ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পেশীশক্তি দেখাচ্ছেন পুতিন

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৩ আগস্ট ২০১৭

পেশীশক্তি দেখাচ্ছেন পুতিন

আগামী মাসের মাঝামাঝি রাশিয়া সামরিক মহড়া করতে যাচ্ছে। এটি হবে স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর থেকে ইউরোপের বুকে বৃহত্তম মহড়া। এতে কমপক্ষে এক লাখ সৈন্য অংশ নেবে। জাপাদ নামে এই মহড়া প্রতি চার বছর পর পর হলেও এবারের মহড়া ন্যাটো সদস্যদের বিশেষ করে রাশিয়া ও বেলারুশের সীমান্তবর্তী দেশগুলোর মধ্যে বিশেষ শঙ্কার ছায়া ফেলেছে। এর আগে ২০০৯ সাল ও ২০১৩ সালের মহড়াও বেশ বড় ছিল তবে এবারের মতো নয়। তবে রাশিয়ার ইউক্রেন হামলার পর থেকে এবারের মহড়াই প্রথম। এ হামলা নিয়ে পাশ্চাত্যের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কে উত্তেজনা চলছে। দু’পক্ষের মধ্যে এমন বৈরিতা ৩০ বছরের মধ্যে আর হয়নি। ইউক্রেন হামলা ও ক্রিমিয়া গ্রাসের আংশিক জবাব হিসেবে এ বছরের প্রথমদিকে ন্যাটো, পোল্যান্ড, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়া ব্যাটালিয়ন সাইজের চারটি যোদ্ধা গ্রুপ মোতায়েন করে। মাত্র ৪ হাজার সৈন্যের এই বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েনের দ্বারা মস্কোকে এই বার্তা পৌঁছে দেয়া হয় যে, পূর্বাঞ্চলে কোন সদস্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মস্কো কোন কিছু করার চেষ্টা করলে গোটা ন্যাটো জোট তার পাশে দাঁড়াবে। গত মাসে আমেরিকার নেতৃত্বে ন্যাটোর এক মহড়া হয়েছে। স্যাবার গার্ডিয়ান নামে সেই মহড়ায় ২০টিরও বেশি দেশের ২৫ হাজার সৈন্য অংশ নেয়। মহড়াটি হয় হাঙ্গেরী, রুমানিয়া ও বুলগেরিয়ার সীমান্ত জুড়ে। তবে ন্যাটো মহড়ার সঙ্গে রাশিয়ার মহড়ার বড় ধরনের পার্থক্য আছে পদ্ধতিগত দিক দিয়ে। জাপাদ ছাড়াও রাশিয়া তার মহড়াগুলো বিনা নোটিসে হঠাৎ করেই অনুষ্ঠানের নির্দেশ দেয়। অনেক সময় তাতে ৫০ হাজার পর্যন্ত সৈন্যও অংশ নেয়। এটা যে শুধু দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তা নয় বরং ছোট ছোট প্রতিবেশীদের ভয় দেখানোর জন্য এবং শেষ পর্যন্ত তাদের রাশিয়ার প্রভাব বলয়ে টেনে আনার জন্য। ছোট পরিসরের এ জাতীয় চারটি মহড়া ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পঞ্চম মহড়াটি শুরু হয় ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এবং তাতে বিপুলসংখ্যক এয়ারবাস ট্রুপ, সাঁজোয়া যান ও এ্যাটাক হেলিকপ্টার অংশ নেয় এবং এগুলোই ক্রিমিয়া দখলে ব্যবহৃত হয়। এর আগে কাভকাজ ২০০৮ নামে আরেক মহড়াকে কাজে লাগিয়ে পুতিন জর্জিয়ায় হামলা চালিয়েছিলেন। ন্যাটোর কমান্ডাররা ধারণা করছেন যে জাপাদ ২০১৭কে কাজে লাগিয়ে রাশিয়া বেলারুশে সৈন্য ও সাজসরঞ্জাম নেয়ার এবং সেখানেই রেখে দেয়ার হয়ত পরিকল্পনা করছে। এ যেন অনেকটা ট্রয়ের ঘোড়া। তারা বলেন, রুশরা ভাব দেখায় তারা একটা মহড়া করছে। তারপর সহসা তারা সমস্ত লোকলস্কর ও সাজসরঞ্জাম অন্য কোথাও নিয়ে যায়। ন্যাটো বিশেষ করে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, গোয়েন্দা ড্রোন ও কমান্ডো বাহিনীকে মহড়ার নামে হুমকিপূর্ণ স্থানগুলোতে নিয়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্নবোধ করছে। এমন আশঙ্কাও আছে যে বেলারুশে রুশ সৈন্য ঢুকিয়ে দিতে জাপাদ ২০১৭কে কাজে লাগানো হবে। বেলারুশের একনায়ক আলেকজান্দার লুকাশেঙ্কো পাশ্চাত্যের দিকে আরও বেশি ঝুঁকে পড়লে কিংবা তাকে মস্কোর স্বার্থের তোয়াক্কা না করা অন্য কেউ উৎখাত করলে এই বাহিনীই ঠেকা দিয়ে রাখবে। ন্যাটোর অভিযোগ, রাশিয়া ভিয়েনা দলিল নিয়মিত অগ্রাহ্য করে চলায় তার মহড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ ঘটেছে। ওই দলিলে স্বচ্ছতা রক্ষার স্বার্থে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে যে কোন মহড়ায় ৯ হাজারের বেশি সৈন্য অংশ নিলে অন্তত ৪২ দিন আগে জানাতে হবে। মহড়ার সৈন্য সংখ্যা ১৩ হাজারের বেশি হলে আশপাশের সব দেশকে ২ জন করে পর্যবেক্ষক পাঠানোর আমন্ত্রণ জানাতে হবে। রাশিয়া এই দুই শর্তের কোনটাই মানছে না। সূত্র ॥ দি ইকোনমিস্ট
×