ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এম হাবীব উল্লাহ

অপূরণীয় শূন্যতা শুধু...

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ২০ জুলাই ২০১৭

অপূরণীয় শূন্যতা শুধু...

‘কি যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে কভু আশি বিষে দংশেনি যারে’ জীবন সায়াহ্নে এসে সঙ্গীহীন জীবনযাপন করছেনÑ তিনি ছাড়া তার দুঃখ আর কেউ বুঝবেন না। স্বামী-স্ত্রী হয়ে যারা জীবনের ৫০ কি ৬০ বছর কাটিয়ে দেন তাদের মধ্যে একজন মারা গেলে আরেকজনের অবস্থা যে কি হতে পারে তা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝবেন না। দিনে দিনে মানুষ আত্মনির্ভরশীল হয় বটেÑ স্বামী-স্ত্রীর নির্ভরশীলতা ভালবাসার স্নেহ প্রেম, মায়া-মমতার ভিত্তিতে গড়ে উঠে। হঠাৎ সেই প্রেম-প্রীতি ভালবাসার বন্ধন ভেঙে গেলে মানুষ নিতান্তই অসহায় হয়ে পড়ে। তখন তার প্রয়োজন হয় নিজের সন্তান-সন্ততিসহ নাতি-নাতনির আর অন্যান্য আপনজনের সান্নিধ্য ও সহযোগিতা। তখন যিনি সন্তান-সন্ততি ও আপনজনের স্নেহ, মায়া-মমতা থেকে বঞ্চিত হন তিনি সত্য সত্যই একজন হতভাগা আর কোন মানুষই একা পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারেন না। তার সঙ্গী সাথীর প্রয়োজন হয়। অনেককে আবার বৃদ্ধাশ্রমেও দিন কাটাতে হয়। এসব অসহায় লোকের জন্য সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। কিন্তু আমাদের সমাজে কেউ সেই সবের তোয়াক্কা করে না। আপনজন যেখানে আপনজনের প্রতি বিরূপ আচরণ করে সেখানে অপর মানুষ নিয়ে গড়ে উঠায় সমাজ তার জন্য কতটা কি করবে এটা অনায়াসেই বোঝা যায়। আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ ভাগাভাগির জন্য তখন যদি কেউ পাশে থাকে তখন সেই হয় তার সবচেয়ে প্রিয়জন। স্বামী-স্ত্রী ছাড়া পরিবারের অপর লোকজন যদি একজনের বিয়োগের পর অপরজনের যথাযথ খোঁজখবর নেনÑ তখন তার সেই শূন্যতা অনেকটা পূরণ হয়ে যায়। একজন বৃদ্ধ মানুষ যখন তার স্ত্রীকে হারিয়ে ফেলেন ভেবে দেখুন তিনি কতটা অসহায় হয়ে পড়েন। তার কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। মনের সাহস কমে যায়Ñ নিজেকে তিনি বড়ই অসহায় মনে করেন। সেই সময় যদি তিনি মনের সুখ-দুঃখের কথা বলার একজন সাথী বা সঙ্গী পান তবে নিঃসন্দেহে তার সময়টা খুবই ভাল কাটান। তিনি মানসিকভাবে উৎফুল্ল থাকেনÑ আর যদি না থাকে তবে তার মনের দুঃখ-বেদনা বেড়ে যায়। তাই ছেলেমেয়ে নাতি-নাতনিসহ অন্যান্য আপনজনের উচিত তাকে সঙ্গ দেয়া। একটি সার্থক ও সুন্দর জীবনের পরিসমাপ্তি সুন্দর হোক এটা আমাদের সকলের কাম্য। জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করতে হলে যা যা করার প্রয়োজন সেদিকেও আমাদের নজর দিতে হবেÑ নইলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না। বৃদ্ধ বয়সে সুন্দর জীবনযাপন একটু কঠিন ব্যাপার। তবে ভাগ্য বলেও যা রয়েছে সেটাকেও অস্বীকার করার উপায় নেই। যদিও কোন কোন মানুষ বলেÑ ‘মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্য নিয়ন্তা।’ সঙ্গীহীন জীবন সায়াহ্নে এসে একটা মানুষ একাকী কতটা ভাল থাকতে পারে তা একটু ভেবে দেখলেই বুঝতে পারা যাবে। এই সঙ্গীহীন মানুষের সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য আত্মীয়-স্বজনসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষেরই কিছু না কিছু করণীয় আছে। আসুন, আমরা সকলে মিলে সঙ্গীহীন জীবন সায়াহ্নে এই মানুষদের সুখ-শান্তির জন্য কিছু একটা করি। তা না হলে এই অসুখী মানুষগুলো যে তিমিরে যাচ্ছেন সেই তিমিরেই থেকে যাবেন। তার জীবনের দুঃখ লাঘব হবে না। লেক সার্কাস, ঢাকা থেকে
×