ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ম্যানচেস্টার হামলায় ব্যবহৃত উপকরণের ছবি প্রকাশ নিয়ে ব্রিটেন ও মার্কিন সম্পর্কে উত্তেজনা

তথ্য বিনিময়ও বন্ধ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৬ মে ২০১৭

তথ্য বিনিময়ও বন্ধ

ব্রিটেনের ম্যানচেস্টারে সোমবার রাতে এক কনসার্টে সংঘটিত বোমা হামলায় নেপথ্যে জড়িত জিহাদী নেটওয়ার্ক খুঁজতে ব্রিটিশ নিরাপত্তা বাহিনীগুলো যখন ব্যস্ত তখন তদন্তের ছবি যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে ফাঁস হওয়ায় লন্ডন-ওয়াশিংটন সম্পর্কে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে বিষয়টি উত্থাপন করেন । এ ঘটনায় তদন্তে নিয়োজিত পুলিশ ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সকল তথ্য বিনিময়ও বন্ধ করে দিয়েছে। খবর বিবিসি অনলাইন ও এএফপির। ইতোমধ্যে ব্রিটেন সরকার ও দেশটির পুলিশ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসে বোমা হামলার দৃশ্যসংবলিত ছবি প্রকাশ করেছে। হামলার পর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা বিস্ফোরকের বিভিন্ন অংশে দেখা গেছে ফাঁস হওয়া ছবিতে। যেগুলো তদন্তের জন্য ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ জব্দ করেছিল। বিশেষ করে ঘটনাস্থলে একটি নীল রঙের ঝোলার বিচ্ছিন্ন অংশ, নাট, স্ক্রু, শ্র্যাপনাল, ব্যাটারি এবং বিস্ফোরিত ডিভাইসের সম্ভাব্য অংশ ছিল ছবিতে। দেশটির সন্ত্রাসবিরোধী পুলিশ প্রধান বলেন, এতে তদন্ত, হামলায় হতাহত ব্যক্তি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হয়েছে। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ জানায়, আমরা ক্ষুব্ধ, এ ঘটনা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। গ্রেটার ম্যানচেস্টার মেয়র বলেন, আমি বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের কাছে উত্থাপন করব, যাতে দ্বিতীয়বার এমন কিছু না ঘটে। যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যামবার রুড বলেন, বোমা হামলাকারী সালমান আবাদি সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করায় আমি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বিরক্ত। তিনি এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করবেন বলে জানান। বিবিসির নিরাপত্তা প্রতিনিধি বলেন, এ ফাঁসের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই সম্ভাব্য দায়ী। হোয়াইট হাউসকে এখানে দায়ী করার সুযোগ নেই। ব্রিটিশ পুলিশ মূলত হামলাকারী সালমান আবাদির পুরো নেটওয়ার্ক খুঁজে বের করতে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে ম্যানচেস্টারের মস সাইড এলাকায় তল্লাশির সময় একটি নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটায় ব্রিটিশ গোয়েন্দারা। এ ঘটনায় কয়েক দফা অভিযানে আবাদির ভাই ও এক নারীসহ এ পর্যন্ত আটজন গ্রেফতার হয়েছেন। তবে কোন অভিযোগ না পাওয়ায় বৃহস্পতিবার ওই নারীকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আবাদির বাবা ও তার ছোট ভাই হাশেমকে লিবিয়ার মিলিশিয়ারা আটক করে রেখেছে। বিস্ফোরণের চব্বিশ ঘণ্টা পার না হতেই আবাদির পরিচয় বিস্তারিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। পরবর্তীতে সে সব ছবি ব্রিটিশ গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে পুনঃপ্রকাশ করা হয়। এসব ছবিতে রক্তের দাগসহ বোমার বিভিন্ন অংশ ও বোমাবাহী ঝোলাও ছিল। ব্রিটিশ সরকার জানায়, সরকারের প্রতি আস্থাহীনতা ও অবিশ্বাসের কারণে এভাবে ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি দুইদেশের সরকারের প্রতিটি প্রাসঙ্গিক পর্যায়ে উত্থাপন করা হবে, যাতে এমন ঘটনা ফের না ঘটে। ব্রিটেনের জাতীয় পুলিশ প্রধানদের কাউন্সিল জানায়, অননুমোদিত তথ্য ফাঁস সরকারের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। এতে তদন্ত বাধাগ্রস্ত হবে, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান বিশাল ক্ষতির মুখে পড়বে। ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অভিযানকে সুষ্ঠু রাখতে ব্রিটিশ পুলিশ তথ্যপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। কাজেই অন্য উৎস থেকে যদি এসব তথ্য ফাঁস করা হয়, তবে তা দুইদেশের মধ্যে তিক্ততার জন্ম দিবে, এমনটাই স্বাভাবিক। ২২ বছর বয়সী সালমান আবাদি লিবীয় বাবা-মায়ের ঔরসে ব্রিটেনের ম্যানচেস্টারে জন্ম নেন। সে স্যালফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যালামনি ছিল। ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত গবেষক হামিদ আল সাইদ বলেন, পরিবারের সঙ্গে আবাদির সুসম্পর্ক ছিল না, তার বাবা তাকে সঠিক পথে ফেরাতে চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছেন।
×