ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক হ্রাসের আভাস অর্থমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১৫ জুন ২০১৭

ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক হ্রাসের আভাস অর্থমন্ত্রীর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংক আমানতের ওপর আরোপিত বর্ধিত আবগারি শুল্ক কমানোর আভাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, ব্যাংকে আমানত ও লেনদেনের ওপর আবগারি শুল্কের হার পরিবর্তন হতে পারে। এটি বাজেটে প্রস্তাব করা হয়েছে। এখনও বাজেট পাস হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলোচনা চলছে। আলোচনার পর বর্ধিত আবগারি শুল্কের হারে পরিবর্তন আনা হতে পারে। বুধবার সচিবালয়ে সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এটা নিয়ে আমানতকারীরা অস্বস্তিতে রয়েছেন। এ বাস্তবতায় আবগারি শুল্ক কত কমানো হবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে সংসদে বাজেট পেশ করা হয়েছে। সেখানে এটা নিয়ে সাংসদরা কথা বলছেন, বিবৃতি দিচ্ছেন। এখন এ বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। মুহিত বলেন, আবগারি শুল্ক নতুন কোন বিষয় নয়। এটি অনেক আগে থেকেই ছিল। কিন্তু এবারই প্রথম মানুষ এটার বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছে। আর এমনভাবে কথা হচ্ছে-যে এটা নতুন একটা জিনিস হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, দিজ ইজ ভেরি ইন্টারেস্টিং। এটাকে আবগারি বলেন, আর যাই বলেন, নতুন কিছুই না। এখন অবশ্য কেই কেউ বলছেন যে এটার রেইট বেড়েছে। প্রথমে তো মনে হলো যখন আপনার চিৎকার করতে শুরু করলেন এটা যেন সম্পূর্ণ নতুন একটা জিনিস হয়েছেÑ বাট নাথিং নিউ। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, এ শুল্ক আগেও ছিল। এবার বাজেটে এর হারটা মাত্র বাড়ানো হয়েছে। বাজেটে এ শুল্ক বহাল থাকবে কিন্তু রেট কমানো হতে পারে। সুতরাং শুল্ক পুরোপুরি তুলে দেয়ার কিছু নেই। গত মঙ্গলবার সংসদে অর্থ প্রতিমন্ত্রী আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, হি ইজ নট রেসপনসিবল পারসন। প্রতিমন্ত্রী ওই কথা বলার মতো দায়িত্বশীল অবস্থানে নেই। প্রসঙ্গত, গত ১ জুন জাতীয় সংসদে জাতীয় বাজেটে ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করার প্রস্তাব করার পর থেকেই দেশব্যাপী আলোচনায় আসে বিষয়টি। ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বছরের যে কোন সময় ব্যাংক হিসাবে এক লাখ টাকার বেশি স্থিতি থাকলে আবগারি শুল্ক বিদ্যমান ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করা হবে। একই সঙ্গে ১০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত এক হাজার ৫০০ টাকার বদলে দুই হাজার ৫০০ টাকা, এক কোটি থেকে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত সাত হাজার ৫০০ টাকার বদলে ১২ হাজার টাকা এবং পাঁচ কোটি টাকার বেশি লেনদেনে ১৫ হাজার টাকার বদলে ২৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। এদিকে সাধারণ নাগরিকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী, ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা আবগারি শুল্ক বাড়ানোর এ সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক মনে করেছেন না। তারা বলছেন, শুল্ক বাড়লে লেনদেনের অবৈধ মাধ্যম উৎসাহিত হবে। ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলীয় কয়েক সাংসদও জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। এরপর অর্থ প্রতিমন্ত্রী মান্নান মঙ্গলবার সংসদে এ বিষয়ে সরকারের উচ্চ মহলে চিন্তা-ভাবনা চলার কথা জানান। ওই সময় তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস, এ বিষয়ে আমরা একটা গ্রহণযোগ্য সমাধানে আসতে পারব। আমরা আশ্বস্ত করছি, এ সম্পর্কে এ মুহূর্তে সরকারের উচ্চ মহলে চিন্তা-ভাবনা চলছে। গত কয়েক দিনে সংসদের ভেতরে-বাইরে সমালোচনার বিষয়ে ইঙ্গিত করে মান্নান বলেন, আমাদের নেতৃত্ব, যিনি সরকার পরিচালনা করেন, আমাদের অর্থমন্ত্রী বোবা কালা নন। এরা জনগণের মধ্যে বসবাস করেন। জনসমাজে বসবাস করেন, এরা সংসদের নেতা।
×