ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বর্তমান সংসদকে অপরিপক্ব বলেন যারা তারাই ইমম্যাচিউর ॥ তোফায়েল

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১০ আগস্ট ২০১৭

বর্তমান সংসদকে অপরিপক্ব বলেন যারা তারাই ইমম্যাচিউর ॥ তোফায়েল

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সংবিধান ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে দেয়া উচ্চ আদালতের কিছু পর্যবেক্ষণের কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, যারা বর্তমান সংসদকে ইমম্যাচিউর (অপরিপক্ব) বলেন, আমরাও তো বলতে পারি, যারা বিচারকের আসনে বসে আসেন তারাও ইমম্যাচিউর। এই সংসদ নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার তাদের (বিচারপতি) নেই। বর্তমান সংসদ সম্পূর্ণ সাংবিধানিক, সারা বিশ্বের সংসদ এই সংসদকে বৈধতা দেয়। যারা অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনতে চায় তারাই রাজনীতিবিদদের ছোট করার চেষ্টা করছে। রাজনীতিবিদদের ছোট করতেই ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে এসব অনাকাক্সিক্ষত বক্তব্য সংযুক্ত করা হয়েছে। বুধবার রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, সমস্ত রাজনীতিবিদদের ছোট করতে চায় কারা? যারা সামরিক শাসন চায়, যারা অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনতে চায়, তারা এসব করে। উচ্চ আদালতের প্রদত্ত পর্যবেক্ষণের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যখন সংবিধান প্রণয়ন হয় তখন আমি সেই কমিটিতে ছিলাম। সংবিধানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের বৈধতা দেয়া আছে। একটি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন বৈধ হলে একাধিক আসনেই বৈধ। তিনি বলেন, সুপ্রীমকোর্টের একটি রায়ে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, কারও একক নেতৃত্বে নাকি এ দেশ স্বাধীন হয়নি! আমি প্রশ্ন করতে চাই, এ দেশের স্বাধীনতার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু ছাড়া অন্য কোন নেতৃত্ব ছিল? যখন বলা হয়, একক নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়নি, তখন ঘৃণা প্রকাশ ছাড়া আর কোন কিছু বলার থাকে না। তোফায়েল আহমেদ বলেন, আজ যারা বিচারকের আসনে আছেন তাদের অনেকেই এক সময় আমাদের কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। আজ তারা সবাই ম্যাচিউর আর আমরা হলাম ইমম্যাচিউর। এটি সত্যিই দুঃখজনক। পৃথিবীর কোন আইনে এসব আছে? আমার কাছে পৃথিবীর সব আইনের বই আছে। আমরা বিশ^বিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া করে এসেছি। আমরা সংবিধান প্রণয়নে কাজ করেছি। অসংখ্য আইন প্রণয়ন করেছি। বর্তমান সংসদের অধীনেই বিচারকদের বেতন বৃদ্ধি হয়েছে, শতাধিক আইন প্রণয়ন হয়েছে। সারা বিশে^র সংসদ এই সংসদকে বৈধতা দেয়। তাই তো ইন্টারপার্লামেন্টারি এ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আর একজন বিচারপতি বলেন, এই সংসদ নাকি ইমম্যাচিউর! তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর সব দেশে সংসদ বিচারকদের ইমপিচ করে। ব্রিটেনের এ্যাক্ট অব সেটেলমেন্ট-১৯০১ অনুসারে সংসদের হাতে এ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের সব দেশেই এই আইন কার্যকর। ব্রিটেন, ভারত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়র মতো দেগুলোতেও সংসদ বিচারকদের ইমপিচ করে। কিছু বিচারপতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, রাজনীতিবিদদের ছোট করতেই ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে এসব অনাকাক্সিক্ষত বক্তব্য সংযুক্ত করা হয়েছে। একটি গোষ্ঠী সামরিক শাসনের পক্ষে এসব করছে। তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চায়। বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর বঙ্গবন্ধুর রক্তের ওপর দিয়ে বিচারপতি সায়েম রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করে। এরশাদ সাহেব যখন মার্শাল ’ল দিলেন তখন রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন বিচারপতি আহসান উল্লাহ চৌধুরী এবং পরবর্তীতে ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন আরেক বিচারপতি। মার্শাল ল’র সঙ্গে তো তারাই (বিচারপতি) হাত মিলিয়েছেন। আর আজ যে সুপ্রীম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কথা বলা হচ্ছে তাও সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের সৃষ্টি। পাকিস্তানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, পাকিস্তানে সামরিক শাসকদের বিচার কখনো হয় না, বিচারপতিদের বিচার হয় না, শুধু রাজনীতিবিদদের বিচার করা হয়। যারা দেশের অমঙ্গল চায় তাদের পক্ষেই এ ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করা সম্ভব। আওয়ামী লীগের আরেক সভাপতিম-লীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, জাতির কয়েকজন বেইমান যখন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে, চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করেছে, একটি কালো আইন করে হত্যাকারীদের নিরাপত্তা দিয়েছেÑ তখন কোথায় ছিল আদালত? কোথায় ছিল সুপ্রীমকোর্ট, কোথায় ছিল বিচারপতিরা? জাতীয় সংসদের সাবেক স্পীকার রাজ্জাক আলীর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, বিচারপতিদের হাত এত লম্বা নয় যে, তারা সংসদে হাত দিতে পারে। এই সংসদ থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয় আর রাষ্ট্রপতি বিচারপতি নির্বাচন করে থাকেন। তাই সংসদ নিয়ে ধৃষ্ঠতা দেখানোর অধিকার কারও নেই। ২১ বছরে অনেক সরকার ক্ষমতায় এসেছে। তারা কেউ সাহস পায়নি একাত্তরের ঘাতকদের বিচার করতে, যারা লুণ্ঠন করেছে তাদের গায়ে হাত দিতে। কোন বিচারপতিও কালো আইনের বিরুদ্ধে কথা বলেনি। তখন কোথায় ছিলেন তারা? বিএনপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি করছে। কিসের সহায়ক সরকার। বাংলাদেশের জনগণই সহায়ক সরকার। এসব কথা বলে লাভ নেই। সারা বিশে^র সংসদীয় গণতন্ত্রে যেভাবে নির্বাচন হয়ে বাংলাদেশেও সেভাবেই হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং জনগণ আবারও আওয়ামী লীগকে পুনরায় জয়যুক্ত করবে। সংগঠনের সভাপতি ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেনÑ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ রোকেয়া সুলতানা, বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল ইসলাম খান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ, স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ এম ইকবাল আর্সলান, বিএমএ এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া প্রমুখ। সবাইকে সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধকে মানতে হবে Ñগৃহায়নমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য এবং গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশ আর পাকিস্তান এক নয়। বাংলাদেশের মানুষ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছে। ত্রিশ লাখ মানুষ এ স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছে। আর সংবিধান যেহেতু বিচারপতিদের নিয়োগ দিয়েছে, তাই তাদেরও সংবিধান মানতে হবে। সংসদ ও রাষ্ট্রপতিকে মানতে হবে, সংবিধান মেনেই কাজ করতে হবে। কারণ কেউই সংবিধানের উর্ধে নন। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বুধবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। সংগঠনটির সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজার পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেনÑ যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম এমপি, যুবলীগের শহীদ সেরনিয়াবাত, মুজিবুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।
×