ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মিটে গেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া-খেলোয়াড় দ্বন্দ্ব

অস্ট্রেলিয়ার আশা নিশ্চিত, বিসিবির স্বস্তি

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ৪ আগস্ট ২০১৭

অস্ট্রেলিয়ার আশা নিশ্চিত, বিসিবির স্বস্তি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দুই টেস্ট খেলতে বাংলাদেশে আসছে অস্ট্রেলিয়া। তা বৃহস্পতিবার নিশ্চিত হয়ে গেছে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) ও অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার্স এ্যাসোসিয়েশনের (এসিএ) মধ্যকার আর্থিক চুক্তি নিয়ে যে ঝামেলা ছিল, তা মিটে গেছে। দুই পক্ষই সমঝোতায় এসেছে। তাতে করেই অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশে আসাও নিশ্চিত হয়ে গেছে। এমন খবরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) স্বস্তি পেয়েছে। স্বস্তি পেয়েছেন ক্রিকেট প্রেমীরাও। বিসিবির পরিচালক ও মিডিয়া এ্যান্ড কমিউনিকেশন কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস এই সংবাদে স্বাভাবিকভাবেই ভীষণ খুশি হয়েছেন। নিজের বনানীর অফিসে তিনি বলেছেন, ‘ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে আমরা কিন্তু কখনও এত টেনশনে ছিলাম না। কারণ জানেন যে, এটা তাদের একটা অভ্যন্তরীণ সমস্যা ছিল। আর সমস্যাটা ছিল ক্রিকেট বোর্ড আর ক্রিকেট এ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে। আমরা জানতাম একদিন না একদিন তারা এটা সমাধান করে ফেলবে। আমরাও আশা করছিলাম। যেহেতু আমাদের সিরিজটা শুরু হওয়ার কথা আগস্ট মাসের শেষের দিকে, সেহেতু আমাদের হাতে সময় ছিল। আর আমাদের আত্মবিশ্বাস ছিল যে, সিরিজটা শুরু হওয়ার একদিন আগেও তারা আমাদের আসার কথা বলত। আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।’ বিসিবি যে চরম স্বস্তি পেয়েছে, তা জালালের কথাতেই পরিষ্কার, ‘আর আমরা অবশ্যই আনন্দিত যে সিরিজটা হতে যাচ্ছে। কারণ, সিরিজটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আমাদের খুব বেশি বাংলাদেশে টেস্ট খেলার সুযোগ হয় না। তার ওপর আমরা আমাদের হোম গ্রাউন্ডে দুইটা/একটা টেস্ট ম্যাচ খেলব, এটা খুব বড় ব্যাপার আমাদের জন্য। আর এজন্য আমরা খুব খুশি। আমরা এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা যাব। আর দক্ষিণ আফ্রিকা যাবার আগে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টেস্ট সিরিজ খেলা অনেক বড় অভিজ্ঞতা। দুই দুইবার তাড়া সিরিজ পেছানোর পরও আসছে (এবার), এজন্য আমরা খুবই খুশি। আর নিশ্চিতভাবেই এটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য বড় একটা ব্যাপার।’ একবার কথা উঠেছিল, বিসিবিকে ইঙ্গিত দিয়েছে সিরিজ না হওয়ার প্রস্তুতিও যেন থাকে। এ নিয়ে জালাল ইউনুস জানান, ‘বিসিবিকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে তারা জানায়নি। এমনকি কখনওই তারা নেগেটিভ কিছু বলেনি। সিরিজটা সবসময়ই হওয়ার কথা ছিল। কোন সময় তারা এক সেকেন্ডের জন্যও মনে করে নাই এই সিরিজটা হবে না। এমনকি তাদের কাছ থেকে এমন কোন নেগেটিভ তথ্যও পাইনি। এই জন্যই তারা গত সপ্তাহে একটা নিরাপত্তা দল পাঠিয়েছিল। তারা এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও লজিস্টিক ব্যবস্থা এগুলো দেখে যথেষ্ট খুশি।’ বাংলাদেশ যে উন্নতির পথে আছে, এজন্য ক্রিকেট দলগুলো বাংলাদেশে এসে খেলতে বেশি ইচ্ছুক বলেও জানান, ‘পাঁচ বছর আগে দলের যে অবস্থা ছিল তার চেয়ে এখন আমরা অনেক ভালো খেলছি। আমাদের দলের এখন যে অবস্থা তা দেখে আমরা কনফিডেন্টলি বলতে পারি, যে কোন দেশ এসে এখন চাইবে আমাদের এখানে খেলতে কিংবা তাদের দেশে গিয়ে খেলি।’ এখন আর কোন বাধাই রইল না। যথাসময়েই ১০ আগস্ট অসি ক্রিকেটাররা বাংলাদেশ সফরকে উদ্দেশ্য করে অনুশীলন শুরু করে দেবে। এরপর সূচী অনুযায়ীই ১৮ আগস্ট বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখবে। ২২ আগস্ট থেকে বিসিবি একাদশের বিপক্ষে দুইদিনের একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে। এরপর বাংলাদেশের বিপক্ষে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ২৭ আগস্ট প্রথম টেস্ট ও চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ৪ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামবেন অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটাররা। প্রস্তুতি ম্যাচটি ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টিতে এমন অবস্থাই হয়ে গেছে, ফতুল্লায় শেষ পর্যন্ত খেলা নাও হতে পারে। তাহলে কোথায় হবে? বিসিবির গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান হানিফ ভুইয়া আগেই জানিয়েছিলেন, বিসিবিতেও হতে পারে। আবার মিরপুরেও হতে পারে। জালাল জানালেন বিকেএসপির কথাই, ‘ফতুল্লায় না হলে বিকেএসপি আমাদের অপশন। আমরা বিকেএসপিও প্রস্তুত করছি। ওরা আসলে আমরা কোথাও না কোথাও প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার ব্যবস্থা করব।’ এর আগেও যে প্রস্তুতি ম্যাচ বিকেএসপিতে হয়েছে, তাও স্মরণ করিয়ে দিলেন জালাল, ‘আমরা আগেও বিকেএসপিতে জিম্বাবুইয়ের প্রস্তুতি ম্যাচের ব্যবস্থা করেছি। মাঠ এখনও ঠিক হয়নি। যে মাঠে সুবিধা হবে, সেটাতেই খেলা দেয়া হবে।’ বোঝাই যাচ্ছে, সিএ ও এসিএ’র ঝামেলা মিটতেই বিসিবি পুরোপুরি সিরিজটি নিয়ে মাঠে নেমে পড়ছে। দুই পক্ষের ঝামেলা দ্রুতই মিটে যাবে। তা আগেই বোঝা গিয়েছিল। সেই ঝামেলা মিটলও। সবাই চাতক পাখির মতো এ ঝামেলা মেটার দিকেই নজর দিয়েছিল। এখন সমঝোতা হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার সকালেই সমঝোতার খবর ছড়িয়ে পড়ে। তাতে স্বস্তি ফিরে। এরপর দুই পক্ষই সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় ক্রিকেট দলের আসার ব্যাপারটিও নিশ্চিত করে। পরিকল্পনা অনুযায়ীই যে বাংলাদেশ সফর হবে, তা জানিয়ে দেয়া হয়। শুধু বাংলাদেশ সফরই নয়, ভারত সফর ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এ্যাসেজ সিরিজও পরিকল্পনা অনুযায়ীই হবে বলে জানানো হয়। সমঝোতা চুক্তির পর এক সংবাদ সম্মেলনে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) প্রধান নির্বাহী বলেছেন, ‘দুই পক্ষের অনেক আপসের ফসল আজকের এ চুক্তি। এটা দেশের ক্রিকেট নিয়ে সব ধরনের সংশয় দূর করেছে। আগামী ১০ আগস্ট থেকে ডারউইনে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের প্রস্তুতি খুশি মনে শুরু করতে পারে ক্রিকেটাররা। প্রাদেশিক ও আন্তর্জাতিক; আমাদের সব খেলোয়াড় তাৎক্ষণিকভাবে চুক্তিবদ্ধ হবে। এছাড়া বাংলাদেশ সফরসহ সব গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ হবে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী।’ বোর্ডের লভ্যাংশ খেলোয়াড়দের না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিএ। এ নিয়ে খেলোয়াড়দের সংগঠন এসিএ তীব্র প্রতিবাদ জানায়। যে কারণে গত ৩০ জুন আগের সমঝোতা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় বেকার হয়ে পড়েন ২৩০ ক্রিকেটার। ক্রিকেটারদের সঙ্গে নতুন চুক্তি করা হয়নি। তবে দীর্ঘদিনের বিতর্ক শেষে নতুন চুক্তিপত্রে খেলোয়াড়দের লভ্যাংশ দেয়ার ব্যাপারটি অন্তর্ভুক্ত করেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। দাবি অনুযায়ী, ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ পাবে ক্রিকেটাররা, যেটা আগে ছিল ২৬ শতাংশ। নতুন চুক্তি অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে নারী ক্রিকেটাররা। তাদের বেতন সাড়ে ৭ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ৫৫.২ মিলিয়ন ডলার। এসিএ প্রধান নির্বাহী এ্যালিস্টার নিকলসন বলেছেন, ‘এ বেতন কাঠামোয় লিঙ্গ বৈষম্য নেই। অস্ট্রেলিয়ায় মেয়েদের ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বেশি বেতন বাড়ার ঘটনা।’ সব মিলিয়ে খুশি খেলোয়াড়দের সংগঠনের এ প্রধান নির্বাহী, ‘যারা এখন খেলছে এবং ভবিষ্যতে খেলবে, ওইসব ছেলে ও মেয়ে ক্রিকেটারদের জন্য এসিএ খুশি।’ খুশি শুধু অস্ট্রেলিয়ানরাই নন, খুশি বাংলাদেশিরাও। স্বস্তি যেমন ফিরেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ), অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার্স এ্যাসোসিয়েশন (এসিএ) ও অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে; তেমনি সিরিজটি শেষ পর্যন্ত হবে, এতে করে স্বস্তি পেয়েছে বিসিবিও।
×