ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মোরার আঘাতের পর ভারি বর্ষণ চট্টগ্রামে ॥ তিন কারণে মহাবিপর্যয় ঘটেনি

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১ জুন ২০১৭

মোরার আঘাতের পর ভারি বর্ষণ চট্টগ্রামে ॥ তিন কারণে মহাবিপর্যয় ঘটেনি

মোয়াজ্জেমুল হক/হাসান নাসির ॥ গত মঙ্গলবার মহাবিপদের ১০ নম্বর সঙ্কেত নিয়ে বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা।’ আবহাওয়া অফিস থেকে মহাবিপদের সতর্ক সঙ্কেত ঘোষণা করার পর শুধু উপকূল নয়, দেশজুড়ে সৃষ্টি হয়েছিল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। প্রশাসনও নড়েচড়ে বসেছিল। সংশ্লিষ্ট সবকটি সংস্থা ঘূর্ণিঝড়পূর্ব সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পন্ন করে। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার মানুষও ইতোপূর্বেকার চেয়ে বেশি পরিমাণে সচেতনতা গ্রহণ করে। লাখ লাখ মানুষ চলে যায় স্ব স্ব এলাকার আশ্রয় কেন্দ্রে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, মহাবিপদের ১০ নম্বর সঙ্কেত নিয়ে ঘূর্ণিঝড় মোরা আঘাত হানলেও নির্দিষ্ট কয়েকটি কারণে মহাবিপর্যয় ঘটেনি। তবে বৃহত্তর চট্টগ্রামে কাঁচা বাড়িঘর ও বনজ সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়ে গেছে। এদিকে মঙ্গলবার মোরার আঘাত শেষে শুরু হয় চট্টগ্রাম এলাকাজুড়ে ভারী বর্ষণ। জলজটে সয়লাব হয়ে যায় চট্টগ্রাম মহানগর। মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে ঘূর্ণিঝড় মোরা আঘাত হানে কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপকে কেন্দ্র করে। এরপর এটি টেকনাফ, কক্সবাজার, কুতুবদিয়া, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি হয়ে অতিক্রম করে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়। ঘূর্ণিঝড়পূর্ব সর্বত্র যে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছিল তা ইতোপূর্বে যেসব ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে আঘাত হেনেছিল এর ভয়াবহতার কারণে। এবার কিন্তু তা হয়নি। সতর্কবার্তা ছিল ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত। উপকূলে ৪ থেকে ৫ ফুট জলোচ্ছ্বাস হওয়ার আশঙ্কার কথাও ঘোষিত হয়েছিল। সকালে ঘূর্ণিঝড় যখন সেন্টমার্টিন উপকূল থেকে আঘাত শুরু করে ঠিক তখন থেকেই আতঙ্কও বাড়তে থাকে। এ জাতীয় ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ অতীতে ঘণ্টায় আড়াইশ’ কিলোমিটারেরও বেশি ছিল। কিন্তু এবার তা সর্বোচ্চ ১৪৬ কিলোমিটারের ওপরে যায়নি। কোথাও কোথাও ৮০, ৯০, ১০০, ১২০, ১২৫ কিলোমিটারও ছিল। মানুষের ধারণা প্রোথিত হয়েছিল অতীতের ঘূর্ণিঝড়ের মতো এবারও সর্বনাশা ঘটনা ঘটবে। জলোচ্ছ্বাস আর প্রাণহানি নিয়ে মানুষের দুর্ভাবনার অন্ত ছিল না। বৃহত্তর চট্টগ্রামের উপকূল এলাকা ছিল ঘূর্ণিঝড় মোরার মূল টার্গেট। টেকনাফ হয়ে এটি সরাসরি চট্টগ্রাম অতিক্রম করার পূর্বাভাস আগে থেকেই দেয়া হয়েছিল এবং সেভাবেই এটি আঘাত হেনেছে এবং অতিক্রমও করেছে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় চলাকালে বাতাসের গতিবেগ সর্বোচ্চ ১৪৬ কিলোমিটার অতিক্রম করতে পারেনি। আর সাগরের পরিস্থিতিও ছিল ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির প্রতিকূলে। অর্থাৎ ঘূর্ণিঝড় যখন ছয় ঘণ্টা ধরে চট্টগ্রাম উপকূলে তা-ব চালাচ্ছিল তখন ছিল পুরোপুরি ভাটা। আর ঘূর্ণিঝড়টি যখন স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয় তখন শুরু হয় জোয়ার। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত নিয়ে ঘূর্ণিঝড় মোরা নিঃসন্দেহে সকলের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। মঙ্গলবার এটি কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করেছে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না ঘটিয়ে। এতে করে উপকূলে স্বস্তি এসেছে। ঘূর্ণিঝড়টি যে মাত্রায় আঘাত হানার কথা ছিল তা হয়নি। জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়নি উপকূল। প্রধানত তিনটি কারণে ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাত দুর্বল হয়েছে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদগণ। তন্মধ্যে প্রধান হলো প্রাক-বর্ষা। চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, এ প্রধান তিনটি কারণ হলোÑ ঘূর্ণিঝড়ের সময় সাগরে ভাটার টান, অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথি না থাকা এবং বর্ষা ঋতু অতি সন্নিকটে থাকা। মহাবিপদ সঙ্কেত জারি থাকলেও ভোরে যখন ঘূর্ণিঝড় স্থল অতিক্রম করতে শুরু করে তখন ভাটা থাকায় সাগরের পানি ছিল নি¤œমুখী। সর্বোচ্চ ১৪৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হলেও তা ভাটায় সাগরমুখী পানিকে উজানে তুলে আনার মতো শক্তিসম্পন্ন ছিল না। এতে করে রক্ষা পেয়েছে উপকূলবাসী, যদিও স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস ছিল। চাঁদের তিথি অনুযায়ী প্রতিমাসে দুইবার ভরাকাটাল জোয়ার হয়ে থাকে। তিথি দুটি হলো অমাবস্যা এবং পূর্ণিমা। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল যে ভয়াল ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল সে রাতটি ছিল পূর্ণিমার। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও তাই রাতটা ছিল অনেকটাই আলোকিত। রাতের রক্তিম আকাশ দেখে ভয় পেয়েছিল সাধারণ মানুষ। কিন্তু মোরার আঘাতের দিন অর্থাৎ ৩০ জুন মঙ্গলবার পূর্ণিমা কিংবা অমাবস্যা কোনটিই ছিল না। ফলে সে প্রকৃতির এ সহায়তা পায়নি। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত দুর্বল হওয়ার আরেকটি কারণ বর্ষা মৌসুম একেবারে সন্নিকটে থাকা। মঙ্গলবার ছিল জৈষ্ঠ্য মাসের ১৬ তারিখ। তার মানে বর্ষা আসতে আর মাত্র দুই সপ্তাহ বাকি। এ সময়ের মধ্যে সাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলেও তা সাধারণত বৃষ্টিপাতে রূপ নেয়। স্থল নি¤œচাপ হয়ে তা প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে স্থল অতিক্রম করে থাকে। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আবহাওয়াবিদ শেখ ফরিদ আহমদ জনকণ্ঠকে জানান, একটি ঘূর্ণিঝড়ের যে বৈশিষ্ট্য থাকলে ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়, তার সকল বৈশিষ্ট্যই ছিল মোরার। সে কারণে এ সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছিল, যা শতভাগ ঠিক আছে। কিন্তু প্রবল শক্তি নিয়ে আঘাত না হানার প্রধান কারণ হলো, মনসুন এর মধ্যেই চলে এসেছে। সাধারণত দুটি সময়ে ঘূর্ণিঝড় খুব প্রবল হয়ে থাকে। একটি হলো মার্চ থেকে মের আগ পর্যন্ত এবং আরেকটি হলো বর্ষা ঋতু শেষ হয়ে যাওয়ার পর। যে ঘূর্ণিঝড়টি হয়েছে তা একেবারেই আগেও নয়, আবার বর্ষার পরেও নয়। এটিকে প্রাক মনসুন বলা হয়ে থাকি। এ সময়ে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় সাধারণত প্রবল শক্তি সঞ্চয় করতে পারে না। তাছাড়া স্থলে হিট করার সময় যদি সাগরের জোয়ার থাকে তাহলে সে ৪ থেকে ৫ গুণ উচ্চতায় স্থলভাগকে প্লাবিত করে। কিন্তু জোয়ার না পাওয়ায় মোরার পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। আবহাওয়া দফতর জানায়, ঘূর্ণিঝড়টির শক্তি ছিল মাঝারির চেয়ে একটু বেশি। তবে একেবারে তীব্র ক্ষমতার নয়। সতর্কতা কিংবা বিপদ সঙ্কেত সম্পর্কে আবহাওয়াবিদ জানান, ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত মানে এই নয় যে, এটি প্রচ- ক্ষমতায় সবকিছুকে তছনছ করে দেবে। বরং ৮, ৯ এবং ১০ এ তিনটি সঙ্কেতই একই শক্তিসম্পন্ন। ঘূর্ণিঝড় যদি বন্দরকে বাম পাশে রেখে ধাবিত হয় তাহলে সঙ্কেত হবে ৮ নম্বর। আর যদি তা বন্দরকে ডান পাশে রেখে ধাবিত হয় তাহলে সঙ্কেত হবে ৯। ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ যদি সরাসরি বন্দর বরাবর হয়ে থাকে তাহলে দিতে হয় ১০ নম্বর বিপদ সঙ্কেত। এই সঙ্কেতগুলো মূলত গতি পথের ইন্ডিকেটর মাত্র। কত শক্তির ঘূর্ণিঝড় তা মুখ্য বিবেচ্য নয়। এছাড়া মঙ্গলবার মোরার ক্ষয়ক্ষতি কম হওয়ায় আরেকটি বড় কারণ ছিল প্রশাসনের পূর্ব প্রস্তুতি। বাংলাদেশ এর মধ্যেই দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষমতা এবং বেশ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নি¤œচাপ হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হওয়ার পরই দ্রুত যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ এবং কার্যকর করতে তৎপর হয় প্রশাসন, রেড ক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিস এবং স্থানীয় সরকারের বিভাগগুলো। অতি দ্রুততার সঙ্গে পর্যাপ্তসংখ্যক শেল্টার স্থাপন করে তাতে সরিয়ে আনা হয় লক্ষাধিক মানুষকে। উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং ছিল বেশ জোরদার। যারা আসতে চায়নি তাদেরও নানাভাবে নিয়ে আসা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্রে। ফলে বৃহত্তর চট্টগ্রামে অন্তত ২০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত এবং অসংখ্য গাছপালা ভেঙ্গে পড়লেও ঘর কিংবা গাছচাপা হতাহতের ঘটনা উল্লেখ করার মতো নয়। এদিকে, ঘূর্ণিঝড় মোরা অতিক্রমের পর মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে প্রবল বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর নি¤œ এলাকা এবং মফস্বলের প্রত্যন্ত অঞ্চল। একটানা বর্ষণে ডুবে যায় নিচু সড়কগুলো। এতে করে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সাময়িকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। বুধবার রাতভর বৃষ্টি হয়, সকালেও তা অব্যাহত ছিল। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ২২৫ দশমিক ২ মিলিমিটার। নি¤œচাপ কেটে গেলেও সমুদ্র বন্দর ও নদী বন্দরসমূহের জন্য সতর্কতা সঙ্কেত এখনও বহাল রয়েছে। তবে এর ফলে ফের ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির মতো আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। যেহেতু মনসুন শুরু হয়ে গেছে, সেহেতু এখনকার নি¤œচাপগুলো ধাপে ধাপে বৃষ্টিপাত বাড়াবে। এ ধরনের লঘুচাপ কিংবা নি¤œচাপকে আবহাওয়াবিদগণ দেখছেন বর্ষার আগমনী বার্তা হিসেবে। এখানে প্রাসঙ্গিকক্রমে উল্লেখ করা যায়, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, খরা ইত্যাদি নিয়েই বিশ্বে নদীমাতৃক বাংলাদেশের পরিচিতি। দেশটির উপকূলীয় অর্থাৎ টেকনাফ থেকে খুলনা পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকার মানুষ নিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং সমতলের মানুষ বন্যা, খরা, মঙ্গা ইত্যাদির সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত। এ ক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে জলোচ্ছ্বাসের ক্ষয়ক্ষতির বেশি ঘটনা ঘটে উপকূলীয় বেল্টে। প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল সাইক্লোনে সৃষ্ট মহাবিপর্যয়ের ঘটনার পর প্রতিটি ঘূর্ণিঝড় বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করা হয়ে আসছে। বিষয়টি উত্তর ভারত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড়প্রবণ ৮টি দেশ তথা বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং ওমান নিয়ে। ২০০৪ সাল থেকে এ জাতীয় ঘূর্ণিঝড়ের প্রতিটির নামকরণ করা হয়ে আসছে। যার মধ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছে এমন কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘূর্ণিঝড়ের নাম সিডর, আইলা, ক্যাটরিনা, নার্গিস ইত্যাদি। আগামীতে এ অঞ্চলভিত্তিক যে ঘূর্ণিঝড় হবে তার নামকরণ করা হয়েছে ‘অক্ষি’। মোরা পরবর্তী ভারী বর্ষণ এদিকে, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত মোরার আঘাত শেষে শুরু হয় চট্টগ্রাম এলাকাজুড়ে ভারি বর্ষণ। সন্ধ্যার আগে এবং সন্ধ্যার পরে, গভীর রাতে এমনকি বুধবার সকালেও ব্যাপক বর্ষণ হয়ে জলজটে সয়লাব হয়ে যায় চট্টগ্রাম মহানগরী। বিশেষ করে আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা, আবাসিক এলাকা, চকবাজার, বাকলিয়া, মুরাদপুর, চান্দগাঁও, ষোলশহরসহ অপেক্ষাকৃত নি¤œাঞ্চলগুলোর কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর পানিতে একাকার হয়ে যায়। জনজীবন স্তব্ধ হয়ে যায়। যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আবাসিক বাড়ি ঘরে পানি প্রবেশ করে গৃহস্থালি জিনিসপত্রের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মূল কারণ হিসেবে জানা গেছে, একদিকে ভারী বর্ষণ, অপরদিকে সাগর থেকে আসা পূর্ণ জোয়ারের পানিতে শহর এলাকার বিভিন্ন স্থান সয়লাব হয়ে যায়। বর্ষণের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সর্বনি¤œ পর্যায়ে থাকার কারণে বর্ষা মৌসুম আসার আগ থেকেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে আসছে। বছর বছর এ ধরনের ঘটনায় ক্ষতির শিকার হয়ে চট্টগ্রামের মানুষ রীতিমতো অতিষ্ঠ। ঘটনা ঘটলেই বিভিন্ন আশ্বাস আসে। কিন্তু বাস্তবে তা কার্যকর হয় না। বিপুল অঙ্কের অর্থ প্রতিবছর ব্যয় করা হচ্ছে। কিন্তু জলজট সমস্যার উন্নতি নেই। এর ফলে প্রতি বর্ষা মৌসুমে নতুন নতুন এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে, যা নগরবাসীর জন্য দুঃখ ও চরম হতাশাজনক। সিটি কর্পোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এ সমস্যা নিরসনের জন্য দায়িত্বে থাকলেও তাদের পক্ষ থেকে নানা আশ্বাসের কথা শোনানো হয়। কিছু কিছু কাজ দৃশ্যমানও হয়। কিন্তু জলজট সমস্যার নিরসন হয় না। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ভয়াবহ জলজটের যে পরিস্থিতি দৃশ্যমান হয়েছে তা অতীতের চেয়ে অনেক বেশি। এতে শুধু ক্ষতিই ডেকে আনছে। নগরীর মানুষ হতাশার অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হচ্ছে জলজটের সঙ্গে।
×