স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ঘোষণা অনুসারে কার্যকারিতাও শুরু করে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটার্স এ্যাসোসিয়েশন (এসিএ) জানিয়েছিল তাদের দাবি অনুসারে সমঝোতা চুক্তি না করলে সব বিদেশ সফর বয়কট করবে তারা এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা থেকে বিরত হবেন। সেটাই সবার আগে করল উসমান খাজার নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দল। দক্ষিণ আফ্রিকা সফর বয়কট করেছে তারা। আর ক্রিকেটারদের এ সিদ্ধান্ত ইঙ্গিত দিয়ে দিল স্টিভেন স্মিথের নেতৃত্বাধীন জাতীয় দলও আসন্ন সব আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বয়কটের যে হুমকি দিয়েছেন সেটাও কার্যকর হবে। সেক্ষেত্রে আগামী আগস্টে স্মিথদের বাংলাদেশ সফরও শঙ্কার মধ্যে পড়ে গেল ভালভাবেই। অবশ্য এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন চৌধুরী আশাবাদ জানিয়েছেন সঠিক সময়েই অসিরা বাংলাদেশ সফরে আসবে।
আগামী ১৮ আগস্ট দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে আসার কথা অস্ট্রেলিয়া দলের। সিরিজটি ২০১৫ সালের অক্টোবরে হওয়ার কথা থাকলেও সেবার নিরাপত্তা সমস্যার অজুহাত দেখিয়ে আসেনি তারা। সেই সিরিজটিই এবার হওয়ার কথা। কিন্তু এবার ক্রিকেটাররাই বেঁকে বসে আছেন। সেটা বাংলাদেশ সফর নিয়ে নয়, যে কোন সফর নিয়েই। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) বার্ষিক যে রাজস্ব আয় করে ক্রিকেট থেকে সেটার লভ্যাংশ ক্রিকেটাররাও চেয়ে বসেছেন। তাদের দাবি ক্রিকেটারদের জন্যই কাড়িকাড়ি অর্থ আয় করছে সিএ, তাই সেটার ভাগ ক্রিকেটারদেরও পাওয়া উচিত বেতনভাতার সঙ্গে। সেটারই একটি প্রস্তাবনা সিএ-কে দেড় মাস আগে দিয়েছিল এসিএ। কিন্তু সিএ সেটা মানেনি। তারা বেতনভাতা বর্ধিত করে নতুন এক প্রস্তাবনা দিয়ে এসিএ’র সঙ্গে সমঝোতায় আসতে চেয়েছিল। কিন্তু সেটা বয়কট করেন ক্রিকেটাররা। নিজেদের দাবিতে অনড় থাকেন। ৩০ জুন সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের ডেডলাইন দিয়েছিল এসিএ, কিন্তু ওই সময়ে কিছুই হয়নি। তাই আপাতত ‘বেকার’ হয়ে গেছেন ক্রিকেটাররা। তবে অসি ‘এ’ দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর ঘনিয়ে আসার কারণে ক্রিকেটাররা আরও কয়েকদিন সময় বাড়িয়েছিল সমঝোতা চুক্তির। সেই সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও সিএ থেকে ক্রিকেটারদের সঙ্গে কোন আলোচনা করা হয়নি। এ কারণে শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা সফর বাতিলই করল তারা। এ বিষয়ে এসিএ তাদের বিবৃতিতে বলে, ‘চরম হতাশার সঙ্গে জানাচ্ছি যে সাম্প্রতিক বিতর্কে কোন ধরনের অগ্রগতির মাধ্যমে সমঝোতা না হওয়ায় অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের ক্রিকেটাররা নিশ্চিত করেছেন যে তারা দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করবেন না। এই সিদ্ধান্তটি দেশের ২০০ জনেরও বেশি পুরুষ ও মহিলা ক্রিকেটারদের সমর্থনেই গ্রহণ করেছেন তারা। এদের সবাই এখন বেকার।’
এই বয়কটের সিদ্ধান্তে দারুণ হতাশ হয়েছে সিএ। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সিএ এবং এসিএ’র মধ্যে চলমান আলোচনা যখন এগিয়ে যাচ্ছিল এই সময়ে তাদের সফর বাতিলের সিদ্ধান্ত খুবই পরিতাপের বিষয়। তাছাড়া নিয়মিত উভয়পক্ষের নির্বাহী কর্মকর্তার মধ্যে যোগাযোগ হচ্ছে এ বিষয়টি নিয়ে। যদিও নতুন চুক্তিনামার সমঝোতা স্বাক্ষর হয়নি, কিন্তু সিএ সবসময়ই পরিকল্পনা মাফিক এই সফরগুলো ঠিক রাখার দিকে মনোযোগী ছিল।’ সিএ ইতোমধ্যেই ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকাকে (সিএসএ) জানিয়ে দিয়েছে সফরটি ক্রিকেটারদের বয়কটের কারণে আপাতত হচ্ছে না। উল্লেখ্য, ১২ জুলাই অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাওয়ার কথা ছিল। এই স্কোয়াডে উসমান ছাড়াও ছিলেন টেস্ট খেলোয়াড় গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, জ্যাকসন বার্ড। এ বিষয়ে এসিএ বলেছে, ‘ক্রিকেটাররা সামগ্রিক সুবিধার কথা চিন্তা করে তাদের ব্যক্তিগত অর্জন, আকাক্সক্ষাকে বিসর্জন দিয়েছেন এ সিদ্ধান্ত নিয়ে।’ এখন এই বয়কট হুমকির মুখে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের আগামী মাসে বাংলাদেশ সফরটিকে। ১৮ আগস্ট বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে স্টিভেন স্মিথদের। সিরিজে আছে ২ টেস্ট। এরপর সেপ্টেম্বরে তাদের ভারত সফরও পড়ে গেছে হুমকির মুখে। নবেম্বরে দেশের মাটিতে মর্যাদার এ্যাশেজও আছে শঙ্কায়। তবে এখন দেড় মাস বাকি থাকায় বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না বিসিবি। এ বিষয়ে নিজামউদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টা অনেক দূরের ব্যাপার। আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে তাদের আসার কথা। এখনই সে বিষয়ে এখনই মন্তব্য করার সময় নয়। অস্ট্রেলিয়ার পর্যবেক্ষক দল আসবে। তারা এসে কথা বলবে। আমরা আশা করছি তারা ঠিক সময়েই আসবে। আমরা বিকল্প কিছু ভাবছি না, ভাবার কোন অবকাশও নেই।’