ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রাসেলসসহ পুরো ইউরোপে অস্বস্তি

ইউরোপে বিভাজন বাড়াবে ট্রাম্পের পোল্যান্ড সফর

প্রকাশিত: ০৬:২২, ৫ জুলাই ২০১৭

ইউরোপে বিভাজন বাড়াবে ট্রাম্পের পোল্যান্ড সফর

ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন পোল্যান্ড সফরকে দেশটির সরকারপন্থী সংবাদমাধ্যম ইতোমধ্যে ১৯৬৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির পশ্চিম বার্লিন সফরের সঙ্গে তুলনা করে প্রচার শুরু করেছে। কিন্তু চলতি সপ্তাহে ওয়ারশ সফরে প্রেসিডেন্টের কৌশল ঐক্যবদ্ধ ইউরোপকে শুধু হুমকিতেই ফেলবে না, বিভক্তি আরও বাড়িয়ে দেবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের পোল্যান্ডের মাটিতে পা রাখার কথা রয়েছে এবং বৃহস্পতিবার বিকেলে ওয়ারশর একটি সমাবেশে তিনি ভাষণ দেবেন। খবর গার্ডিয়ান অনলাইনের। জার্মানির বৃহত্তর শহর হামমুর্গে যাওয়ার পথে মধ্য ইউরোপ, বাল্টিক রাষ্ট্র ও বলকান নেতাদের এক সমাবেশে অংশ নেবেন। গত মাসে ট্রাম্পের সফরের কথা ঘোষণা দেয়ার পর পোল্যান্ডের ক্ষমতাসীন ডানপন্থী ল’ এ্যান্ড জাস্টিস পার্টি (পিআইএস) তাদের তীব্র উত্তেজনা যেন আর ধরে রাখতে পারছে না। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ্যান্টিনিও ম্যাসিয়ারউকজ বলেন, ভূরাজনীতি ও বিশ্বরাজনীতির পরিবর্তনে পোল্যান্ডের স্থান কতটুকু, তা-ই এ সফরে দেখানো হবে। কিন্তু বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসসহ ইউরোপীয় অন্য দেশগুলোর রাজধানীতে ট্রাম্পের এ সফর নিয়ে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি দেখা গেছে। সবার ধারণা, ওয়ারশ সফরের মধ্য দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বারবার সংঘাতে লিপ্ত থাকা একটি সরকারকে মৌন সম্মতি দিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। দেশটির ক্ষমতাসীন দল নিজেদের স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও অকার্যকর করে দিয়েছে। এমনকি ইউরোপপন্থী আগের সরকার যেখানে কোটা অনুসারে অভিবাসী গ্রহণে সম্মত হয়েছিল, ক্ষমতায় আসার পর সেটাও তারা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সমাজতান্ত্রিক গোষ্ঠীর নেতা গিয়ানা পিটিলা বলেন, প্রেসিডেন্ট হওয়ার কয়েক মাসের মাথায় ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ইউরোপের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক হুমকিতে ফেলে দিয়েছে। সামরিক জোট ন্যাটোর সঙ্গেও সম্পর্কে চিড় ধরিয়েছে। এমনকি পূর্ব ইউরোপের সঙ্গে পোল্যান্ডের চলমান নাজুক পরিস্থিতিকে উস্কে দেয়ার ঝুঁকিও তিনি নিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের পোল্যান্ড সফরে দেশটির সরকারবিরোধীরাও আতঙ্কে রয়েছেন। ১৯৪৪ সালে নাৎসি দখলদারদের বিরুদ্ধে ওয়ারশ বিদ্রোহে প্রায় দুই লাখ পোলিশ নাগরিককে জীবন দিতে হয়েছিল। সেই সব নিহতের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধের সামনে দাঁড়িয়ে ভাষণ দেবেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা এইচআর ম্যাকমাস্টার বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট অন্ধকার যুগের ইতিহাস ভেদ করা পোলিশদের সাহসের প্রশংসা করে ভাষণ দেবেন। ইউরোপীয় শক্তি হিসেবে পোল্যান্ডের উত্থানকে স্বাগত জানিয়ে উদ্যাপন করবেন তিনি। আমেরিকানরা যেভাবে বর্তমান সময়ের প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছে, তিনি সব পোলিশ নাগরিককেও সেভাবে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করবেন।’ পুরনো কূটনৈতিক বন্ধনের সঙ্গে নতুন করে আরও দুটি বিষয় যোগ হয়েছে। তা হলোÑ সম্প্রতি পোল্যান্ডে আমেরিকার সেনা মোতায়েন ও ইউরোপে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ প্রসারিত করতে আমেরিকান প্রশাসনের আকাক্সক্ষা। এমনকি পোল্যান্ডের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দুই শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি এবং মুসলিম অভিবাসীদের প্রত্যাখ্যানের বিতর্কিত সিদ্ধান্তকেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সমর্থন দিতে যাচ্ছেন।
×