ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্লোরিডায় ট্রাম্প- শি জিনপিং বৈঠক নিয়ে নতুন আশা

ট্রাম্পের গলফ কূটনীতি

প্রকাশিত: ০৪:১২, ৬ এপ্রিল ২০১৭

ট্রাম্পের গলফ কূটনীতি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে ফ্লোরিডার পাম বিচ গলফ ক্লাব মার-এ-লাগোতে বৈঠক করতে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একে গলফ ক্লাব ডিপ্লোমেসি নামে অভিহিত করছেন। ট্রাম্প গলফে পারদর্শী তবে শি জিন পিং কখনও গলফ স্টিক হাতে নিয়েছেন কিনা তা জানা যায়নি। বহু বিষয়ে মতপার্থক্যকে পাশে রেখে দুই দুনেতাই এখন পরস্পর মুখোমুখি আলোচনায় বসছেন। খবর সিবিসি নিউজের। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭২ সালে চীনা নেতা দেং শিয়াও পিং শুরু করেন পিং পং কূটনীতি। তার ওই নীতি ছিল পূর্বসূরী মাও সেতুংয়ের অনেকটাই বিপরীত। তবে দুদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে ওই কূটনীতি কাজে এসেছিল। ৪৫ বছর পর ট্রাম্প গলফ কূটনীতি শুরু করে কতটা সফল হবেন তার আগাম অনুমান করা কঠিন। শি গলফে অনভিজ্ঞ হলে কিন্তু বিশ্ব রাজনীতিতে পাকা খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত। উভয় নেতা বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। টুইট বার্তায় ট্রাম্প নিজেই স্বীকার করেছেন যে, শির সঙ্গে তার আলোচনা হবে বেশ জটিল। আলোচনায় দুদেশের মধ্যে বিরাজমান বাণিজ্য ঘাটতি, উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তা হুমকি, দক্ষিণ চীন সাগরে কৃত্রিম দ্বীপের মতো প্রসঙ্গগুলো স্থান পাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। দুদেশের মধ্যে বিবাদের একটি সাম্প্রতিক ইস্যু হলো তাইওয়ান। নির্বাচিত হওয়ার পর দায়িত্ব বুঝে নেয়ার আগেই তাইওয়ানের নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলে ট্রাম্প বেজিং-ওয়াশিংটন সম্পর্ক তাঁতিয়ে তোলেন। এছাড়া নির্বাচনী পুরো সময়টা জুড়েই চীনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছিলেন ট্রাম্প। যেমন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে মুদ্রা অবমূল্যায়ন করে ফায়দা হাসিল করা, আমেরিকানদের শ্রম বাজার সঙ্কুচিত করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাজার দখল করার জন্য কৃত্রিমভাবে স্টিলের দাম কমিয়ে আনার অভিযোগ ইত্যাদি। ট্রাম্পের মতে, চীন আমেরিকার অর্থ সম্পদ হাতিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করছে না। ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন কয়েক দিন আগেও দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীনকে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন। সম্প্রতি ট্রাম্প তার আগের অবস্থান থেকে সরে আসেন। টিলারসনও বেজিং গিয়ে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়ন এবং সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন। তবে ট্রাম্প আগেই বলে রেখেছেন যে, চীন থেকে আমদানি নিরুৎসাহিত করার জন্য তিনি ৪৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করবেন। প্রশ্ন হলো তারপরও শি গলফ কোর্সে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে কেন এত আগ্রহী হলেন কেন। যে খেলার জন্য বিশাল মাঠের পরিচর্যাতেই বিপুল অর্থ ব্যয় হয়। যে কারণে ১৯৪৯ সালে চীনে খেলাটি নিষিদ্ধ হয়। শির সরকারও বেশকিছু গলফ কোর্স বন্ধ করে দিয়েছে। চীনের ন্যাশনাল স্ট্র্যাটিজি ইনস্টিটিউটের রাজনীতি বিশ্লেষক ঝাও হাই বলেছেন, এর মূল কারণ হলো, ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও যোগাযোগ স্থাপন যেন সঙ্কট বা জটিল পরিস্থিতিতে উভয় নেতা একজন আরেকজনকে ফোনে বা অন্য কোন মাধ্যমে সরাসরি কথা বলতে পারেন। আরেকটি কারণ জাপানী প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। ফেব্রুয়ারিতে আবে যুক্তরাষ্ট্র সফর করে গেছেন। তাই শি ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়তে মনোযোগী হয়েছেন। কোন সম্পর্কই একতরফা হতে পারে না। নিজ নিজ অবস্থানে থেকে তারা কতটুকু ছাড় দেবেন তাও প্রশ্ন সাপেক্ষ। দুই দেশের সম্পর্কে উত্তর কোরিয়া একটি বড় ইস্যু। দুই নেতার বৈঠক সামনে রেখে পিয়ংইয়ং ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বাড়িয়ে দিয়েছে। কোন কোন বিশ্লেষকের মতে, দেশটি যেন চীনের লালিত ফ্রাঙ্কেনস্টাইন হয়ে উঠেছে।
×