ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মে তুমি পদত্যাগ কর

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ১৮ জুন ২০১৭

মে তুমি পদত্যাগ কর

লন্ডনের ২৪ তলাবিশিষ্ট গ্রেনফেল টাওয়ারে অগ্নিকা-ের ঘটনায় উত্তেজিত লন্ডনবাসী শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে কে নানা প্রশ্নবানে জর্জরিত করে। এ ছাড়াও তারা স্থানীয় কাউন্সিল সদর দফতরে হামলা চালায় এবং তা তছনছ করে। প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে বৃহস্পতিবার এই এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে স্থানীয় জনতা বা ক্ষতিগ্রস্ত কারও সঙ্গে দেখা করেন নি। এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে তিনি পরদিন (শুক্রবার) ঘটনাস্থলে গেলে তাকে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। খবর ইন্ডিপেনডেন্ট ও এএফপির। তাকে কাপুরুষ, ‘ভীতু’ ও ‘শেম’ ‘শেম’ ধ্বনি দিয়ে উত্তেজিত জনতা ও স্বজনহারা মানুষ তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে। এ সময় তাদের কবল থেকে প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপদে স্থানত্যাগে সুযোগ করে দেয়ার জন্য পুলিশ কর্মকর্তারা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে হাতাহাতিতে লিপ্ত হয়। যারা অগ্নিকা-ে সব কিছু হারিয়ে পথে বসেছেন তাদের অনেককে স্থানীয় এক গীর্জায় থাকতে দেয়া হয়। এদের সঙ্গে দেখা করতে এসে প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে তাদের ৫০ লাখ পাউন্ড দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন যা খাদ্য বস্ত্র সাময়িক আবাসন ও অন্যান্য জরুরী প্রয়োজনে ব্যয় করা হবে। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতিতে উত্তেজিত জনতা শান্ত না হয়ে এত বড় একটি দুর্ঘটনায় সরকারের বিলম্বিত সাড়া দেয়ার কারণ জানতে চায়। তারা সেøাগান দেয় ‘গ্রেনফেল হত্যার বিচার চাই’ ‘মে তুমি পদত্যাগ কর’ ইত্যাদি। জনতার তীব্র ক্ষোভের মুখে টেরেসা গীর্জার অন্য একটি পথে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। যাওয়ার আগে তিনি তিন সপ্তাহের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের আবাসনের ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দেন। এদিকে সরকারের এই ব্যর্থতাকে কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধী লেবার পার্টি নেতা জেরেমি করবিন। রানী এলিজাবেথও তার নাতি প্রিন্স উইলিয়ামকে নিয়ে শুক্রবার এক কম্যুনিটি সেন্টারে অবস্থানরত বেশ কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ দেখতে যান। এ সময় বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবীদের মাঝে খাদ্য ও বস্ত্রের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়। এদিকে নিহত ও নিখোঁজের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। উদ্ধারকর্মীদের হিসেব মতে বর্তমানে নিহতের সংখ্যা ত্রিশে এসে দাঁড়িয়েছে। এদের অনেকে এমনভাবে পুড়ে গেছে যে কোনভাবেই শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া কমপক্ষে আরও ৭০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সব মিলিয়ে গ্রেনফেল টাওয়ারে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উপরের কয়েকটি তলাতে এখনও উদ্ধারকাজ বাকি রয়েছে। ট্রেনিংপ্রাপ্ত কুকুর ও ড্রোন দিয়ে লাশ উদ্ধারের কাজ অব্যাহত আছে। প্রথম প্রথম নিহতের এই সংখ্যা ১৭ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। বহু লোকের ২৪ তলাবিশিষ্ট এই আবাসস্থলে নিহতের সংখ্যা অনেক বেশি বলে আগেই ধারণা করা হয়েছিল তা সত্ত্বেও সরকারের পক্ষ থেকে গণরোষের ভয়ে হয়তো সংখ্যাটি কম করে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ৩৬ বছর বয়স্ক কারেন ব্রাউন বলেন, আমরা বোকা নই-আমরা জানি যে, কত লোকের এখানে মৃত্যু হতে পারে। হাসপাতালে আহত যে ২৪ জন চিকিৎসাধীন আছে তাদের ১২ জনের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। আহত ও প্রত্যক্ষদর্শীরা অগ্নিকা-ের ভয়াবহ ঘটনার বর্ণনা দেন। কেউ কেউ অগ্নিকা-ের সময় ধোঁয়ার ঘন কু-লিতে দম বন্ধ হয়ে মারা যায়, কেউ জানালা দিয়ে নিচে লাফিয়ে পড়ে এবং অনেকে নিজে বাঁচতে পারবে না জেনে নিজ সন্তানকে আগুনের হাত থেকে বাঁচাতে জানালা দিয়ে বাইরে ছুড়ে ফেলে দেয়। এখন সব কিছু ছাপিয়ে যে প্রশ্নটি সমান্তরালভাবে সকলের সামনে চলে এসেছে যে, গ্রেনফেল টাওয়ারে এত দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ল কেন? ২০০৯ সালে লন্ডনেই এ ধরনের বহুতল বিশিষ্ট ভবনে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে এবং মাত্র এক বছর আগে এই গ্রেনফেল টাওয়ারের সংস্কার ও সৌন্দর্য্যবর্ধন কাজে প্রায় এক কোটি দশ লাখ ডলার ব্যয় হয়। এর বহিরাবরণে প্লাস্টিক ও এ্যালুমিনিয়ম মিশ্রিত ধাতব আবরণ ছিল যা তাপ পরিবাহী ও দাহ্য পদার্থ। অনেকে মনে করেন এসব কারণে ভবনটি অতি দ্রুত মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়। বাহ্যিক চাকচিক্য ম-িত এ ধরনের বহুতল বিশিষ্ট মৃত্যু ফাঁদে আটকে পরে এর আগে ফ্রান্স, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও অস্ট্রেলিয়ায় বহু প্রাণহানি ঘটেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, ঘটে যাওয়া ঘটনা কিছুদিন অতীত হলে মানুষ ভুলে যায়Ñনতুন আরেকটি দুর্ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত।
×