ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক চলাচলের অযোগ্য-যাত্রীদের ভরসা লঞ্চ

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২৬ আগস্ট ২০১৭

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক চলাচলের অযোগ্য-যাত্রীদের ভরসা লঞ্চ

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ প্রতিবছর ঈদে দক্ষিণাঞ্চলের লাখো যাত্রী লঞ্চ, সড়ক ও বিমানপথে আরামদায়কভাবে যাতায়াত করলেও এবার আসন্ন ঈদ-উল-আজহায় তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে সড়কপথে। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের লাখো যাত্রী নাড়ির টানে ঘরে ফেরার আয়োজন শুরু করেছেন। সূত্র মতে, অতিবর্ষণ ও ঠিকাদারের খামখেয়ালিতে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগের একমাত্র ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক বেহাল দশার কারণে এবার ঘরমুখো মানুষের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। মহাসড়কের ৩৫ কিলোমিটার জুড়ে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত ও পিচ ধুয়েমুছে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের জন্য আরিচা ও পাটুরিয়া ফেরিঘাটের সিন্ডিকেট বড় সমস্যাস্থল হওয়ায় এবারের ঈদে দক্ষিণের সাধারণ যাত্রীর কাছে লঞ্চ ও ভিআইপি যাত্রীর কাছে অভ্যন্তরীণ রুটের বিমানই ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহাসড়কের বেহাল দশার কারণে যাত্রীর চাপ সামলাতে প্রতিবছরের চেয়ে এবারই কেবল অতিরিক্ত লঞ্চ যুক্ত করা হয়েছে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের বহরে। এবার ঢাকা থেকে বরিশাল পর্যন্ত সরাসরি ব্যক্তি মালিকানাধীন ৩০, দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ রুটে আরও দশটি লঞ্চ আগামী ২৭ আগস্ট থেকে এবং সরকারী ছয়টি জাহাজ ২৯ আগস্ট থেকে ঈদের স্পেশাল সার্ভিস নৌবহরে যুক্ত হবে। এরমধ্যে প্রথমবারের মতো বহরে রাত্রিকালীন সার্ভিসে যুক্ত হবে এ্যাডভেঞ্চার-১ ও আধুনিকায়ন শেষে সুন্দরবন-১১ লঞ্চ। সূত্রে আরও জানা গেছে, মহাসড়কের বেহাল দশার কারণে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা এবার আগেভাগেই লঞ্চের অগ্রীম টিকেটের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। ফলে বিলাসবহুল লঞ্চ কোম্পানিগুলো গত ১৫ আগস্ট থেকে অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু করেছে। গত ২৩ আগস্ট মালিকানাধীন এসব লঞ্চের ঈদের দুদিন আগে ও দুদিন পরের অগ্রীম টিকেট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। এখন টিকেট পাওয়া আর সোনার হরিণ পাওয়া সমান হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ বরিশালের উপ-পরিচালক আজমল হুদা সরকার মিঠু জানান, ঢাকা-বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২৮ নৌরুটে সরাসরি দিবা ও রাত্রীকালীন সার্ভিস মিলিয়ে ১৯ লঞ্চ রয়েছে। ঈদ স্পেশাল সার্ভিসে আরও ২৪ লঞ্চে ঢাকা-বরিশাল রুটে সরাসরি যাত্রীসেবা দেবে। যাত্রীদের প্রয়োজনে আরও ২/১টি লঞ্চ সংযোজন করা হবে। তিনি আরও বলেন, গত ঈদ-উল ফিতরের মতো কোরবানির ঈদেও এ রুটের যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রার লক্ষ্যে সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। লঞ্চ মালিক ও কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের মোট ২৮ রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করে। সব রুটের লঞ্চ কোম্পানি নিজ নিজ সুবিধা ও যাত্রীর চাহিদা অনুযায়ী অগ্রীম টিকেট বিক্রি শেষ করেছে। বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, ঈদ সার্ভিসের লঞ্চের মধ্যে সুন্দরবন-৮, ১০, ১১, ১২, সুরভী-৭, ৮, ৯, পারাবত-২, ৯, ১০, ১১, ১২, এমভি টিপু-৭, এমভি ফারহান-৮, কীর্তনখোলা-১, ২ দীপরাজ, কালাম খান-১, তাসরিফ-১, ৪, এ্যাডভেঞ্চার-১, দেশান্তর ও গ্রীনলাইন ২, ৩ সহ ২৪টি লঞ্চ থাকবে। তবে ঝালকাঠি ও পিরোজপুর থেকে চারটি লঞ্চ ভায়া হিসেবে বরিশাল নদী বন্দর হয়ে চলাচল করলেও ঈদের সময় যাত্রীর চাপ থাকায় এগুলো বরিশাল নদীবন্দরে ভিড়তে দেয়া হয় না। এছাড়াও পিরোজপুর থেকে ঢাকাগামী লঞ্চগুলো বরিশালের বানারীপাড়া, উজিরপুরসহ বিভিন্নস্থানে ঘাট দিয়ে চলাচল করবে। পাশাপাশি বাবুগঞ্জ, মুলাদী, হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ ও টরকী রুটের চলাচলরত লঞ্চও স্পেশাল সার্ভিস দেবে। অপরদিকে ঈদ স্পেশাল সার্ভিসে ২৯ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারী জাহাজ সার্ভিসে ছয়টি নৌযান ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচল করবে। মহাসড়ক জুড়ে খানাখন্দ ॥ বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের ৩৫ কিলোমিটার জুড়ে খানাখন্দে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের সড়কপথে যোগাযোগ ব্যাহতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বর্ষা মৌসুমের পূর্বে মহাসড়ক বর্ধিতকরণের নামে দুপাশ খোঁড়াখুঁড়ি করে ফেলে রাখায় বর্তমানে এ মহাসড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়েছে। খানাখন্দ দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত বাস কিংবা মালবাহী ট্রাকের চাকা দেবে যাচ্ছে। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বরিশাল-ঢাকা রুটে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে থাকছে। বিশেষ করে বরিশালের উজিরপুরের জয়শ্রী, বামরাইল, বাটাজোর, মাহিলাড়া, বেজহার, কাসেমাবাদ, হ্যালিপ্যাড, আশোকাঠী, দক্ষিণ বিজয়পুর, গৌরনদী, কসবা, টরকী, সাউদেরখালপাড়, ইল্লা, বার্থী, কটকস্থল, ভুরঘাটা এলাকায় বেহাল সড়কে দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করছে। এসব এলাকায় প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এ অবস্থায় আসন্ন ঈদ-উল-আযহায় সড়কপথে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষকে পোহাতে হবে চরম দুর্ভোগ। কোরবানিতে বাড়তি যানবাহন চলাচলে খানাখন্দে পড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন যানবাহন চালকরা। সূত্রমতে, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে মরণ ফাঁদে পরিণত হওয়া বড় বড় গর্ত ঈদের আগেই মেরামতের দাবি জানিয়ে জেলা বাস মালিক গ্রুপের নেতৃবৃন্দরা ইতোমধ্যে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেছেন। এরপর জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে মহাসড়কের কয়েকটি অংশে নামমাত্র ইটের সলিং করা হয়েছে। জেলা বাস মালিক গ্রুপের নেতৃবৃন্দরা অভিযোগ করেন, প্রায় ৫০ কিলোমিটার মহাসড়কের দুপাশ বর্ধিতকরণ কাজ শুরু করা হয় ২০১৬ সালের জুলাই মাসে। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৭ সালের জুলাই মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়নি। সংগঠনের সভাপতি আফতাব হোসেন জানান, মহাসড়কের জয়শ্রী থেকে ভুরঘাটা পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার মহাসড়কের বেহালদশা। মহাসড়ক জুড়ে বড় বড় গর্তের কারণে ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা। এসব গর্তে বাস ও ট্রাক প্রতিনিয়ত আটকে পড়ছে। তিনি বলেন, আসন্ন ঈদে যাত্রীদের সঙ্গে সঙ্গে যানবাহন বাড়বে কয়েকগুণ। চলাচল অনুপযোগী মহাসড়কে খানাখন্দের কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বরিশালে এসে দ্রুত মহাসড়কের নির্মান কাজ সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই সময় মন্ত্রী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন দ্রুত কাজ শুরু করা না হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করা হবে। মন্ত্রীর এ নির্দেশের প্রায় ২৫ দিন পেরিয়ে গেলেও কাজ শুরু করা হয়নি। বর্ষার অজুহাতে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। বাস মালিকরা এজন্য সড়ক ও জনপদ বিভাগ এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করছেন। সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বছরখানেক পূর্বে ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের দুই পাশে ছয় ফুট বাড়ানোসহ মেরামতের দরপত্র আহবান করা হয়। দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ সম্পন্নের কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স ও এমএসএএমপি জেভি লিমিটেড। কার্যাদেশ পাওয়ার প্রায় এক মাসের মাথায় মহাসড়কের নগরীর কাশিপুর থেকে গৌরনদীর ভুরঘাটা পর্যন্ত মেরামত এবং বর্ধিতকরণ কার্যক্রম শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নগরীর কাশিপুর থেকে রহমতপুর পর্যন্ত একাংশের কাজ সম্পন্ন করা হলেও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়া উজিরপুরের জয়শ্রী থেকে ভুরঘাটা পর্যন্ত মহাসড়কের দুপাশ খুঁড়ে নামেমাত্র কাজ করে ফেলে রাখায় অতিবর্ষণে পুরো মহাসড়ক খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে এখন যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী দুলাল কুমার প্রামাণিক জানান, বর্ষার কারণে বিটুমিন দিয়ে কাজ করা যাচ্ছে না। ফলে মহাসড়কের বর্ধিতকরণ কাজ কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে। বৃষ্টি কমলেই পুরো কাজ সম্পন্ন করা হবে।
×