ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অঘোষিত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান ॥ আশরাফ গনি

আফগানিস্তানে আরও মার্কিন সৈন্য যাচ্ছে, দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের শঙ্কা

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ২০ জুন ২০১৭

আফগানিস্তানে আরও মার্কিন সৈন্য যাচ্ছে, দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের শঙ্কা

মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা আফগানিস্তানে অতিরিক্ত কয়েক হাজার সৈন্য পাঠানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার প্রেক্ষিতে সে দেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিপর্যয়কর যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য ভিন্ন চিন্তার জন্ম দিয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তানের সামরিক বেসামরিক বিশ্লেষকদের মধ্যে দু’টি চিন্তা সক্রিয় রয়েছে এবং তা হচ্ছে এই সৈন্য পাঠানো অপরিহার্য কী না আর তা কার্যকর হলে অপ্রত্যাশিত কী বাধা বা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হবে। এ বিষয়ে একটি প্রশ্ন দৃশ্যপটকে জটিল করে তুলেছে এবং তা হলো প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক এবং আফগান ও আফগান নয় এমন বিদেশী বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতি কিভাবে অনুকূলে আনা যায়। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট। সম্প্রতি আফগানিস্তানে আত্মঘাতী বোমা হামলাসহ বেশ কিছু মারাত্মক অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা সমর বিশারদদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। অতি সম্প্রতি গত রবিবার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পাকতিয়া প্রদেশে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলায় এক পুলিশ ক্যাম্পের পাঁচজন এবং বেশ কয়েকজন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। এ ঘটনার একদিন আগেই উত্তরাঞ্চলীয় বল্্খ প্রদেশে এক সেনা ঘাঁটির অভ্যন্তরে জনৈক আফগান সেনা কমান্ডো গুলি করে সাতজন মার্কিন সৈন্যকে আহত করে। বল্খের একই সেনা ঘাঁটিতে গত ২১ এপ্রিল তালেবান অনুপ্রবেশকারীরা ১৪০ জন আফগান সৈন্যকে হত্যা করে। সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রাক বোমা হামলার ঘটনা ঘটে গত মাসের শেষদিনে (৩১ মে)। জঙ্গী বিদ্রোহীরা এক ট্রাক ভর্তি বিস্ফোরক নিয়ে কাবুলের সুরক্ষিত নিরাপত্তা এলাকা গ্রীন জোনে ঢুকে পড়ে এবং এটির বিস্ফোরণে দেড়শ’রও বেশি লোক নিহত হয়। এছাড়া, গত শনিবারে এক আফগান কমান্ডোর ৭ মার্কিন সৈন্যকে গুলি করার ঘটনা নতুন করে চিন্তার জন্ম দিয়েছে। কেননা, এর আগেও গত ১০ জুন অপর এক আফগান কমান্ডো আইএস জঙ্গীদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান চলাকালে তিনজন মার্কিন সৈন্যের ওপর গুলি চালিয়ে তাদের গুরুতর আহত করে। অথচ এসব আফগান কমান্ডো মার্কিন সৈন্যদের দ্বারাই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তালেবান অথবা আইএস জঙ্গীদের প্রতি সহানুভূতিশীল এসব কমান্ডো বা আফগান সেনা কখন কোন্্ অসতর্ক মুহূর্তে বন্দুকের নল ঘুরিয়ে ব্যাক ফায়ার করবে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। এসব বিরূপ মনোভাবাপন্ন আফগান সৈন্য বা সেনা কমান্ডোর সংখ্যা কতÑ কোন ঘাঁটিতে কতজন আছেÑ তা কেউ বলতে পারে না। এজন্য নিয়োগদান বা ভর্তি করার সময় এদের অতীত কর্মকা- বা পারিবারিক তথ্য সঠিকভাবে যাচাই বাছাই না করার জন্য এখন পরস্পরকে দোষারোপ করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতির মধ্যে নতুন করে আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্যের উপস্থিতি বাড়ানো হলে এ ধরনের ঘটনা আরও বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। আফগানিস্তানে কত সৈন্য পাঠানো যেতে পারে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাপ্রাপ্ত মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস গত সপ্তাহে সিনেট কমিটিতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে জয়ের মুখ দেখছে না, তবে এ বিষয়ে পেন্টাগন আগামী মাসে একটি কর্মপরিকল্পনা পেশ করবে। তার কথার প্রতিধ্বনি করে ওয়াশিংটনে উড্রো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের গবেষক মিশেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এটি পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে এই যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারবে না। কেননা, তালেবান বিদ্রোহীরা দিনে দিনে শক্তি সঞ্চয় করছে, ইসলামিক স্টেট জঙ্গীরা আগের অবস্থায় ফিরে আসছে, দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে বিতৃষ্ণ জনগণের ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছে এবং বিভিন্ন ঘাঁটিতে আফগান সৈন্যরা তাদের প্রশিক্ষক আমেরিকানদের ওপর চড়াও হচ্ছেÑ তাই সেখানে নতুন করে সৈন্য পাঠালেও পরিস্থিতির কোন উন্নতি হবে না। এ বিষয়ে আফগানিস্তানের সমর বিশারদ ও কর্মকর্তাদের বক্তব্য হচ্ছে, পাকিস্তান যাতে আফগান বিরোধী জঙ্গীদের আশ্রয় প্রশ্রয় না দেয় সেজন্য যুক্তরাষ্ট্রের উচিত দেশটির ওপর চাপ সৃষ্টি করা। এ প্রসঙ্গে চলতি মাসে এক সম্মেলনে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ পরিচালনার জন্য পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করেন। তার এই অভিযোগে পাকিস্তানের সামরিক অধিনায়কগণ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আফগানদের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার জন্য তারা বিদ্রোহী সমস্যা সমাধান করতে পারছে না।
×