ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকৃতিতে ভারসাম্যহীনতা

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১ জুন ২০১৭

প্রকৃতিতে ভারসাম্যহীনতা

আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে গাছ-পালা, লতা-পাতা, জীব-জন্তু, পশু-পাখি, কীটপতঙ্গ, নদী-নালা, খাল-বিল- তা-ই প্রকৃতি (‘প্র’ ও ‘কৃতি’- প্র এর অর্থ হলো উৎকর্ষ ও আরম্ভ; কৃতি এর অর্থ হলো কৃত, রচিত, সম্পাদিত, বিহিত ও উপযুক্ত)। প্রকৃতি হলো সকল কিছুর উৎস, সবকিছুর পরিসমাপ্তি ঘটে প্রকৃতিতেই। মানবদেহে যে প ভূত রয়েছে- ক্ষিতি, অপ্, তেজঃ, মরুৎ ও ব্যোম- সে প ভূতও প্রকৃতি সঞ্জাত। এই প্রকৃতিই আমাদের ধারক ও বাহক এবং এখান থেকেই আহরিত ও সংগৃহীত হয় জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় সবকিছু। এক কথায় বলা যায় মানুষের পরম উপকারী বন্ধু হলো এই প্রকৃতি। কিন্তু আমরা আমাদের স্বার্থপরতা, লোভ, সম্পদ বৃদ্ধির অত্যধিক আকাক্সক্ষা ও ভোগবিলাসিতার তাড়নায় প্রকৃতির যতেœর পরিবর্তে ধ্বংস করছি। মানব সৃষ্ট করাতের তীক্ষè আঘাতে উজাড় হয়ে যাচ্ছে বনাঞ্চল, বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে চেনা-অচেনা অসংখ্য পশু-পাখি, বৃক্ষরাজি, কীট-পতঙ্গ। সূর্য যখন তার শেষ বিকেলে রক্তিম আলো ছড়িয়ে অস্তে ডুবে যায়, আধার ঘনিয়ে রাত নামে, তখন শোনা যায় না আর ঝিঁঝিঁ পোকার মন আকুল করা শব্দ, পরিবর্তে শোনা যায় শুধু কলকব্জার আর্তচিৎকার; মন-প্রাণ জুড়ানো দক্ষিণা মলয়ের জায়গায় স্থান করে নিয়েছে শো শো শব্দে ঘূর্ণায়মান বৈদ্যুতিক পাখার উত্তপ্ত হাওয়া। প্রকৃতির মধ্যে এখন বিরাজ করছে ভারসাম্যহীন অবস্থা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশকে আর ষড়ঋতুর দেশ বলে আখ্যা দেওয়াও এখন দুষ্কর। বরং সাম্প্রতিককালের তাপমাত্রার প্রকোপ দেখে বাংলাদেশের জলবায়ুকে নাতিশীতোষ্ণ না বলে উষ্ণ জলবায়ু বললেও অত্যুক্তি হবে না। কেননা এর সত্যটা আমরা গত কয়েকদিন যাবত পেয়ে যাচ্ছি। দেশের তাপমাত্রা পূর্ব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গরমে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে দুঃসহ জীবন যাপন করছে। এ সময়ে নগরজীবন যেন আরও বিভীষিকাময় : অনবরত লোডশেডিং, গ্যাস সঙ্কট, নিরাপদ খাবার পানির অভাব, মশার উপদ্রব, প্রচ- গরমে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব ইত্যাদির সঙ্গে অবিরত যুদ্ধ করতে হয়। অন্যদিকে, এ গরমে শ্রমজীবী মানুষেরা আরও বেশি কষ্টে থাকে। সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি মানব শরীরে জন্য ক্ষতিকর হলেও শরীরে জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা না নিয়ে এসব শ্রমজীবী মানুষদের মাঠে কাজ করতে যেতে হয় পেটের দায়ে। তাই, এসব সমস্যা মাথায় রেখে প্রকৃতি-পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় আশু পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যাবশ্যকীয়। এর জন্যে বেশি বেশি উপকারী গাছ লাগানো জরুরী। কার্বণ নিঃসরণ রোধে জীবাশ্ম জ্বালানি দ্বারা চালিত যানবাহনের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব মোটর-গাড়ি ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া আবশ্যক। শহরগুলোতে বহুতল ভবনের ছাদগুলোতে বাগান করার পরিকল্পনা রাখা হলে একদিকে যেমন দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ তৈরি হবে, অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা করা হবে। এছাড়াও বাংলাদেশে এখনও যে পরিমাণ বনাঞ্চল রয়েছে তা রক্ষা ও বৃদ্ধির জন্যে সরকারের পক্ষ থেকে শক্তিশালী নিয়ম ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। কেননা, আমরা চাইব না এই পরিবেশ, এই বৃক্ষরাজি ধ্বংস হয়ে যাক। আসুন প্রকৃতিকে ভালবাসি, তাকে যতœ করি, নিজ সত্তার মতো প্রেম-যতেœ তাকে ভরিয়ে দেই। তাহলে প্রকৃতিও আমাদের তার ভালবাসার আঁচলে বেধে রাখবে, আর এভাবে দুঃসহ গরমে জীবন অতিষ্ঠ হবে না, ভারসাম্য ফিরে আসবে পরিবেশে, অতিবৃষ্টির ফলে অকালে হাওড় অঞ্চল বন্যায় ভেসে গিয়ে ফসলের ক্ষতি হবে না, শ্রমজীবী মানুষের মুখজুড়ে দেখা যাবে আনন্দের হাসি, আর আমরাও আমাদের সন্তানদের জন্য রেখে যেতে পারব একটি সুন্দর ও প্রকৃতিসঞ্জাত পৃথিবী। ভালুকাপাড়া, ময়মনসিংহ থেকে
×