ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প ভেস্তে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ১৭ মার্চ ২০১৭

পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প ভেস্তে যাচ্ছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ১৬ মার্চ ॥ পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্মকর্তাদের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনায় পাবনা সেচ প্রকল্পটি কৃষকদের ফসল চাষে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়ার মাধ্যমে যাত্রা শুরু এ প্রকল্পটি সেচ এলাকা সঙ্কুচিত হয়ে এখন এক হাজার হেক্টরেরও নিচে নেমে এসেছে। এভাবে চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যেই সেচ প্রকল্পটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জানা গেছে, পাউবোর ব্যবস্থাপনায় ৩৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯৯২ সালে পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পটি চালু হয়। এ জন্য বেড়া উপজেলার বৃশালিখায় হুরাসাগর নদ ও কৈটোলা যমুনা নদীর পাড়ে পানি উত্তোলন ও নিষ্কাশনের জন্য নির্মাণ করা হয় দুটি পাম্পস্টেশন। নির্মাণ করা হয় ছোট-বড় সেচ নিষ্কাশন খাল, বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ, স্লুইসগেট, কালভার্টসহ বিভিন্ন অবকাঠামো। পাউবো সূত্রে জানা যায়, পাবনার নয়টি, নাটোরের দুটি ও সিরাজগঞ্জের একটি উপজেলার ১ লাখ ৮৪ হাজার ৫৩৪ হেক্টর জমি নিয়ে সেচ প্রকল্পটি গড়ে তোলা হয়। প্রকল্পটির প্রথম দিকে পাবনার বেড়া, সাঁথিয়া ও সদর উপজেলার সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হতো। উদ্দেশ্য ছিল প্রতিবছর সেচের আওতা আরও বাড়ানো। কিন্তু উল্টো সেচের আওতাধীন জমি কমেছে। পাউবোর উপপ্রধান সম্প্রসারণ কর্মকর্তার কার্যালয় জানায়, গত বছর মাত্র ৭৩৪ হেক্টর বোরো জমিতে সেচ দেয়া হয়েছে। এ বছর ৮০০ হেক্টর বোরো জমিতে সেচ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্পের সেচ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণে প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা ব্যয় হলেও প্রতিবছরই সেচ খালের পাড় ভাঙছে। গত বছরও একাধিক সেচ খালের পাড় ভাঙায় বেশ কিছু এলাকার ফসল উৎপাদনে বিপর্যয় দেখা দেয়। উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের কৃষক আবদুর রহমান জানান, গত বছর বোরো আবাদের জন্য সময়মতো পানি পাইনি। পাউবোর কর্মকর্তাদের অনেক বলার পর পানি পাওয়া যায়। কিন্তু জমিতে চারা রোপণের পরই সেচ খালের পার ভাঙ্গায় পানি বন্ধ হয়ে যায়। এতে রোপণকৃত চারাধান পানির অভাবে শুকিয়ে যায়। বেড়ার হাটুরিয়া, পায়না, চাকলা, দমদমা, খাকছাড়া, সাঁথিয়ার পুন্ডুরিয়াসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব সেচ খাল ভরে রয়েছে আগাছা ও আবর্জনায়। এর মধ্যে টি-৬ নামের সেচ খাল বেড়ার চাকলা ও সাঁথিয়ার পুকুরিয়া গ্রামে ভেঙ্গে গেছে। এমনকি পুন্ডুরিয়া গ্রামে এই খালের বেশ কিছু অংশ বিলীন হয়ে গেছে। সেখানে খালটি এখন রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পুন্ডুরিয়া গ্রামের কৃষক আজিজ জানান, সাত-আট বছর আগেও পুন্ডুরিয়া গ্রামের ফসলের মাঠগুলোয় সেচ খালের পানি দিয়ে বোরোর আবাদ হতো। গত কয়েক বছর ধরে পানি না আসায় কৃষকেরা বাধ্য হয়ে বোরোর পরিবর্তে পেঁয়াজ, রসুনসহ অন্য ফসল আবাদ করছেন। পাউবোর উদ্যোগে গঠিত ইছামতি পানিব্যবস্থাপনা দলের সভাপতি ও বেড়ার জোড়দহ গ্র্রামের কৃষক মঞ্জুরুল কাদের জানিয়েছেন, পাউবোর কর্মকর্তাদের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনায় এটি আজ মৃতপ্রায়। সেচ প্রকল্পটি বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন দফতরে ধরণা দিয়েও কোন ফল পাওয়া যায়নি। পাউবোর প্রধান পানিব্যবস্থাপক মাহফুজ আহম্মদ জানিয়েছেন, ‘সম্প্রতি আমি পাবনা সেচ প্রকল্প এলাকায় গিয়ে এর দুরবস্থা দেখেছি। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় বেশ কিছু সেচ খাল নষ্ট হয়ে গেছে। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় অনেক খালই পুরোপুরি সংস্কারের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ ছাড়া আমাদের লোকবলেরও অভাব রয়েছে। তবে সেচ প্রকল্পটির উন্নয়নের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
×