ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পদত্যাগের চাপে টেরেসা মে

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ১০ জুন ২০১৭

পদত্যাগের চাপে টেরেসা মে

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে এ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য ব্রেক্সিট আলোচনা এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছেন। এ প্রেক্ষিতে বিরোধীদলীয় নেতা লেবার পার্টির জেরেমি করবিন তাকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তিনি (টেরেসা মে) জন সমর্থন হারিয়েছেন, ভোটে হেরেছেন এবং জনগণের আস্থা হারিয়েছেন। করবিন আরও বলেন, টেরেসা মে আগাম নির্বাচন করেছেন তার ও দলের অবস্থান সুসংহত করার জন্য যাতে তিনি শক্ত অবস্থানে থেকে ব্রেক্সিট আলোচনায় প্রাধান্য বিস্তার করতে পারেন। কিন্তু এই বিপর্যস্ত নির্বাচনী ফলাফলে তিনি বড়জোর একটি ঝুলন্ত পার্লামেন্ট দেবেন। আগের চেয়ে তার (টেরেসার) অবস্থান নড়বড়ে হয়ে যাওয়ায় তার পদত্যাগ করাই সমীচীন হবে। জেরেমি করবিন আরও বলেন, ‘তার জায়গায় হলে, দেশে একটি সত্যিকারের জন প্রতিনিধিত্বকারী সরকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আমি পদত্যাগ করতাম। এদিকে সর্বশেষে নির্বাচনী ফলাফলে দেখা গেছে, (অন্যান্য দলের হিসেবে বাদ দিয়ে) টেরেসার রক্ষণশীল দল পেয়েছে ৩১৫টি এবং জেরেমি করবিনের লেবার পার্টি পেয়েছে ২৬১টি আসন। হিসেবে করে দেখা গেছে, আর যে কটি আসনের ভোট গণনা চূড়ান্ত হয়নিÑ সেগুলো যোগ করলেও টেরেসা মের দল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাবে না। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্য ইনডিপেন্ডেস পার্টির (ইউকিপ) নেতা পল নাটাল বলেন, টেরেসা মে ব্রেক্সিটকে পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। বিবিসির রাজনৈতিক ভাষ্যকার ‘লরা কুয়েনসবার্গ’ টেরেসা মের আগাম নির্বাচন দেয়ার সিদ্ধান্তকে আধুনিক কালের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ভুল বলে বর্ণনা করেছেন। এসব সমালোচনার জবাবে টেরেসা মে বলেছেন, তার দল যুক্তরাজ্যে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে কেননা বর্তমানে সবকিছুর আগে প্রয়োজন দেশের স্থিতিশীল পরিবেশ। এদিকে জার্মান রেডিওকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজেট কমিশনার ‘গুন্টার ওয়েটিংগার বলেছেন, ‘নির্ধারতি সময় অনুযায়ী এ মাসের শেষদিকে ব্রেক্সিট আলোচনা শুরু হবে কি নাÑসে ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত ননÑকেননা আলোচনায় যুক্তরাজ্যের দুর্বল প্রতিপক্ষ থাকলে ফলাফল আশাব্যঞ্জক হবে না।’ এদিকে রক্ষণশীল দলের ফলাফল বিপর্যয়ে যুক্তরাজ্যের মুদ্রাবাজারে ওঠানামা শুরু হয়েছে। বিবিসির অর্থনীতি বিশ্লেষক কামাল আহমেদ বলেছেন, একটি ঝুলন্ত পার্লামেন্টের দেশে বিনিয়োগকারীরা লগ্নি করতে সাহস পান নাÑতাই ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের দাম দুই-শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, দুইদিন আগেও যারা টেরেসা মের ‘ল্যান্ডসøাইড’ বিজয় হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেনÑতারা রীতিমতো চুপসে গেছেন। অকল্পনীয় এই ফলাফলে সকালে প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলোর শিরোনাম ছিলÑ‘চোরার ডগায় ব্রিটেন’, ‘মহাবিপর্যয়’ এবং ‘সুতার ওপর ঝুলন্ত’ (পার্লামেন্ট)। সবকিছু ছাপিয়ে একটি প্রশ্ন জনমনে বারবার ঘুরেফিরে আসছে যে, সবকটি জনমত জরিপে যেখানে টেরেসাকে শীর্ষস্থানে অবস্থান করতে দেখা গেছে, সেখানে এমন বিপর্যয়ের কারণ কী? এ ব্যাপারে অনেকে মনে করেন, নির্বাচনের আগেভাগে ম্যানচেস্টার কনসার্ট ও লন্ডন ব্রিজে পরিচালিত সন্ত্রাসী হামলাকারীরা পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর তালিকাভুক্ত আসামি হওয়া সত্ত্বেও তাদের মুক্ত অবস্থায় চলাচল করতে দেয়াÑতাদের আইএস জঙ্গীদের সঙ্গে ভিডিও চিত্র থাকা সত্ত্বেও সামান্যতম নজরদারিতে না রাখাÑএকটি মার্জনাহীন নিরাপত্তা শৈথিল্য ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ যার দরুন ম্যানচেস্টার কনসার্টে ২২ জন এবং লন্ডন ব্রিজে ৮ জন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এছাড়াও টেরেসা মে বয়োবৃদ্ধদের জন্য গঠিত তহবিলে সংস্কার আনার যে পরিকল্পনা করেন তাও অনেকের মনঃপূত হয়নি। তদুপরি টেরেসা মের চালচলন ও হাবভাবে সম্প্রতি উন্ন্যাসিক আচরণ প্রকাশ পেয়েছে উৎকটভাবে। ‘তিনি সব পারেন, সব জানেন, ব্রেক্সিট আলোচনায় তিনি বাজিমাত করে দেবেন’Ñএমন সব কথাবার্তা তিনি প্রায় সময়ই বলতেন। সেই সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে হেনস্তা বা ব্যক্তিগত আক্রমণের সুযোগ পেলে টেরেসা কখনও তা হাতছাড়া করতেন না। একবার তিনি জেরেমি করবিনকে এতটাই আনাড়ি বললেন যে, ব্রেক্সিট নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ইউরোপীয় সম্মেলন কক্ষের বাঘা বাঘা কূটনীতিকদের সামনে তার কাপড় খুলে পরবে (নগ্ন হয়ে যাবেন)। তার এসব কথা ও বাগাড়ম্বর ব্রিটেনের ভোটারগণ খুব সহজভাবে নেয়নি। যদিও এবারের আগাম গণভোট ছিল ব্রেক্সিট কেন্দ্রীয় এবং ব্রিটেনের জনগণ ব্রেক্সিটের পক্ষেই গণভোট দিয়েছিলÑতবু তারা হয়তো চায়নি যে, এ কাজটি টেরেসা মের নেতৃত্বে সমাধা হোক। Ñএএফপি ও বিবিসি।
×