ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের দ্বন্দ্ব-সংঘাত বাড়ছে

জি-২০ সম্মেলন ॥ নতুন বাণিজ্য যুদ্ধের শঙ্কা

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ৬ জুলাই ২০১৭

জি-২০ সম্মেলন ॥ নতুন বাণিজ্য যুদ্ধের শঙ্কা

জার্মানির বৃহত্তম শহর হামবুর্গে শুক্রবার থেকে কঠোর নিরাপত্তার ভিতর দিয়ে বিশ্বের বৃহৎ বিশ অর্থনীতির ফোরাম জি-২০ সম্মেলন শুরু হতে যাচ্ছে। এতে আগে থেকেই জলবায়ু, বাণিজ্য ও অন্যান্য তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়ে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্বন্দ্বের আশঙ্কা স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। খবর এএফপির। সম্মেলন কেন্দ্রের পাহারায় প্রায় বিশ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ‘জি-২০ নরকে স্বাগত’, এভাবে যুদ্ধংদেহী সেøাগান দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন পুঁজিবাদবিরোধী প্রতিবাদকারীরা। তবে সম্মেলনের টেবিলে নতুন করে যে সমস্যা তৈরি হতে যাচ্ছে, তা একেবারে ভিন্ন। যখন পাশ্চাত্য ও ইউরোপের মধ্যে গভীর বিভাজন তৈরি হয়েছে, শীতল যুদ্ধ পরবর্তী বিশ্ব ব্যবস্থা যখন দুর্বল ও অকার্যকর হয়ে পড়েছে, তখন চীন ও রাশিয়া বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের শক্তি তুলে ধরতে যাচ্ছে এই সম্মেলনে। এদিকে বিশ্ব নেতাদের সবাই এখন ট্রাম্পের দিকে সন্ত্রস্ত চোখে তাকাচ্ছে। তিনি ‘সর্বাগ্রে আমেরিকা’ তত্ত্ব দিয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালী দেশটিকে এক বিচ্ছিন্ন গতিপথের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। এর আগে গত মে মাসে ইতালিতে জি-৭ বৈঠকে অন্য নেতাদের তিনি অস্থির করে তুলেছিলেন। ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে তাঁর সরে আসার সিদ্ধান্তে বিশ্ব নেতারা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো হতবাক হয়ে পড়েন। এতে বিশ্বে এক অপরিবর্তনীয় ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া দীর্ঘ স্থায়ী সামরিক জোট ন্যাটোকে তিনি প্রশ্নের মুখে ফেলেন। এমনকি মুক্ত বাণিজ্যের সব নিয়মনীতি তিনি ভেঙ্গে দিয়েছেন। অক্সফোর্ডের অর্থনীতি বিশ্লেষক এ্যাডাম স্টলার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও বাকি বিশ্ব যে মেরুকরণের দিকে যাচ্ছে, তা অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। ট্রাম্প চীন ও জার্মানিকে বিশাল উদ্বৃত্ত কমিয়ে আনতে বললে এবং অন্যান্য দেশকে স্টিল, প্রাকৃতিক গ্যাস নিয়ে বাণিজ্য ও হরমোন ব্যবহার করে উৎপাদিত গরুর গোশত উৎপাদনের বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিলে বিশ্বে বাণিজ্য যুদ্ধ স্পষ্ট হয়ে উঠে। জি-২০ সম্মেলনে সবচেয়ে প্রত্যাশিত বৈঠক হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের। তাদের বৈঠকের জন্য সবাই অধীর অপেক্ষা করছেন। সাবেক কেজিবি এজেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি হ্যাকারে ও ভুয়া খবর ছড়িয়ে বিত্তশালী ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে যেতে সহায়তা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের জার্মান মার্শাল ফাউন্ডেশনের ডেরেক চোলেট বলেন, দুই নেতা যখন হাত মেলাবেন তখন নিশ্চিত তাঁরা অলিম্পিক ক্রীড়াবিদদের মতো পৌরুষত্ব প্রদর্শন করবেন। তাঁরা দুজনেই কাঠিন্যকে ভালভাবে অনুভব করার ক্ষমতা রাখেন। জাতিসংঘের বাইরে সবচেয়ে বড় এই কূটনৈতিক সম্মেলন অন্য বিশ্ব নেতাদেরও আধিপত্য, আঞ্চলিক প্রভাব দেখানোর সুযোগ তৈরি করে দেয়। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী জাপানের প্রধানমন্ত্রী সিনজো আবের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এমন একটা সময় তাদের সাক্ষাত হতে যাচ্ছে, যখন পরমাণু অস্ত্র সমৃদ্ধ উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ইতোমধ্যে দেশটি প্রথমবারের মতো আন্তঃমহাদেশীয় দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা সফলভাবে চালিয়েছে। সম্মেলনে সিরিয়ায় রক্তাক্ত যুদ্ধ ও ইউক্রেনের বিষয়টিও উঠে আসবে, আর এ দুটোর সঙ্গে রাশিয়ার হাত রয়েছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব ও ইরানের প্রভাব বিস্তারের লড়াইও আলোচনায় প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানও থাকবেন সম্মেলনে। তিনি ২০১৬ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে জড়িত ব্যক্তি, সুশীল সমাজ ও কুর্দ বিদ্রোহীদের ওপর ব্যাপক ধরপাকড় চালাচ্ছেন। ইতিমধ্যে জার্মানির সঙ্গেও এরদোগানের সম্পর্ক গড়ল হয়েছে। সম্মেলনের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প হাঙ্গেরির একনায়ক ভিক্টর ওরবানসহ পূর্ব ইউরোপীয় সাবেক কমিউনিস্ট দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। এতে ইউরোপে পূর্ব-পশ্চিম দ্বন্দ্ব আরও চরমে পৌঁছাবে। ঋণ সঙ্কট নিয়ে বিভাজন দূর করা ও ব্রেক্সিট ইস্যুতে সমস্যাও বাড়তে পারে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সম্মেলনের আয়োজক দেশ জার্মানির চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মেরকেলের সঙ্গে দেখা করবেন। কেউ কেউ মেরকেলকে ‘মুক্তবিশ্বের নতুন নেতা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বৈশ্বিক ইস্যুতে আন্তর্জাতিকতাবাদী মনোভাব পোষণ করেন। কিন্তু জি-২০ সম্মেলনের সেøাগান ‘আন্তঃসম্পর্কী বিশ্ব গঠন’ ট্রাম্পের একলা চলো নীতির সঙ্গে যায় না।
×