ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিয়া ইস্যুতে আস্তানায় চুক্তি স্বাক্ষর করল ইরান তুরস্ক ও রাশিয়া

নিরাপদ অঞ্চল নিয়ে সমঝোতা

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ৬ মে ২০১৭

নিরাপদ অঞ্চল নিয়ে সমঝোতা

সিরিয়ায় নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে প্রধান তিন মধ্যস্থতাকারী দেশ ইরান, রাশিয়া ও তুরস্ক। কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় সিরিয়া বিষয়ক চতুর্থ দফা শান্তি আলোচনা শেষে বৃহস্পতিবার এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বুধবার সিরিয়ার উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণের চারটি অঞ্চলে নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেয় রাশিয়া। এসব অঞ্চলে সিরিয়ার সরকারী সেনা ও বিদেশী মদদপুষ্ট বিদ্রোহীদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ চলছে। খবর এবিসি, সিএনএন ও ইরনার। প্রস্তাবে অবিলম্বে এসব সংঘর্ষ বন্ধ করে শরণার্থীদের তাদের ঘরবাড়িতে ফিরে আসার নিরাপদ সুযোগ করে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। বৃহস্পতিবার নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার চুক্তি সই হওয়ার পর বিদ্রোহীদের প্রতিনিধিরা প্রস্তাবটির বিরোধিতা করে সম্মেলনকক্ষ ত্যাগ করেন। বিদ্রোহী নেতা ওসামা আবু জাইদ দাবি করেন, নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হলে সিরিয়ার ভৌগোলিক অখ-তা হুমকির মুখে পড়বে। তাই তারা এটি মেনে নেবেন না। জাতিসংঘের সিরিয়া বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি স্টিফেন ডি মিস্তুরা সিরিয়ায় নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, দেশটির সংঘাত নিরসনের লক্ষ্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক পদক্ষেপ। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস এর আগে বলেছিলেন, নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবে তিনি উৎসাহিত বোধ করছেন। তবে এটি সিরিয়ার জনগণের জীবনের মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখে কিনা সে বিষয়ে তিনি সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। দু’দিনের বৈঠক শেষে কাজাখ পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাইরাত আবদ্রাখামানভ জানিয়েছেন, সিরিয়া বিষয়ক পঞ্চম আস্তানা বৈঠক জুলাইয়ের মাঝামাঝি অনুষ্ঠিত হবে। সিরিয়ায় কয়েক বছরের সংঘাত অবসানের লক্ষ্যে কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনা দেশটির প্রধান বিরোধী গোষ্ঠী ‘উচ্চ আলোচক কমিটি’ বা এইচএনসি বর্জন করেছে বলে দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এইচএনসির মুখপাত্র আহমাদ রামাদান বুধবার বলেন, সিরিয়ার বেসামরিক ব্যক্তিদের ওপর বিমান হামলা চালানো হয়েছে Ñএ অভিযোগে বিরোধী প্রতিনিধিরা এ আলোচনা বর্জন করছে। সিরিয়ার অভ্যন্তরে গোলা বর্ষণ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে শান্তি আলোচনা বর্জন অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি। এদিকে সিরিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান আলী আব্দুল্লাহ আইয়ুব এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাকেরি দু’দেশের সামরিক সহযোগিতা ও সিরিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে গত সপ্তাহে আলোচনা করেছেন। তেহরানে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে তারা ইরান ও সিরিয়ার মধ্যে সামরিক সহযোগিতা আরও জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করে সিরিয়ায় ইসরাইল ও মার্কিন আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়েছেন। দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বাড়ানো, এ অঞ্চলের ঘটনাবলীতে সামরিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সমন্বয় জোরদার করা এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করাই সিরিয়ার সেনা প্রধানের তেহরান সফরের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। বর্তমানে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সিরিয়ার সেনাবাহিনী বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। এ কারণে রাজনৈতিক উপায়ে সিরিয়া সমস্যা সমাধানে ব্যাপক আশার সঞ্চার হয়েছে। কিন্তু সিরিয়ার বিষয়ে সংলাপকারীদের মধ্যকার মতবিরোধ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। যদিও বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সবাই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কথা বলছে কিন্তু কোন কোন পক্ষ সন্ত্রাসবাদকে মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে অশুভ এ শক্তিকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টা করছে। যেমন, মার্কিন সরকার সিরিয়ায় সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করার কথা বললেও সন্দেহজনক রাসায়নিক হামলার অজুহাতে দেশটির সামরিক অবস্থানে হামলা চালিয়েছে। অথচ সিরিয়ার সেনারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। সিরিয়া সরকার তাদের বিরুদ্ধে আনা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সিরিয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোর এ আচরণ ও মিথ্যা অপবাদ সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করা কিংবা রাজনৈতিক উপায়ে সিরিয়া সমস্যা সমাধানে কোন ভূমিকাই রাখবে না। তেহরান ও দামেস্ক জোর দিয়ে বলেছে, সিরিয়ার জনগণই কেবল সেদেশের ভবিষ্যতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রাখে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কেবল মুখে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কথা বললেও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদকেও ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছে।
×