ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ হাবিব উল্লাহ

নৈরাজ্য ও বিড়ম্বনা

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২৭ এপ্রিল ২০১৭

নৈরাজ্য ও বিড়ম্বনা

দেশে গণপরিবহনে চরম নৈরাজ্য বিরাজ করছে। রাজধানীসহ আরও যে কয়টি মহানগরী রয়েছে সেসব স্থানেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এমন কি মফস্বল শহরগুলোতেও গণপরিবহনে একই অবস্থা বিরাজমান। এর কারণ কি? গণপরিবহন নৈরাজ্যের কারণ একাধিক- এটা একদিনে হয়নি। গণপরিবহনের স্বল্পতা নৈরাজ্যের অন্যতম কারণ। রাজধানীতে গেটলক সার্ভিস বন্ধ করা হয়েছিল। যেখানে গণপরিবহনে স্বল্পতা রয়েছে- সেখানে গেটলক সার্ভিস বন্ধ করে দেয়া কতটা মুছিবতের কাজ হয়েছে তা ভেবে দেখা দরকার। এই নৈরাজ্য বার বার গণপরিবহনে এসে ভর করছে। ফলে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, শিশু ও মহিলারাই সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। রাজধানীর এক স্থান থেকে অন্যত্র যেতে হলে যাত্রীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। কারণ যাত্রীর তুলনায় যানবাহনের ঘাটতি রয়েছে- অথচ সেদিকে খেয়াল না করে উল্টো গেটলক সার্ভিস বন্ধ করে দেয়া হয়। পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে মেট্রো রেলসহ আরও অনেক বড় বড় প্রকল্পই বাস্তবায়নাধীন। কিন্তু যাতায়াত সমস্যার সমাধানের জন্য তেমন কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গৃহীত হচ্ছে না। হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিয়ে তার বাস্তবায়ন সুষ্ঠু সমাধানের পথ দেখাবে না। এ জন্য চাই সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও তার ত্বরিত বাস্তবায়ন। রাজধানীর রাস্তায় গণপরিবহনের সংখ্যা না বাড়ালে পরিবহন সেক্টরের অসুবিধাগুলো দূর করা যাবে না, তাই তো এই মুহূর্তে প্রয়োজন বিদেশ থেকে অধিকসংখ্যক গণপরিবহন আমদানি, পুরনো লক্কড়-ঝক্কড় বাসগুলো উঠিয়ে দিয়ে নতুন যানবাহন চালু করা। তবেই গণপরিবহনে দুর্ভোগ অনেকটাই কমে যাবে। তা ছাড়া সিন্ডিকেট করে ইচ্ছাকৃতভাবে যারা জনদুর্ভোগ বাড়াচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাস মালিক আর বাস শ্রমিক কর্মচারীদের মাঝে সমন্বয় সাধন করতে হবে। প্রায় ২ কোটি মানুষের যাতায়াতের জন্য রাজধানীতে যত গণপরিবহনের প্রয়োজন, তার অর্ধেকও রাজধানীর রাস্তায় নেই। তাই শিশু, বৃদ্ধ ও নারীদের পোহাতে হয় প্রতিদিনই অবর্ণনীয় দুর্ভোগ, পৃথিবীর উন্নত, অনুন্নত দেশের প্রতিটি বড় বড় শহরেই এখন যানবাহনের ছড়াছড়ি। মানুষ অনায়াসে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নির্বিঘেœ যাতায়াত করছে। অথচ আমাদের দেশে বড় বড় শহরে এমনকি আমাদের ছোট ছোট শহরগুলোতেও রয়েছে গণপরিবহনের সমস্যা। গণপরিবহনের দুর্ভোগ কমানোর জন্য কি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন তা গভীরভাবে ভেবে দেখা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। গণপরিবহনের বিরাজমান নৈরাজ্যবাদ কখনও না হলে দেশের জনগণের দুর্ভোগ বাড়বে বৈ কমবে না। গণপরিবহনে নৈরাজ্যের অবসানের জন্য আশু কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বর্তমানে রাজধানী ঢাকাতে সাড়ে বারো হাজার থেকে পাঁচ হাজার গণপরিবহনের গাড়ি চলছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। মহানগরীর গণপরিবহনে বিদ্যমান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তদনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করে সমন্বিত পদ্ধতিতে সমস্যার সমাধান করতে হবে। শুধুমাত্র কতিপয় ফ্লাইওভার তৈরি করে কিছু রাস্তাকে দুই লেন থেকে ৪ লেনে উন্নীত করে বিরাজমান সমস্যার সমাধান করা যাবে না। যানজট নাগরিক জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। সকলকে নিয়ে সর্বাত্মক গণপরিবহনের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করে কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে যানজটসহ সকল সমস্যার সমাধান সম্ভবপর নয়। যে সব ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ‘সিন্ডিকেট’-এর মাধ্যমে গণপরিবহনের ক্ষতি সাধন করছে, অবিলম্বে তাদের চিহ্নিত করে এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। কলাবাগান, ঢাকা থেকে
×