ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ডাস্টবিনে কুড়িয়ে পাওয়া শিশু আনিশার অবস্থার অবনতি

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৯ এপ্রিল ২০১৭

ডাস্টবিনে কুড়িয়ে পাওয়া শিশু আনিশার অবস্থার অবনতি

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের স্পেশাল বেবি কেয়ার ইউনিটের কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের বর্তমান ব্যস্ততা আনিশাকে নিয়ে। একটু কান্নার শব্দ কানে এলেই তারা ভাবছেন আনিশা কাঁদছে। শনিবার দুপুর নাগাদ সরেজমিন বেবি কেয়ার ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, শিশু বিভাগের বিশেষ এ ইউনিটটিতে মোট ৩৫ শিশু চিকিৎসাধীন থাকলেও আনিশা নামের শিশুটির প্রতি চিকিৎসক নার্স সবারই বিশেষ নজর। থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ অন্য সব শিশুর পাশে তার বাবা-মা স্বজনরা থাকলেও আনিশার পাশে কেউ নেই। কর্তব্যরত ডাক্তার ও নার্সরাই এখন শিশুটির একমাত্র স্বজন। মাত্র একদিনের এই শিশুকে ১১ মার্চ একটি বাজারের ব্যাগের মধ্যে ময়লা কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে শিশুটিকে ফেলে দেয়া হয়েছিল রাজধানীর শাহআলী থানা এলাকার একটি ডাস্টবিনে। স্থানীয় এক ব্যক্তির সহায়তায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালে আসার পরই চিকিৎসকরা শিশুটির নাম রেখেছেন আনিশা। এরপর থেকে শিশুটিকে আনিশা বাবু বলেই ডাকছেন সবাই। এদিকে তিন সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও আনিশা এখনও সম্পূর্ণ সুস্থ হয়নি। রক্তে সংক্রমণসহ নানা শারীরিক সমস্যায় এখনও ভুগছে। জন্মের সময় মাত্র ১ হাজার ৭শ’ গ্রাম ওজন নিয়ে জন্মানো শিশুটির ওজন তেমন বাড়েনি। এরই মাঝে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আনিশাকে প্রতি দুই ঘণ্টা পর পর আট এমএল গুঁড়ো দুধ খাওয়ানো হলেও আপাতত তা বন্ধ রাখা হয়েছে। কারণ তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। ছোট্ট শিশুটির ডান হাতে ক্যানোলার মাধ্যমে স্যালাইন দেয়া হয়েছে। গত তিনদিন ধরেই তার খাবার বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ শিশুটি সুস্থ হবে তাও অজানা চিকিৎসকদের। তবে তাকে সুস্থ করে তুলতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের স্পেশাল বেবি কেয়ার ইউনিটের চিকিৎসক নার্সসহ সবাই বিগত এক মাস আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আনিশার শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাঃ মনীষা ব্যানার্জী শনিবার দুপুরে জনকণ্ঠকে জানান, ‘শিশুটির রক্তে ইনফেকশন রয়েছে। অনেক সময় খাবার ভালভাবে হজম করতে পারছে না। তাই আপাতত ওর খাবার বন্ধ রাখা হয়েছে। স্যালাইন চলছে। জন্মের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজন নিয়ে জন্মেছে শিশুটি। এখনও শিশুটির ওজন আগের মতোই আছে। যদিও জন্মের প্রথম দুই সপ্তাহ শিশুর ওজন বাড়ে না। এখন আবার শিশুটির খাবার বন্ধ রয়েছে। তাই একটু সুস্থ হলে আবার খাবার খাওয়ানো শুরু করলেই আনিশার ওজন বাড়বে। শিশুটিকে আমরা সবাই মিলে সুস্থ করে তুলতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ ডাস্টবিন থেকে উদ্ধারকৃত এ শিশুটি জন্মের পর পরই পরিত্যক্ত হয়েছে। ইতোমধ্যেই আনিশা নামের এ শিশুটিকে দত্তক নেয়ার জন্য একাধিক দম্পত্তি ইচ্ছা পোষণ করেছে। তালিকায় দিনমজুর ও গার্মেন্টকর্মী থেকে শুরু করে ধানম-ি, গুলশান ও বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় বসবাসকারী বিত্তশালী ভিআইপিরাও রয়েছেন। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে ডাস্টবিন থেকে নবজাতক উদ্ধারের খবর প্রকাশিত হলে অনেকেই শিশুটিকে দেখতে হাসপাতালে আসেন। তাদের অনেকেই আবার শিশু বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে দেখা করে দত্তক নেয়ার ইচ্ছা জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ডাঃ মনীষা ব্যানার্জি বলেন, ‘ফুটফুটে ওই নবজাতককে তার বাবা-মা ডাস্টবিনে ফেলে গেলেও অনেকেই শিশুটিকে দত্তক নিতে চাইছেন। শিশুটির বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজন না থাকায় বর্তমানে হাসপাতাল পরিচালকই তার আইনগত অভিভাবক। যারাই দত্তক নেয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন তাদের হাসপাতাল পরিচালক বরাবর আবেদনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়ার পর শিশুটিকে কোথায় পাঠানো হবে তা নির্ধারণ করবে পরিচালক।’ ২০১৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পুরাতন বিমানবন্দরের কাছে একটি জঙ্গলে কুকুরে কামড়ানো একটি নবজাতককে দুই নারী উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যান। সুস্থ করে তোলা ওই শিশুর পরবর্তীতে নাম রাখা হয় ফাইজা। সে বছরের ১১ অক্টোবর ফাইজাকে পরে সমাজসেবা অধিদফতর পরিচালিত ছোটমণি নিবাসে হস্তান্তর করা হয়। এরপর থেকে ফাইজা সেখানেই বড় হয়ে ওঠছে। হাসপাতাল প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ফাইজার মতো আনিশাকেও সুস্থ হওয়ার পর সমাজসেবা অধিদফতরে আজিমপুর ছোটমণি নিবাসে পাঠানো হতে পারে।
×