ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আতঙ্কের নাম বাংলাদেশ!

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ৩১ মে ২০১৭

আতঙ্কের নাম বাংলাদেশ!

কেনিংটন ওভাল, ঠিক ১২ বছর আগে প্রথম ও শেষবার এ ভেন্যুতে খেলেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সেটা একেবারেই ভাল কোন স্মৃতি নয়। ১০ উইকেটে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের কাছে বিধ্বস্ত হয়েছিল। আর ১১ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ফিরছে বাংলাদেশ। ১ জুন, এই কেনিংটন ওভালে ফেরার পাশাপাশি আবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অভিযান শুরু করবে টাইগাররা। এই ১২ বছরে আকাশ-পাতাল ফারাক তৈরি হয়েছে। তখন বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের ১০ নম্বর দল। অবশ্য খুব বেশি দেরি হয়নি, দীর্ঘদিন ৯ নম্বরে ছিল ক্রমোন্নতির দিকে থাকা দলটি। ৯ নম্বর থেকে এখন ৬ নম্বর হয়ে গেছে মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে। এবার বিশ্বের ষষ্ঠ দল হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলবে। কেনিংটন ওভালেই আবার যাত্রা শুরু হবে নতুন করে। অনেকেই মনে করছেন এ আসরের ডার্ক হর্স এবার বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক সময়ে টাইগারদের নৈপুণ্য সবার বিশেষ নজর কেড়েছে দলটি। ঘটাতে পারে যে কোন কিছুই। আর বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক ও ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন এবং ইংল্যান্ডের সাবেক স্পিনার এ্যাশলে জাইলস মনে করছেন সেমিফাইনাল খেলবে এবার টাইগাররা। টানা কয়েকটি সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। গত বছর সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে শুরুর পর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেও ঘরের মাটিতে খেলে। এরপর ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফর ও মার্চ-এপ্রিলে শ্রীলঙ্কা সফরে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ দল। মাঝে একমাত্র টেস্ট খেলতে ভারত সফরও করেছে। এই সিরিজগুলোতে জয়-পরাজয়ের সমান অভিজ্ঞতাই অর্জন করেছে টাইগাররা। আয়ারল্যান্ড সফরে ত্রিদেশীয় সিরিজ বাড়তি এক মাত্রা যোগ করেছে। মাশরাফির নেতৃত্বে এই সিরিজে আয়ারল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডকে পরাস্ত করে প্রথমবারের মতো র‌্যাঙ্কিংয়ের ৬ নম্বরে উঠেছে টাইগাররা। এ সিরিজে মূল চ্যালেঞ্জ ছিল আগামী ১ জুন ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের জন্য প্রস্তুত হওয়া। সেটা ভালভাবেই হয়েছে। তার চেয়ে বড় কথা আরও উঁচু স্থানে পৌঁছে তবেই টুর্নামেন্টে এসেছে বাংলাদেশ। বিশ্বের শীর্ষ আটটি দলের টুর্নামেন্টেও দুই দল বাংলাদেশের নিচে এবার! দুই সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের পেছনে। এমনকি তিনবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ এ টুর্নামেন্টেই খেলার সুযোগ পায়নি বাংলাদেশের উত্থানে। ওয়ানডে ক্রিকেটে বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর দলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। এর প্রমাণ ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে বেশ ভালভাবেই দিয়েছে। ঘরের মাটিতে একেবারেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা দলটি সিরিজ জিতেছে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী দলগুলোর বিরুদ্ধে। এরও আগে নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেয়েছে। ২০১৫ সাল ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে সাফল্যে মোড়ানো বছর। এ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভাব ঘটে পেস বিস্ময় মুস্তাফিজুর রহমানের। তার দুর্দান্ত নৈপুণ্য এবং মাশরাফির যোগ্য নেতৃত্বে সুসংবদ্ধ বাংলাদেশ দল একে একে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়ে দেয় তিন ক্রিকেট পরাশক্তি পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে। এ তিনটি জয়ের মাধ্যমে আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রথমবারের মতো ৭ নম্বরে উঠে আসে বাংলাদেশ দল। এ তিনটি সিরিজের আগে বিশ্বকাপে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা এবং বিশ্বকাপের আগে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে শতভাগ জয় পাওয়াটাও কার্যকর ভূমিকা রাখে। আর সবগুলোই এসেছে মাশরাফির অধীনে। কোচ চান্দিকা হাতুরাসিংহেও দলকে গুছিয়ে নিয়েছেন দারুণভাবে। এ বছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার জন্য আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আট দলের মধ্যে থাকতে হতো। আর সেটা ২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ঘোষিত র‌্যাঙ্কিং অনুসারে। টাইগারদের ঈর্ষণীয় নৈপুণ্য বিষয়টি নিশ্চিত করে ভালভাবেই। বিশ্বের সেরা আটটি দলের একটি হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলা নিশ্চিত করে ৭ নম্বরে থেকে। সেই অবস্থান ধরে রেখে নিয়মিতই ভাল খেলে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। সেটার পুরস্কার পেয়েছে এবার ত্রিদেশীয় সিরিজ শেষে র‌্যাঙ্কিংয়ের ৬ নম্বরে উঠে। ১ জুন শুরু হবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। চলবে ১৮ জুন পর্যন্ত। গত দুই আসরে খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০০৯ সাল থেকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা নামিয়ে আনা হয় আটে। ওই সময় বাংলাদেশ দল ছিল র‌্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে। একই কারণে ২০১৩ সালের টুর্নামেন্টেও খেলতে পারেনি বাংলাদেশ দল। তবে প্রথম দিকের ৫ আসরেই খেলেছিল। অবশ্য ১৯৯৮ সালে প্রথম যে আসরটি শুরু হয়, সেটার নাম ছিল নকআউট বিশ্বকাপ। প্রথম সেই আসরটি এককভাবে আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ। আর ২০০০ সালেও সেটার নাম নকআউট বিশ্বকাপই ছিল। ২০০২ থেকে এ আসরটির নাম বদলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হয়। ২০০৬ সালের আসরটি শেষে তিন বছর বিরতি নিয়ে পরের আসরটি অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৯ সালের সে আসরে আর খেলা হয়নি বাংলাদেশের। কারণ নতুন নিয়মে ৮ দল খেলেছে সেবার। তারপর চার বছর পর পর আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ আসরেও র‌্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকায় খেলতে পারেনি টাইগাররা। অবশেষে এ বছর আবার ফিরেছে টাইগাররা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। এবার তাই নতুন চ্যালেঞ্জ। বিশ্বের ৬ নম্বর দল হিসেবে দারুণ কিছু করে দেখানোর পরীক্ষা। আর সম্প্রতিই মাশরাফি টি২০ থেকে অবসর নিয়ে ফেলার কারণে ওয়ানডে ক্রিকেটের এই টুর্নামেন্টে তার দিকে বিশেষ নজর থাকবে। কারণ, শুধু এই ফরমেটেই এখন পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মাশরাফি। দেশের পক্ষে সফলতম অধিনায়ক তিনি জয়-পরাজয়ের অনুপাতে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে বাংলাদেশ দল সুযোগ পেয়েছে নিজেদের ইউরোপের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার। আয়ারল্যান্ডে খেলেছে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ। ইংল্যান্ডের সঙ্গে পরিবেশ-পরিস্থিতির সামঞ্জস্য থাকায় এ সিরিজটি দারুণ উপকারী হয়েছে টাইগারদের জন্য। আত্মবিশ্বাস ও বাড়তি মনোবল পেয়েছেন মাশরাফিরা। আর ইংলিশদের বিরুদ্ধে নামার আগে এখন দুটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলা হয়েছে। পাকিস্তান ও ভারতের বিরুদ্ধে দুই প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার মাধ্যমে দারুণ অনুশীলন হয়েছে তার। অধিনায়ক মাশরাফির নেতৃত্বে প্রথমবার এ আসরে খেলবে দল। টানা সাফল্য ধরে রাখার পরীক্ষাটাও দিতে হবে এবার বাংলাদেশ অধিনায়ককে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ তাতে করে নিশ্চিতভাবেই সবাই ধরে নিয়েছেন অভাবনীয় কিছু করে দেখাবে টাইগাররা। বাংলাদেশকে নিয়ে জাইলস বলেন, ‘সবাই নিশ্চয়ই শিরোপার জন্য লড়বে। তবে আমি মনে করি, এবারের আসরে বাংলাদেশের ভাল করার সুযোগ রয়েছে। আমার মতে সেমি ফাইনালে ইংল্যান্ড, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার পাশাপাশি বাংলাদেশকেই রাখব। যদি বাংলাদেশ কোয়ালিফাই করতে ব্যর্থ হয় সেক্ষেত্রে তাদের পরিবর্তে শেষ চারে অস্ট্রেলিয়াকেই রাখব আমি।’ আর বাংলাদেশ দলের সাবেক ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘ডেথ ওভারের বোলিংয়ে আমাদের কিছুটা দুর্বলতা আছে। সেটা আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে। যদি আমরা ভাল করতে পারি তাহলে সেমিফাইনাল পর্যন্ত খেলার আশা করতেই পারি।’
×