ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ শুরু রবিবার

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৬ আগস্ট ২০১৭

বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ শুরু রবিবার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আর মাত্র একদিন বাকি। এরপরই শুরু হয়ে যাবে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। রবিবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সকাল ১০টায় বল গড়ানোর মধ্য দিয়ে সিরিজ শুরু হবে। এদিন প্রথম টেস্ট শুরু হবে। এরপর ৪ সেপ্টেম্বর থেকে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে। এ টেস্ট সিরিজের আগে দুই দল পরস্পরের বিপক্ষে ১১ বছর কোন টেস্ট খেলেনি। দুই দল সর্বশেষ ২০০৬ সালে টেস্ট সিরিজে মুখোমুখি হয়। দুই ম্যাচের সেই টেস্ট সিরিজটি বাংলাদেশের মাটিতেই অনুষ্ঠিত হয়। সিরিজের দুটি ম্যাচেই হারে বাংলাদেশ। ফতুল্লায় অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে আশা জাগিয়েও ৩ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। এরপর চট্টগ্রামে ইনিংস ও ৮০ রানের ব্যবধানে হার হয় বাংলাদেশের। দেশের মাটিতে এই টেস্ট সিরিজের আগে ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। দুটি টেস্টেই ইনিংস ব্যবধানে হার হয় বাংলাদেশের। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এ পর্যন্ত দুই ম্যাচের দুটি টেস্ট সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। দুটি সিরিজেই হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। এবার কী হবে? দুই দলই আর আগের দল নেই। ২০০৬ সালের দলের কোন ক্রিকেটারই এখন দলে নেই। তাই দুই দলই নতুন সম্ভাবনা নিয়ে, নতুন চেহারায় পরস্পরের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নামবে। অস্ট্রেলিয়া দলটির সেই প্রতাপ এখন আর নেই। আর উপমহাদেশে তো অসিদের অবস্থা বেহাল। যেমন দলই হোক অস্ট্রেলিয়া, উপমহাদেশের মাটিতে মানেই যেন হার নিশ্চিত তাদের। উপমহাদেশে সর্বশেষ সাত টেস্ট সিরিজ খেলে জিতেছে মাত্র ১টি সিরিজে। কি করুণ দশা অস্ট্রেলিয়ার। বাংলাদেশের মাটিতে তাদের লক্ষ্যই হলো এই দুর্দশা থেকে নিজেদের দূর করা। পারবে অস্ট্রেলিয়া? বাংলাদেশ দলটি এ মুহূর্তে দুর্দান্ত দল। দলের ক্রিকেটাররাও আত্মবিশ্বাসী। আবার খেলা দেশের মাটিতে। নিজেদের মাটিতে সেরা দল বাংলাদেশ। এই দলটিই গত বছর অক্টোবরে নিজেদের মাটিতে ইংল্যান্ডকে একটি টেস্টে হারিয়েছে। আরেকটি টেস্টে জেতার সুযোগ তৈরি করেও পারেনি। আবার এ বছর মার্চে শ্রীলঙ্কার মাটিতে খেলে লঙ্কানদের একটি টেস্টে হারিয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে ওয়ানডেতে আকাশচুম্বী সাফল্য টেস্টেও ছোঁয়া লেগেছে। অস্ট্রেলিয়ার তাই ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। অস্ট্রেলিয়া এবার বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে নামার আগে শঙ্কাতেও আছে। খেলাটি যে হবে বাংলাদেশের মাটিতে। এগারো বছর আগে ২০০৬ সালে যখন অস্ট্রেলিয়া দল বাংলাদেশে খেলতে আসে সেই সময় অসিদের হারানোর চিন্তা করাও যেন দুরূহ ছিল। এতটাই শক্তিশালী দল ছিল তারা। যে কোন দল অসিদের বিপক্ষে নাকানি-চুবানি খায়। ম্যাথু হেইডেন, মাইক হাসি, রিকি পন্টিং, ডেমিয়েন মার্টিন, মাইকেল ক্লার্ক, এ্যাডাম গিলক্রিস্ট, শেন ওয়ার্ন, ব্রেট লি, জেসন গিলেস্পি, স্টুয়ার্ট ক্লার্ক, স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলের মতো বিশ্বসেরা ক্রিকেটাররা ছিলেন। তাইতো গিলক্রিস্ট বাংলাদেশ সফরের আগে ভেবেছিলেন, ‘সেবারের গ্রীষ্মে আমরা ব্যস্তসূচী পার করেছিলাম। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে কঠিন সময় কাটাতে হয়েছিল আমাদের। এরপর দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে আমরা বাংলাদেশে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম আমরা সহজেই উতরে যাব, তারা (বাংলাদেশ) পাত্তাই পাবে না।’ কিন্তু এই দলটিকেই নাড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। ফতুল্লা টেস্টে শাহরিয়ার নাফীসের সেঞ্চুরি, হাবিবুল বাশার সুমনের হাফসেঞ্চুরি ও রাজিন সালেহর হাফসেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে ৪২৭ রান করেছিল বাংলাদেশ। গিলক্রিস্ট ১৪৪ রান করার পরও ২৬৯ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল অসিরা। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ লিড নিয়েছিল। এমন প্রতাপ ছড়ানো দলের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে এগিয়ে যাওয়া মানেই তো জয় হয়ে যাওয়া। বাংলাদেশ সেই টেস্টে জয়ের আশাও জাগায়। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৮ রানে অলআউট হওয়ার পর রিকি পন্টিংয়ের অপরাজিত সেঞ্চুরি ও হেইডেনের হাফসেঞ্চুরিতে কষ্ট করে হলেও জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া। এরপর চট্টগ্রাম টেস্টে অনায়াসেই জিতে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু এবার যখন অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে খেলতে আসে তার আগেই গিলক্রিস্ট দলকে সতর্ক করে দেন। বাংলাদেশ দল যে এখন ২০০৬ সালের দলের চেয়েও অনেক শক্তিশালী। অস্ট্রেলিয়া দলের ক্রিকেটাররাও এবার এত উচ্চবাচ্য করছেন না। কারণ তারা ভাল করেই জানেন হারও হতে পারে। তাইতো ভাল খেলার কথা বললেও, চ্যালেঞ্জের সিরিজ হবে বললেও, কেউই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে সিরিজে হারিয়ে দেবে বা হোয়াইটওয়াশ করবে, এমনটা বলতে পারছে না। কিন্তু বাংলাদেশ শিবিরের চিত্রটা এবার একেবারেই ভিন্ন। ইংল্যান্ডকে গত বছর অক্টোবরে হারানোর পর যেন আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে। দলের কোচ থেকে শুরু করে ক্রিকেটারদের ভেতর বিশ্বাস জন্মে গেছে এই অস্ট্রেলিয়াকে এবার হোয়াইটওয়াশও করা সম্ভব। আর সিরিজ জেতার আশাতো এখন স্বাভাবিকভাবেই আসছে। সেই আশাই করছে সবাই। সেই আশাতেই রবিবার থেকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলা শুরু করবে বাংলাদেশ।
×