ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যাম্পাসে প্রযুক্তির ছোঁয়া

প্রকাশিত: ০৫:১১, ১৬ এপ্রিল ২০১৭

ক্যাম্পাসে প্রযুক্তির ছোঁয়া

স্কুল কলেজে একসঙ্গে পড়াশোনা করেছেন দুই বন্ধু। কিন্তু উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি পরীক্ষার কারণে দু’জন দেশের দুই প্রান্তের শত মাইল দূরের দুই ক্যাম্পাসে পড়ে গেলেন। সেই থেকে আর তাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ নেই। হঠাৎ একদিন কম্পিউটারের মনিটরে বন্ধুর ছবি দেখে লাইভ আলাপ জমিয়ে, মোবাইল নম্বর আদান-প্রদান করে আবার একত্রিত হয়ে গেলেন সেই পূর্বের বন্ধুত্বের বন্ধনে। পাশাপাশি বোনাস হিসেবে বন্ধুর প্রোফাইল থেকে ক্লাস এইটের সেই রূপসী বান্ধবী মিতু ও শান্তার খোঁজ পেয়ে গেলেন। আনন্দ আর উত্তেজনা আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেল। কিন্তু সে উত্তেজনায় ঠা-া পানি পড়ে গেল যখন দেখলেন সাদিকা জান্নাতি মিতু ও নূরে জান্নাত শান্তার রিলেশনশিপ স্ট্যাটাসে লেখা ‘এনগেজড’। কি এই ফেসবুক যার কারণে আনন্দ, উত্তেজনা আর উত্তেজনার মধ্যে ঠা-া পানি পড়ে যায়? ফেসবুকের যাত্রা শুরু হয়েছিল বিশ্ববিখ্যাত ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে। সারা বিশ্বের হাজার হাজার স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এর বিস্তৃতি। দেশের প্রতিটি সরকারী-বেসরকারী ও অধিকাংশ শহুরে কলেজের নামে ফেসবুকে একাধিক গ্রুপ এবং পেইজ সৃষ্টি হয়েছে। আর এগুলো সৃষ্টি করেছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই। এসব গ্রুপে গঠনমূলক আলোচনা সমালোচনা হয় প্রতিদিনই। গ্রুপগুলোতে বর্তমান শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও অংশগ্রহণ করে। এমনকি এক ক্যাম্পাসের আলোচনা আর আড্ডায় অন্য ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণও লক্ষ্য করা যায়। এসব গ্রুপগুলো লক্ষ্য করলে দেখা যায় ক্যাম্পাসগুলোর এ্যালামনাই, শিক্ষা সফর, বর্ষপূর্তি উৎসব ও শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনীর আয়োজন। এসব আয়োজনের দাওয়াত দেয়া, বাজেট প্রণয়ন, চাঁদা সংগ্রহ, সবকিছুই ফেসবুকের মাধ্যমে হয়ে থাকে। শুধু অনুষ্ঠানের দিন নির্দিষ্ট স্পটে খাওয়া-দাওয়া আর ফটোসেশনের কাজটা হয়, কারণ ফেসবুকে অনেক কিছু করা গেলেও খাওয়ার কাজটা করা যায় না। আবার একসঙ্গে অনেকে আড্ডা দেবার ব্যবস্থা থাকলেও গ্রুপ ছবি তোলার ব্যবস্থা ফেসবুকে নেই। তবে তোলা ছবি দেখার চমৎকার সব ব্যবস্থা এতে আছে। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক্স ফিজিক্স এ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্রী নুসরাত জাহান লিজা বলেন, ফেসবুকে আমার সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা হলো এই ফেসবুকের মাধ্যমেই খুঁজে পেয়েছি আমার সাবেক স্কুল জীবনের বন্ধু বর্তমানে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎ ও প্রকৌশল বিভাগের ছাত্রী সাঈদা আক্তার লিনাকে। জাবির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র আল-আমিন বলেন, আমার একটি স্মরণীয় ঘটনা হলো ফেসবুকের মাধ্যমে ক্যাম্পাসেরই এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয়। পরিচয়ের সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই তিনি আমাকে সাভারে দুটো টিউশনি যোগাড় করে দিয়েছেন। তাই বলতে হয় জয়তু ফেসবুক। ফেসবুকের এত এত সুবিধার মাঝে কিছু কিছু ভয়াবহ খারাপ দিকও যে আছে। সে সম্পর্কে শাবিপ্রবির ইংরেজী বিভাগের ফাতেমা তুজ্জোহরা বলেন, ফেসবুক থেকে খুব সহজে একজনের ছবি অন্যজন ডাউনলোড করতে পারে। ডাউনলোড করা ছবি অনেকসময় বিকৃত করে আবার ফেসবুকের ওয়ালেই ছেড়ে দেয়ার নজির আছে। বিশেষ করে আমাদের মেয়েদের তথ্য ও ছবি চুরি করে ব্ল্যাকমেইল করার ঘটনা বর্তমান সময়ে অহরহ ঘটছে। ইবির ইংরেজী বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মো. মামুনুর রহমান বলেন, ফেসবুকে যেহেতু দেশ-বিদেশের অনেক বন্ধুবান্ধব একসঙ্গে মিলিত হয়। তারা আড্ডায় আড্ডায় অনেক সময় নষ্ট করে। এই সামাজিক ওয়েবসাইটটি একটি নেশার মতো বিষয়। এ নেশায় শরীর ও অর্থ নষ্ট না হলেও সময় নষ্ট হয় অনেক। ইমাদুল হক
×