ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

বিতর্কিত ভর্তি নীতিমালা

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ১৯ মে ২০১৭

বিতর্কিত ভর্তি নীতিমালা

তিন বছর আগে ঘোষিত সরকারের কলেজে ভর্তি নীতিমালা নিয়ে মামলা-মোকাদ্দমাসহ রীতিমতো তোলপাড় চলছে বিভিন্ন মহলে। ওই নীতিমালায় বলা হয়েছে, ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া এসএসসির ফলের ভিত্তিতে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির সুযোগ দিতে হবে শিক্ষার্থীদের। এই নীতি সরকারী-বেসরকারী উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। তবে বাস্তবতা হলো দেশের সব কলেজের মান একই রকম নয়, নামী-দামী কলেজের পাশাপাশি অনেক অখ্যাত, প্রায় অজ্ঞাত কলেজও আছে। আবার শহর ও গ্রামের শিক্ষার মানও এক রকম নয়। বরং বৈষম্য বিরাজমান। সর্বোপরি দেশে গত কয়েক বছরে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত এসএসসি পাসের সংখ্যা আশাব্যঞ্জকহারে বাড়লেও পরীক্ষার ফল ও মান নিয়ে প্রশ্ন আছে বিস্তর। সর্বোপরি দীর্ঘদিন থেকে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী নামী-দামী কলেজসহ অধিকাংশ সরকারী- বেসরকারী কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া অনুসৃত হচ্ছিল পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে। যৎসামান্য বিতর্ক থাকলেও এতে যে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মেধার মূল্যায়ন হয়, তা অস্বীকার করা যাবে না। আরও একটি বিষয় লক্ষণীয়। আর তা হলো প্রায় সব শিক্ষার্থী চায় সেরা কলেজে ভর্তি হতে। এক্ষেত্রে অভিভাবকরাও কিছু কম যান না। সে অবস্থায় স্বভাবতই বাড়ে তীব্র প্রতিযোগিতা। বিশেষ করে নামী দামী কলেজে ভর্তি হতে প্রায় সব শিক্ষার্থী ও অভিভাবক আদা পানি খেয়ে লেগে পড়েন। অনেক কলেজের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতি- অনিয়মসহ ভর্তিবাণিজ্যের অভিযোগও ওঠে বৈকি। এসবের মধ্যে গুটিকতক ভাল কলেজ চোখে পড়ে, যাদের পরীক্ষা ও ভর্তি প্রদ্ধতি অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ। এসব কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রকৃতই শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাতে চান মেধার মূল্যায়নের ভিত্তিতে। এ প্রেক্ষাপটে উচ্চ আদালতে মামলা হয়। এ প্রেক্ষাপটে কয়েকটি কলেজ ছাত্র ভর্তি করছে পরীক্ষার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে। এর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আর এতে দেখা দিয়েছে নতুন করে বিতর্ক। সরকারের ভর্তি নীতিমালা পড়েছে প্রশ্নের মুখে। এতে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীরা নিজেদের পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারছে না, অন্যদিকে নামী-দামী কলেজে সুনামসহ আর্থিক সঙ্গতি ও সক্ষমতাও ধরে রাখা যাচ্ছে না। বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ এমন কি এও বলছে যে, সরকার যে নীতিমালা করেছে তাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাদ দিলেও সব সরকারী কলেজের শিক্ষার মানও একরকম নয়। ফলে প্রতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি নিয়ে একদিকে সৃষ্টি হয় জটিলতা, অন্যদিকে প্রাণান্ত ঘটে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। প্রতি বছরের এই বিতর্ক ও বিড়ম্বনা এড়াতে সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত ভর্তি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বিশেষ করে শিক্ষাবিদ- চিন্তাবিদদের সঙ্গে জরুরী বৈঠকে বসে একটি সুষ্ঠু ও সমন্বিত ভর্তি নীতিমালা প্রণয়ন করা। মনে রাখতে হবে যে শিক্ষা একটি অধিকার। কাউকে এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। আবার এর মানও অক্ষণœ রাখতে হবে। সবচেয়ে ভাল হয় পর্যায়ক্রমে হলেও অন্তত অধিকাংশ স্কুল-কলেজের অবকাঠামোসহ শিক্ষা ও পাঠদানের মানোন্নয়ন করা।
×