ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

সোনাদীঘির ঐতিহ্য রক্ষার দাবি

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৬ মে ২০১৭

সোনাদীঘির ঐতিহ্য রক্ষার দাবি

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ ‘সোনাদীঘি’ রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী একটি দীঘি। প্রায় ১০০ বছর আগে ১৯২১ সালে রাজশাহীর মানুষের সুপেয় পানির সংস্থানের জন্য খনন করা হয়েছিল এটি। শতবর্ষী এই দীঘিটি রাজশাহীর ইতিহাস ঐতিহ্যকে লালন করে। এ দীঘিকে ঘিরেই সম্প্রসারিত রাজশাহী। তবে দিনে দিনে এটি আর সেই অবস্থায় নেই। এককালের স্বচ্ছ পানির দীঘি এখন পরিণত হয়েছে আবর্জনার স্তূপে। সঙ্গে দখল প্রক্রিয়া। তবে দীর্ঘদিন হলেও এবার এই সোনাদীঘির অস্তিত্ব রক্ষায় মাঠে নেমেছে রাজশাহীর বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। আগামী এক মাসের মধ্যে সোনাদীঘির অস্তিত্ব রক্ষার দাবিতে সোচ্চার তারা। একই সঙ্গে রাজশাহীর আরেকটি ঐতিহ্য ভুবনমোহন পার্ক কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার দখলমুক্ত করারও দাবি জানিয়েছে মাঠে নেমেছেন রাজশাহীবাসী। রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ ছাড়াও সোনাদীঘি রক্ষায় মাঠে নেমেছে রাজশাহী ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদ ও রাজশাহী নাগরিক সমন্বয় কমিটি। তারা আলাদাভাবে কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নেমেছে। এসব দাবিতে সোচ্চার হচ্ছেন নগরবাসীও। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও রাজশাহীর ঐতিহ্য রক্ষায় একাত্মতা প্রকাশ করে মাঠে নেমেছেন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ঐতিহ্যবাহী সোনাদীঘি এবং ভুবনমোহন পার্কমুক্ত করাসহ বিভিন্ন দাবিতে রাজশাহী ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদ ও রাজশাহী নাগরিক সমন্বয় কমিটির নেতৃবৃন্দ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। রাজশাহী ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি মোঃ সামশুদ্দিন বলেন, সোনাদীঘির সঙ্গে রাজশাহীবাসীর আত্মার সম্পর্ক রয়েছে। এর মৃত্যু ঘটাতে দেব না। তিনি মেয়রের কাছে দাবি জানিয়ে সোনাদীঘিকে দখলমুক্ত করে এর প্রতিষ্ঠালগ্নের সীমানা ঠিক রেখে সংস্কারের মাধ্যমে শোভাবর্ধন করে রাজশাহীর জনগণকে উপহার দেয়ার অনুরোধ করেন। একই সঙ্গে ভুবনমোহন পার্ক রাজশাহীর একটি ঐতিহাসিক স্থান। তিনি বলেন, এই পার্কে নেতাজী সুভাস চন্দ্র বসু, মওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাদারবক্সসহ বহু বিখ্যাত মানুষের পদচারণা রয়েছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণআন্দোলন, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ বহু ঐতিহাসিক আন্দোলনের সূচনা এই পার্ক থেকে। তাই রাজশাহীর সঙ্গে পার্কটিকে কোনভাবেই বিলুপ্ত হতে দেয়া যাবে না। তিনি বলেন, সোনাদীঘির এক ইঞ্চি জায়গাও কাউকে দখল করতে দেয়া হবে না। এর আগে গত ২২ এপিল রাজশাহীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে নগরীর ঐতিহ্যবাহী সোনাদীঘির অস্তিত্ব রক্ষায় একমাসের আল্টিমেটাম দেয়া হয়। নগরীর সোনাদীঘী মোড়ে রাজশাহী ব্যবসায়ী ও নগরিক সমন্বয় কমিটির ব্যানারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন কর্মসূচীতে বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশ নেন। কর্মসূচী থেকে সোনাদীঘির অস্তিত্ব সুরক্ষা ও ভুবনমোহন পার্ক দখলমুক্তসহ ১০ দফা দাবি জানানো হয়। জানা গেছে, নগরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সোনাদীঘিটিকে যে যার মতো দখল করে মরা পুকুরে পরিণত করেছে। কেউ দখল করে নির্মাণ করছে বিভিন্ন স্থাপনা। আবার কেউ দখলের জন্য দীঘির বেশকিছু অংশ ভরাটও করে ফেলেছে। এখন অস্তিত্ব বিলীন হয়ে দীঘিটি ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। জানা গেছে, ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সোনাদীঘি সংস্কারের উদ্যোগ নেন তৎকালীন মেয়র এইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। সোনাদীঘিকে ঘিরে অত্যাধুনিক কিছু পরিকল্পনার ঘোষণাও করা হয়। তবে সেটি আর বাস্তবে রূপ নেয়নি। জানা গেছে, বাগমারা আসনের সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের প্রতিষ্ঠান এনা প্রোপার্টিজ সিটি সেন্টারের নির্মাণকাজ করতে গিয়ে প্রথমে সোনাদীঘির পশ্চিমপাড়ের কিছু অংশ কৌশলে ভরাট করেন। এরপর তারা সেখানে বাঁশের খুঁটি ও বেড়া দিয়ে দীঘির ভেতরের অংশ বেঁধে বালু ফেলা শুরু করে। এরপর রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা ২৩ এপ্রিল সোনাদীঘি পরিদর্শন করে অবিলম্বে সেটি দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেন। বাদশা বলেন, সোনাদীঘি রাজশাহীর প্রাণ। অথচ এটিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে। রাজশাহীবাসী এটি হতে দেবে না। এদিকে একই দাবিতে গত ৩০ এপ্রিল নগরীতে বিশাল মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ। এ কর্মসূচী থেকেও নগরীর ঐতিহ্যবাহী সোনাদীঘির অস্তিত্ব রক্ষা, অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে ভুবনমোহন পার্ক কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মুক্ত করে সৌন্দর্য ফেরানোর জোর দাবি জানানো হয়েছে। এ কর্মসূচীতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, ও সাধারণ মানুষও অংশ নেন। রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, অবিলম্বে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী সোনাদীঘি রক্ষা ও দখলমুক্ত করতে হবে। এককালের সোনাদীঘি এখন নোংরা আবর্জনা ও বালু ভরাট করে হত্যা করা হয়েছে। ঐতিহাসিক ভুবনমোহন পার্ক অবৈধ দখলমুক্ত ও মাদকের আখড়া বন্ধ ছাড়াও সেখানে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত গণসৌচাগার অন্যত্র স্থানান্তরের জোর দাবি জানান তিনি। জামাত খান বলেন, সোনাদীঘি রক্ষার জন্য রাজশাহীর মানুষ এখন অনেক সোচ্চার। এটি মানুষের প্রাণের দাবি। তিনি অবিলম্বে সোনাদীঘিকে তার আসল রূপ ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান।
×