ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ১৮’র শেষ বুলেটিন

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২ এপ্রিল ২০১৭

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ১৮’র শেষ বুলেটিন

শুরুটা হয়েছিল ২০১২ সালে। আর শেষ হলো ২০১৭-এ। অনেকের কাছে হয়ত সময়টা বেশ লম্বাই মনে হচ্ছে। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের কাছে মনে হয়Ñ এই তো সেদিন। অল্প কিছু সময়। কত দ্রুতই না ফুরিয়ে গেল জীবনের সোনালী সময়গুলো। একসঙ্গে ২০১২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু হলো। আস্তে আস্তে পরিচয়, বন্ধুত্ব, কারও কারও পরিণয়। এরপর একসঙ্গে শাটলে চেপে প্রাণের ক্যাম্পাসে আসা, দলবেঁধে শাটলে গলা ফাটিয়ে গান করা, প্রিয় মানুষটি বা বন্ধুর জন্য ভিড় ঠেলে শাটলে সিট ধরা। ক্লাসের খুনসুটি, বন্ধুর অনুপস্থিতিতে প্রক্সি দেয়া, কাগজ ছোড়াছুড়ি। পরীক্ষার আগে হলে বন্ধুর কক্ষে গিয়ে নোট নেয়ার প্রতিযোগিতা, ক্লাস লেকচার চেয়ে বিরক্ত করা এবং হওয়া। ঝুপড়িতে চায়ের কাপে ঝড় তোলা, টেবিল চাপড়িয়ে গান গাওয়া, মতের অমিলে যুক্তির ঝড় তোলা। এই স্বল্প সময়ে কত স্মৃতিই না জমেছে ঝুলিতে! কিন্তু এসব দুষ্টুমি, খুনসুটি আর চাইলেও করতে পারবে না ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। কারণ বৃহস্পতিবার ১৬ মার্চ হয়ে গেল এই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের র‌্যাগ ডে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সমাপ্তির শেষ ঘণ্টা বেজেছে ওই দিন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই চবির সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে জড়ো হতে থাকে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিদায়ী ১৮তম ব্যাচের সঙ্গে বিভাগের অন্যান্য ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিল। র‌্যাগ ডে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিভাগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ। এরপরই শুরু হয় দিনটির উদ্যাপন। একে অপরকে রং মাখিয়ে, হইহুল্লোর আর স্লোগানে স্লোগানে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় দেখেছে ১৮’র জয়োৎসব। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিময় প্রতিটি স্থান সুনামি গার্ডেন, স্যার এ এফ রহমান হল, আলাওল হল, জিরোপয়েন্ট, রেল স্টেশন, কাটা পাহাড়, শহীদ মিনার, প্রীতিলতা হল, খালেদা জিয়া হল, শামসুন্নাহার হল, হতাশার মোড়, জারুল তলা, কলা অনুষদ ঝুপড়ি, লেডিস হলের ঝুপড়ি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি প্রতিটি স্থানেই নিজেদের শেষ স্মৃতির চিহ্ন এঁকে দিয়েছেন ১৮’র চির যৌবনের সারথিরা। আর তাদের বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখতে সঙ্গ দিয়েছে পুরো বিভাগের শিক্ষার্থীরা। দিনের শেষার্ধে বিভাগের বারান্দায় বসে নবীন-প্রবীণের আড্ডার আসর। এতে নবীনরা যেমন বড়দের প্রতি তাদের ভালবাসার বর্ণনা দেন তেমনি প্রাণের বিভাগ ছেড়ে যাওয়ার বেদনার কথা অশ্রুসিক্ত নয়নে তুলে ধরেন বিদায়ীরা। স্মৃতিচারণ শেষে গানে গানে মেতে উঠে পুরো বিভাগ। এদিন কোনো সিনিয়র জুনিয়র নেই। নেচে গেয়ে আবীর উড়িয়ে, বাজি ফুটিয়ে, আতশবাজি উড়িয়ে দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা। নবীন-প্রবীণের সর্বাত্মক চেষ্টা শেষ মুহূর্তের স্মৃতিগুলোকে ফ্রেমবন্দী করার। বিভাগের সবচেয়ে অন্তর্মুখী শিক্ষার্থীটিও এদিন প্রাণখুলে চিৎকার করেছে, স্লোগানে তাল মিলিয়েছে গলা ফাটিয়ে। যে শিক্ষার্থীটি সেমিনার, ক্লাস, পড়াশোনার বাইরে কিছুই চিন্তা করতে পারত না সেও এদিন মন খুলে গেয়েছে, নেচেছে। বিভাগের সবচেয়ে হাস্যোজ্জ্বল শিক্ষার্থীটি এদিন বিচ্ছেদের বেদনায় হাসি ফুরিয়ে ফেলেছে। কেঁদেছে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। হাসিমুখে বন্ধুদের বিদায়ের শেষ চেষ্টা হয়েছে ব্যর্থ। ঝগড়া-বিবাদ মিটিয়ে একে অপরকে আলিঙ্গন করে ঝেড়ে ফেলেছে মনের যত ক্ষোভ। ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহাদাৎ হোছাইন ও রুমি আক্তার বলেন, ‘গত ৫ বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আত্মার বন্ধনে বাধা পড়েছি। এখন এই প্রাণের ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতে হবে, ভাবতেই বুকের ভেতর কেমন জানি চিনচিন করে ওঠে। কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে ক্যাম্পাসের আনাচে কানাচে।’ বলতে বলতে তাদের গলা কেমন জানি ভারি হয়ে উঠল। দিন শেষে বিদায়ের পালা। এ সময়টায় অনেককেই দেখা গেল নিজেই নিজের মুখে রং মাখিয়ে নিচ্ছে। কেন? হয়ত নিজের কষ্টের অভিব্যক্তি আড়াল করতে। হয়ত বন্ধুকে নিজের কষ্ট বুঝতে না দিতেই এই লুকোচুরি। রহমান শোয়েব
×