ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে আসার পরিণাম ভয়াবহ ॥ হকিং

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৪ জুলাই ২০১৭

ট্রাম্পের জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে আসার পরিণাম ভয়াবহ ॥ হকিং

প্রখ্যাত ব্রিটিশ কসমোলজিস্ট স্টিফেন হকিং বলেছেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরে আসার সিদ্ধান্তে অপরিবর্তনীয় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, এতে এমন দুর্যোগ নেমে আসতে পারে যে, পৃথিবী শেষ পর্যন্ত শুক্রগ্রহের চেয়েও বেশি উত্তপ্ত বসতিতে পরিণত হয়ে যাবে। তার আশঙ্কা, আগ্রাসনের প্রবণতা মানুষের স্বভাবজাত। এভাবে ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্ত নিতে থাকলে আমাদের সর্বোচ্চ আশা থাকবে, আরেকটি গ্রহে গিয়ে বেঁচে থাকা। বিশ্ববিখ্যাত এ বিজ্ঞানী তার ৭৫তম জন্মদিন উদ্যাপনের দিন বিবিসির সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাতকারে এসব আশঙ্কার কথা বলেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হকিং জীবনের বড় একটা অংশ মোটর নিউরোন নামে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। এতে তিনি চলাচল ও কথা বলার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। এতবড় প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তিনি এ কালের সবচেয়ে মেধাবীদের একজন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও কৃষ্ণ গহ্বর নিয়ে তার তত্ত্ব মহাজগত নিয়ে আমাদের চিন্তা-ভাবনাকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। অধ্যাপক হকিং নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞান পড়ায় উৎসাহিত করে আসছেন। এছাড়া মানব কল্যাণের চিন্তা-ভাবনা নিয়ে তার প্রচারমাধ্যমে উপস্থিতি সবাইকে আকৃষ্ট করে। সর্বশেষ সাক্ষাতকারে তার পুরো উদ্বেগ ছিল মানবজাতির ভবিষ্যত নিয়ে। উষ্ণায়নের জন্য দায়ী কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা কমাতে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে আসার ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি বিশেষভাবে হতাশা ব্যক্ত করেন। হকিং বলেন, আমরা একটা সঙ্কটকালীন সময় পার করছি, যেখানে বৈশ্বিক উষ্ণতা অপরিবর্তনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এখান থেকে আগের অবস্থায় ফিরে আসা আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়বে। ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত আমাদের একেবারে খাদের কিনারে নিয়ে যেতে পারে। ঠিক শুক্রগ্রহের মতোই আড়াই শ’ ডিগ্রী তাপমাত্রার দিকে যাবে পৃথিবী। এরপর একটা সময় আসবে যখন বৃষ্টির মতো সালফিউরিক এসিড ঝরে পড়বে। কেমব্রিজ অধ্যাপকের মতে, যেসব বড় ঝুঁকির মোকাবেলা আমরা করছি, তার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন অন্যতম। আর এখনই কোন পদক্ষেপ না নিলে পরবর্তীতে আমরা এ মারাত্মক পরিণতি থেকে রেহাই পাব না। জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষণ অস্বীকার করে, প্যারিস চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে, আমাদের সুন্দর পৃথিবীতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যাপক পরিবেশগত ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। একটি সুন্দর পৃথিবীকে বিপন্নের দিকে ঠেলে দিতে পারে তার সিদ্ধান্ত। এখনও সিদ্ধান্ত নিলে পৃথিবীকে জলবায়ু ঝুঁকি থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে। জলবায়ু পরিবর্তনসম্পর্কিত জাতিসংঘের আন্তঃসরকার প্যানেল (আইপিসিসি) উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, তাপমাত্রা যেভাবে বেড়ে চলছে তাতে পৃথিবীর উষ্ণতা এমন পর্যায়ে চলে যাবে, যেখান থেকে আর ফিরে আসার পথ থাকবে না। যদিও জলবায়ু সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের স্বল্পতা রয়েছে। আইপিসিসির পঞ্চম মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ুর তাপমাত্রা বৃদ্ধি অপরিবর্তনীয় পর্যায়ে পৌঁছানোর আশঙ্কা তৈরি হয়ে গেছে। পরিবেশগত সমস্যা সমাধান ও মানুষের সংঘাত নিরসনের সম্ভাব্যতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে হকিং নিরাশার কথা বলেন। তিনি বলেন, দিন দিন আমাদের পৃথিবী ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। লোভ আমাদের স্বভাবজাত গুণে পরিণত হয়েছে। মানব জেনমে আগ্রাসন ঢুকে গেছে। কাজেই সংঘাত কমে আসার কোন লক্ষণ আমি দেখছি না। ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র ও সামরিক প্রযুক্তির বিকাশ আমাদের চরম বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে। মানব প্রজাতির বেঁচে থাকার সর্বোচ্চ ভরসাস্থল হতে পারে মহাকাশের স্বাধীন কলোনিগুলো। স্টিফেন হকিং ব্রেক্সিট নিয়েও কথা বলেন। তার ভয়, এতে যুক্তরাজ্যের গবেষণা খাত অপূরণীয় ক্ষতির মুখোমুখি হবে। তার মতে, বিজ্ঞান হলো একটি সহযোগিতামূলক চেষ্টা। কাজেই ব্রেক্সিটের প্রভাব শেষ পর্যন্ত খারাপই হবে। এতে ব্রিটিশ বিজ্ঞান চর্চা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বলে তার ধারণা।
×