ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মিরপুর টেস্টে জয়ের নায়ক ছিলেন এই বাঁ হাতি ওপেনারও

বোলারদের মঞ্চ তৈরি করেছিলেন তামিম

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বোলারদের মঞ্চ তৈরি করেছিলেন তামিম

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ইতিহাস নতুন করে রচিত হয়েছে। যে দলটি ১৪০ বছর ধরে ক্রিকেট বিশ্বে অন্যতম পরাশক্তি হিসেবে দাপট দেখিয়ে চলেছে, কোন সময়ই র‌্যাঙ্কিংয়ের তলানির কোন দলের কাছে নতি স্বীকার করেনি। এবার র‌্যাঙ্কিংয়ের ৯ নম্বর দল বাংলাদেশের কাছে সিরিজের প্রথম টেস্টেই হেরেছে সেই অস্ট্রেলিয়া ২০ রানে। আর এ জয়ের মূল রূপকার ছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তিনি ব্যাটে বলে প্রায় একাই হারিয়ে দিয়েছেন অসিদের। তবে ভিতটা গড়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। এ বাঁহাতি ওপেনার উভয় ইনিংসে অর্ধশতাধিক রানের ইনিংস খেলে বোলারদের জন্য লড়াইয়ের মঞ্চটা প্রস্তুত করে দিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক জয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন তিনি। প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথও যেমন সেটা অকপটে স্বীকার করেছেন তেমনি বাংলাদেশ দলের সবাই এ কথাটিই বলছেন। বিশ্বে ক্রিকেটের শুরুটাই হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার হাত ধরে। ১৮৭৭ সালের মার্চে নিজেদের মাঠ মেলবোর্নে ইতিহাসের প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছিল অসিরা ক্রিকেটের জনক ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রথম জয়টাও এ ম্যাচ জিতে পেয়েছিল অসিরা। সেই দলটির নৈপুণ্য কোন সময়ই খুব বাজেভাবে নিম্নগামী হয়নি। কিন্তু বিশ্বের প্রায় সবগুলো টেস্ট খেলুড়ে দলেরই বিভিন্ন সময়ে অনেক খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। একচ্ছত্র দাপট দেখিয়েছে সবসময় ক্রিকেটের এ অভিজাত দলটি। র‌্যাঙ্কিং প্রথা চালুর পর থেকেও অসিদের মর্যাদার টেস্ট ক্রিকেটে র‌্যাঙ্কিংয়ের তলানির দিকে থাকা কোন দলের বিরুদ্ধে হারতে দেখা যায়নি। তবে সেই কালিমাটা তাদের গায়ে লেপ্টে দিয়েছে এবার ৯ নম্বর র‌্যাঙ্কিংধারী বাংলাদেশ দল। ১১ বছর পর অসিদের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলতে নেমেই বাজিমাত করে টাইগাররা। ১৭ বছর আগে টেস্ট মর্যাদা পাওয়া দলটি ২০০৩ সালে প্রথম টেস্ট খেলেছিল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়াকে ১৪ বছর এবং ৫ টেস্ট খেলেই হারিয়ে দেয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের বেশ আগেই টেস্ট মর্যাদা পাওয়া জিম্বাবুইয়ে এখন পর্যন্ত জিততেই পারেনি, অবশ্য মাত্র ৩ টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছে তারা। শ্রীলঙ্কার লেগেছিল ১৬ বছর ও ১১ টেস্ট। ভারতের ১২ বছর লাগলেও তাদের প্রথম জয় পেতে খেলতে হয়েছিল ১০ টেস্ট, পাকিস্তান প্রথমবার মুখোমুখি হয়েই জিতে গেলেও পরের জয়টি পেতে ২১ বছর ও আরও ১১ টেস্ট খেলতে হয়েছিল। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড প্রথম জয় তুলে নিয়েছিল ২৮ বছরে ৬ টেস্ট খেলার পর। ৯ বছরে ৬ টেস্ট খেলার পর অসিদের হারাতে পেরেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, এক সময় বিশ্বের অন্যতম ক্রিকেট পরাশক্তি ওয়েস্ট ইন্ডিজ অবশ্য ১ বছরেই প্রথম জয় পায় কিন্তু সেজন্য ৫ টেস্ট অপেক্ষা করতে হয়েছিল। বাংলাদেশ দলও সেই ৫ টেস্ট খেলেই জিতে গেছে। আর এ জয়ের পেছনে অন্যতম ভূমিকা রেখেছেন তামিম। কারণ প্রথম ইনিংসে মাত্র ১০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে যখন ঘোর বিপদে পড়েছিল বাংলাদেশ, সে সময় তিনি ৭১ রানের একটি দারুণ ধৈর্যশীল একটি ইনিংস খেলেন। চতুর্থ উইকেটে সাকিবকে নিয়ে ১৫৫ রানের জুটি গড়ে দলকে একটি সম্মানজনক সংগ্রহ গড়ার ভিত দেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও একমাত্র তামিমই ছিলেন যোদ্ধা। যখন বাকিরা একের পর এক ব্যর্থ হচ্ছিলেন সে সময় বাংলাদেশের ইতিহাস রচনার দায়িত্বটাই যেন নিয়ে নেন তিনি। ৭৮ রানের আরেকটি অসাধারণ ইনিংস উপহার দেন। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের পক্ষে একমাত্র অর্ধশতক। ক্যারিয়ারের ৫০তম টেস্টে উভয় ইনিংসে অর্ধশতক হাঁকিয়ে বিরল কীর্তি দেখান তিনি। ৫০ টেস্ট শেষে তার ক্যারিয়ার রান ৩৮২৬। অনেক কিংবদন্তি ক্রিকেটারও ক্যারিয়ারের ৫০তম টেস্ট শেষে এত রান করতে পারেননি। সেদিক থেকে তামিমেরও পেছনে শচীন টেন্ডুলকর, রিকি পন্টিং, কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে ও এ্যালিস্টার কুক। তার এই ইনিংসের সুবাদেই দু শ’ পেরোতে পারে বাংলাদেশ দল দ্বিতীয় ইনিংসে। ফলে লড়াইয়ের পুঁজি পেয়ে যায় দল। এ বিষয়ে ম্যাচশেষে অসি অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ বলেন, ‘অসাধারণ খেলেছেন তামিম। তিনি দারুণ এক ব্যাটসম্যান। তাকে একবার যদি সুযোগ দেয়া হয় তাহলে অনেক শট খেলেন। তার আর সাকিবের প্রথম ইনিংসে দেড় শতাধিক রানের জুটিই আমাদের হারিয়ে দিয়েছে।’ তামিম এমনটা করে দেখিয়েছেন ক্যারিয়ারে ৬ টেস্টে- উভয় ইনিংসেই অর্ধশতক হাঁকিয়ে দলের জন্য অসামান্য অবদান রেখেছেন যখন অন্যরা ব্যর্থ হয়েছে। তিন ফরমেটের ক্রিকেটেই তিনি বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক রানের এবং সেঞ্চুরির মালিক। তবে মূল নায়ক হয়ে গেছেন সাকিব। ব্যাট হাতে প্রথম ইনিংসে ৮৪ রান করার পর উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে হয়েছেন ম্যাচসেরা। তিনিও বলেন, ‘তামিম দুই ইনিংসে যেভাবে ব্যাটিং করেছে সেটার জন্যই আমরা এমন পজিশনে ছিলাম। তার দুটি ইনিংস ছাড়া জয় পাওয়া সম্ভব ছিল না।’ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমও এ বিষয়ে বলেন, ‘তামিম অসাধারণ দুটি ইনিংস খেলেছে। আমরা জানি সে স্ট্রোক খেলতে পছন্দ করে। কিন্তু নিজেকে সামলিয়ে রেখেছে, মাথা ঠাণ্ডা রেখেছে- কোন ধরনের উত্তেজনা তার মধ্যে আমরা দেখিনি। এমন ইনিংস না খেললে হয়তো আজ এ জয় সম্ভব হতো না।’
×