ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আরেক ধাপ এগিয়ে টেরেসা মে

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ১৪ জুন ২০১৭

আরেক ধাপ এগিয়ে টেরেসা মে

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে মঙ্গলবার সরকার গঠন নিয়ে যুক্তরাজ্যের অতি রক্ষণশীল ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির (ডিইউপি) নেতা আরলিন ফস্টারের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর আগে শনিবার কনজারভেটিভ পার্টির চীফ হুইপ বেলফাস্টে ডিউপির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠকে বসার আগে সরকার গঠনে সমঝোতার কাজটি চূড়ান্ত করতে চান মে। এএফপি ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট। মে মঙ্গলবার একটি কঠিন দিন পার করেন। নির্বাচন পরবর্তী তার নতুন সরকার এখনও গঠিত হয়নি। এ অবস্থায় তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিদেশ সফরে যেতে পারছেন না। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে মে’র কনজারভেটিভ পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। দলটিকে এখন সরকার গঠনের জন্য নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের ডিইউপির ১০ জন এমপির সমর্থন প্রয়োজন। সরকার গঠন করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়ে আটটি কম আসন পেয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি। শনিবার দুই দলের বৈঠক শেষে মে’র মুখপাত্র জানান, ‘সরকার গঠনের বিষয়ে উভয় দলের মধ্যে নীতিগত সমঝোতা হয়েছে।’ বেলফাস্টে এদিন বৈঠক হয়। কনজারভেটিভ পার্টির চীফ হুইপ গ্যাভিন উইলিয়ামসন ও ডিইউপি নেতৃবৃন্দ বৈঠকে অংশ নেন। নির্বাচনে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন না পাওয়ায় ব্র্রেক্সিট বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার প্রশ্নে ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনায় বসা নিয়ে ব্রিটেনে রাজনৈতিক বিতর্ক দানা বাধতে শুরু করেছে। চলতি মাসের ১৯ তারিখ এই আলোচনা শুরুর কথা রয়েছে। আগাম সাধারণ নির্বাচন যে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল সে বিষয়ে দলের সিনিয়র নেতারা মে’কে আগেই সতর্ক করেছিলেন। মে যে উদ্দেশে আগাম নির্বাচনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন তার সুফল তিনি পানানি। এ নির্বাচনে দলের যেসব এমপি নিজেদের আসন হারিয়েছেন তাদের বিষয়ে মে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। সোমবার সন্ধ্যায় দলীয় এক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘দলকে জটিল অবস্থায় ফেলার জন্য আমিই দায়ী, এবং আমি দলকে এ থেকে বের করে আনব।’ কনজারভেটিভ নেতা মে তিন বছর বাকি থাকতেই আগাম নির্বাচনের ডাক দেন। তার লক্ষ্য ছিল নির্বাচনে আরও বেশি আসন পাওয়া গেলে তিনি বলিষ্ঠভাবে নেতৃত্ব দিতে পারতেন। এদিকে ডিইউপি নেতা আরলিন ফস্টার কনজারভেটিভ পার্টির সঙ্গে এ পর্যন্ত যতটুকু সমঝোতা হয়েছে তাকে ইতিবাচক বলে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি সোমবার বলেন, ‘জাতীয় স্বার্থের কথা বিবেচনায় রেখেই কনজারভেটিভ পার্টির সঙ্গে আমরা আলোচনা করছি।’ দুদলের মধ্যে সমঝোতা নিয়ে যেসব কথাবার্তা চলেছে সেটি ইতোমধ্যেই রাজনীতির মাঠ গরম করেছে। ডিইউপি দলটি গর্ভপাত ও সমকামী বিয়ের ঘোর বিরোধী। ডিইউপি- কনজারভেটিভ প্রস্তাবিত জোট গঠনের বিরুদ্ধে তিন দিনে ৭ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ এক আবেদনে স্বাক্ষর করেছে। তারা একে মে’র ক্ষমতা আকড়ে থাকার চেষ্টার মরিয়া চেষ্টা বলে নিন্দা করেছেন। আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী এন্ডা কেনিও প্রস্তাবিত সমঝোতার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন এটি উত্তর আয়ারল্যান্ডের ভঙ্গুর শান্তি প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে। তিনি রবিবার টেলিফোনে মে’কে বলেছেন ডিইউপিকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠনের চেষ্টা ১৯৯৮ সালের গুড ফ্রাইডে সমঝোতাকে বিপন্ন করতে পারে। লন্ডনের নিরপেক্ষতার নীতি উত্তর আয়ারল্যান্ডের ক্ষমতার ভারসাম্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটেনের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা নিয়ে প্রদেশটিতে অতীতে বহু রাজনৈতিক হানাহানি হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মাইকেল ফ্যালন বলেছেন, ডিউপির সঙ্গে তারা কোন আনুষ্ঠানিক কোয়ালিশন করছেন না। তারা চান ডিউপি কেবল গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সরকারকে সমর্থন দিক। ডিইউপি ব্রেক্সিট সমর্থন করে কিন্তু রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে সীমান্ত একেবারে বন্ধ করে দেয়ার বিরোধী। ইইউ থেকে বেরিয়ে এলেও সরকার যেন জোটের সঙ্গে পুরোপুরি সম্পর্ক ছেদ না করে সে উদ্দেশে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারা গোপনে লেবার পার্টির সঙ্গে কথা বলছেন বলে জানা গেছে। তারা চান মে যেন অভিবাসী, কাস্টম ইউনিয়ন ও একক মুদ্রা বাজারের বিষয়ে আরও ছাড় দেন, এ বিষয়ে তাকে রাজি করাতে চেষ্টা করা। নির্বাচনের আগে ৬৫০ আসন বিশিষ্ট কমন্স সভায় কনজারভেটিভ পার্টির আসন সংখ্যা এখন ৩১৮। দু’বছর আগে হওয়া নির্বাচনে তারা ৩৩১ টি আসন পেয়েছিল। অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি গত নির্বাচনে আসন পেয়েছিল ২৩২ টি, এবার ২৬২ টি। মে’র দুঃখ প্রকাশ গত সপ্তায় অনুষ্ঠিত ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর দায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে নিজ দলের সাংসদদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে। সরকারী দায়িত্বে নেই, দলের এমন এমপিদের সঙ্গে সোমবার এক বৈঠকে নির্বাচনে ব্যর্থতার জন্য তিনি ক্ষমা চান। বৈঠকে আগাম নির্বাচন ডাকার দায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে এতে দলের যে ক্ষতি হয়েছ তা পুষিয়ে দেয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন মে। এমপিদের বলেছেন, ‘আমি এই বিপর্যয়ে ফেলেছি, আমিই উদ্ধার করব।’ দলের এমপিরা যতদিন চাইবে ততদিনই তিনি দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানিয়েছেন ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল কনজারভেটিভ পার্টির (টোরি) বর্তমান প্রধান। দেড় ঘণ্টার এই বৈঠকে মে’কে অনুতপ্ত ও আন্তরিক দেখা গেলেও তিনি ভেঙ্গে পড়েননি বলে বৈঠকে উপস্থিত এক জ্যেষ্ঠ পার্লামেন্ট সদস্য জানিয়েছেন।
×