়নের বিশ্বরেকর্ড

টপ অর্ডারে ৫ বাঁহাতি নামিয়ে রেকর্ড বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

টপ অর্ডারে ৫ বাঁহাতি নামিয়ে রেকর্ড বাংলাদেশের

স্পোর্টস রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে ॥ অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলের জন্য এ এক রূপকথাই বলা যেতে পারে। নাহলে ৭৯ বছর পর আবার কেন তারা স্পিন দিয়ে বোলিং আক্রমণের শুরু করবে? সাগরিকায় সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ দল ব্যাটিংয়ে নামার পরই সেই বিরল ঘটনা আবার ফিরিয়ে আনলেন অফস্পিনার নাথান লিয়ন। ম্যাচে ৩ জন খাঁটি স্পিনার নিয়ে নেমেছে অসিরাÑ শিক্ষাটা তারা পেয়েছিল মিরপুরে বাংলাদেশী স্পিনারদের কাছে নিগৃহীত হওয়ার পর। ১১ বছর পর আবার তারা ৩ স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজায়, আর বাংলাদেশ দলও ৩ স্পিনার এবং ১ পেসার নিয়ে নামার ইতিহাসে ফিরে গেছে ২০১৬ সালের পর। যেমনটা অনুমিত ছিল তেমনই হয়েছে, সাগরিকার উইকেটে স্পিনাররাই সহিংস হয়েছেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথমদিনে। টানা ৫ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান নামিয়ে বিরল ঘটনার জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ আর প্রথম চারজনকেই এলবিডব্লিই করে অফস্পিনার নাথান লিয়ন ঘটিয়েছেন অসামান্য কীর্তি। সাগরিকার উইকেটে উথাল-পাথাল ঢেউ উঠেছে ঘূর্ণি ছোবলে প্রথমদিনের সকাল থেকেই। ১৯৩৮ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে একপ্রান্তে পেস এবং অপরপ্রান্তে স্পিন আক্রমণ দিয়ে শুরু করেছিল অস্ট্রেলিয়া। সর্বকালের সেরাদের অন্যতম একজন লেগস্পিনার বিল ও’রেইলি পরিচিত ছিলেন ‘টাইগার’ নামে। তিনিই সেই কাজটি করেছিলেন ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে। এবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে সেই ইতিহাসের পুনরুত্থান ঘটান লিয়ন ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই বোলিং শুরু করে। তিনি আরেকটি অসামান্য কীর্তি গড়েন প্রথম চারজন ব্যাটসম্যানকেই এলবিডব্লিউ করে। টেস্ট ক্রিকেটে আগে প্রথম চার ব্যাটসম্যানের এলবিডব্লিউ হওয়ার ঘটনা থাকলেও একই বোলারের বলে এমন ঘটনা এই প্রথম। এর আগে ৬ বার টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ৪ জন এলবিডব্লিউ হয়েছেন। ১৯৯৯ সালে ব্রিজটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়া, ২০০১ সালে বুলাওয়েতে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০০৩ সালে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ইংল্যান্ড, ২০০৪ সালে ক্যান্ডিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কা, ২০০৫ সালে নেপিয়ারে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কা এবং ২০১২ সালে পোর্ট অব স্পেনে ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে অসিরা। কিন্তু সেই চারটি উইকেট ভাগাভাগি হয়েছে একাধিক বোলারের মধ্যে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এককভাবেই সেই ঘটনার জন্ম দিয়েছেন লিয়ন। এক্ষেত্রে ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণ থেকে একটি ধ্রুব সত্য ছিল তার পক্ষে। বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে বরাবরই ডানহাতি অফস্পিনাররা বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ দলও নিজেদের একটি রেকর্ড গড়ে ফেলেছে। ব্যাটিং অর্ডারের প্রথম ৫ জন ব্যাটসম্যানই এদিন ছিল বাঁহাতি। তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক ও সাকিব আল হাসান একের পর এক ব্যাটিংয়ে নেমেছেন। টেস্ট ক্রিকেটের ১৪০ বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনা এর আগে ছিল মাত্র দুটি। ২০০২ সালে সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবে শ্রীলঙ্কা প্রথম ঘটনার জন্ম দিয়েছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। সেই লঙ্কানদের বিরুদ্ধেই ২০১০ সালে পাল্লেকেলে টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে টানা ৫ বাঁহাতি ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন। এবার বাংলাদেশ দল তৃতীয় ঘটনার জন্ম দেয়। আর সে কারণে লিয়ন শুরু থেকেই বোলিংয়ে আসেন। ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম টেস্টেই সর্বশেষবার ৩ স্পিনার নিয়ে খেলেছিল অসিরা। খেলেছিলেন শেন ওয়ার্ন, স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল ও ড্যান কালেন। এবার লিয়নের সঙ্গে স্টিভ ও’কিফে ও এ্যাশটন এ্যাগার। তারা একমাত্র পেসার হিসেবে প্যাট কামিন্সকে নামায়। অপরদিকে বাংলাদেশ দলও ১ পেসার ও ৩ স্পিনার নিয়ে নামে এদিন। ২০১৫ সালের জুনে ফতুল্লায় ভারতের বিরুদ্ধে ও ২০১৬ সালে অক্টোবরে মিরপুর টেস্টে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩ স্পিনার ও ১ পেসার নিয়ে খেলেছিল বাংলাদেশ। এবার সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলাম ও মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে নেমেছে টাইগাররা। তাদের এই ফর্মূলায় উৎসাহিত হয়ে এবার অসিরাও একইভাবে একাদশ সাজিয়েছে আরেকটি কারণে। সেটি মিরপুরে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশী স্পিনারদের দাপটে চারদিনেই লজ্জাস্কর পরাজয়। অস্ট্রেলিয়ার ১৯ উইকেটই নিয়েছিলেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। আর পুরনো দিনগুলোতে সাগরিকায় স্পিনের প্রভাব আরও নির্মম। এর আগে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হওয়া ১৫ টেস্টে স্পিনাররা ২৮৭ আর পেসাররা ১৫৬ উইকেট দখল করেছিল। এসব পরিসংখ্যান ও ম্যাচের আগে উইকেট দেখেই তিন স্পিনার ও এক পেসার নিয়ে একাদশ সাজিয়েছে উভয় দল। আর সেটা ফলপ্রসূ হয়েছে প্রথমদিনেই। স্পিনাররা ইতিহাস ফিরিয়ে আনছেন, রচিত হচ্ছে নতুন কোন রূপকথা।
×