ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে উদ্দীপ্ত জয় বাংলা কনসার্ট

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ৮ মার্চ ২০১৭

তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে উদ্দীপ্ত জয় বাংলা কনসার্ট

মনোয়ার হোসেন ॥ গানে গানে ফিরে এলো একাত্তর। সংগ্রামমুখর খরস্রোতা সেই সময়কে আলিঙ্গন করা বর্তমান প্রেক্ষাপটে। সুরের সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটলো বাঙালী জাতিসত্তার অবিনাশী চেতনার। এই প্রজন্মের একঝাঁক ব্যান্ডদলের নিজস্ব পরিবেশনার সঙ্গে গীত হলো- স্বাধীন বাংলা বেতারের গান। আর এসবই হলো, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণকে উপজীব্য করে। তারুণ্যের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে পরিণত হওয়া সঙ্গীত আসরটি চললো বিকেল থেকে রাত অবধি। রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়িামে অনুষ্ঠিত হলো, জয় বাংলা কনসার্ট। ঐতিহাসিক সাতই মার্চের দিনটিতে মঙ্গলবার অগণন শ্রোতার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হলো এ কনসার্ট। ঐতিহাসিক সাতই মার্চ উপলক্ষে এ কনসার্টেও আয়োজন করে সেন্টার ফর রিসার্চ এ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইয়ং বাংলা। তরণ প্রজšে§র কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণের তাৎপর্য তুলে ধরার পাশাপাশি মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা জাগানিয়া গানগুলো উপস্থাপন করেন এ সময়ের জনপ্রিয় ব্যান্ডদলের শিল্পীরা। কনসার্টে অংশ নেয় দেশের জনপ্রিয় নয়টি ব্যান্ডদল। গান শুনিয়ে মাঠ ও গ্যালারিভর্তি হাজার হাজার শ্রোতাকে আলোড়ি করে ওয়ারফেজ, চিরকুট, আর্বোভাইরাস, লালন, ক্রিপটিক ফেইট, নেমেসিস, শিরোনামহীন, শূন্য ও স্পন্দন-৭২ শিরোনামের ব্যান্ডদল। গানের পাশাপাশি ডিজিটাল স্ক্রিনে কিংবা শ্রোতার মুখে মুখে বারংবার উচ্চারিত হয়েছে বাঙালিত্বের অহংকারমাখা সেই স্লোগান ‘জয় বাংলা’। ছয় ঘণ্টার এ আয়োজনে প্রতিটি ব্যান্ডদলই নিজেদের পরিবেশনার সঙ্গে গেয়েছে স্বাধীন বাংলা বেতারের প্রেরণাদায়ী কিছু গান। এবারও বড় চমক ছিল বড়পর্দায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটির রঙিন সংস্করণের প্রদর্শন। যখন এটি দেখানো হয় যেন মনে হচ্ছিল সাদা-কালো সেই অতি পরিচিত ঘটনাটি চোখের সামনে ঘটছে। জয় বাংলার গান গাওয়া তরুণদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছিল কনসার্ট আঙিনা আর্মি স্টেডিয়াম। কনসার্টটি উপভোগ করার জন্য প্রায় ৬০ হাজার সঙ্গীতানুরাগী ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিবন্ধন করে। হাজার হাজার সুর রসিকদের সঙ্গে সঙ্গীতায়োজনটি উপভোগ করেছেন বঙ্গবন্ধুর নাতনি সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল ও নাতি রাদওয়াদ মুজিব সিদ্দিক ববি। এছাড়া দর্শক সারিতে বসে গান শুনেছেন বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। দেশের শ্রোতাদের সঙ্গে অনেক বিদেশী অতিথিকেও দেখা গেছে জমজমাট এই কনসার্টে। যখন এ সঙ্গীত আসরের সূচনা হয় তখন ঘড়ির কাঁটায় বিকেল পৌনে পাঁচটা। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি গানটি দিয়ে শুরু হয় পরিবেশনা। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী শিল্পীরা। শিল্পীদের সঙ্গে শ্রোতারাও ঠোঁট মেলায় এই গানের সুরে। এরপর মঞ্চে আসে বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামালের প্রতিষ্ঠিত ব্যান্ডদল ‘স্পন্দন-৭২’। ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গান নিয়ে শুরু হয় এ দলের পরিবেশনা। এরপর একে একে দলটি গেয়ে শোনায় ‘স্কুল খুইলাছে রে মওলা স্কুল খুইলাছে’ ও ‘ওই পাগলা তোর পাগলি কই’। ডুবে যাওয়া বিকেল শেষে সন্ধ্যায় মঞ্চে আসে ব্যান্ডদল ক্রিপটিক ফেইট। আগামী প্রজন্মকে জেগে ওঠার আহ্বানে দলটি প্রথমেই গেয়ে শোনায় ‘বীর ওঠো বীর বাঙালি’। তাদের পরিবেশিত দ্বিতীয় গানের শিরোনাম ছিল ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দিবো রো’। এরপর একে একে গেয়ে শোনায় ‘চোখের জল’, ‘রাঙিয়ে দাও আমার স্বপ্নকে’সহ কয়েকটি গান। শেষ করে তাদের জনপ্রিয় গান ‘আক্রমণ’ পরিবেশনের মাধ্যমে। এরপর মঞ্চে আসে ব্যান্ডদল আর্বোভাইরাস। ‘জন্মভূমির অপমান আর সইবো না’ গানটি দিয়ে শুরু হয় এ দলের পরিবেশনা। এরপর তারা গেয়ে শোনায় ‘আয় আয় বন্ধুরা ফিরে আয়’ ও ‘এখনই নামবে আলো’। ব্যান্ডদল শূন্য গেয়ে শোনায় ‘শত আশা’, ‘সোনা দিয়া বান্ধাইয়াছি ঘর’সহ কয়েকটি গান। লাল-নীল আলোকরশ্মির লেজার শো কনসার্টের পুরো পরিবেশকে যেন আরও রঙিন করে তোলে। সেই সঙ্গে মঞ্চের ব্যাক স্ক্রিনে ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের সাদা-কালো চিত্রের রঙিন রূপায়ন। সাতই মার্চের ভাষণ নিয়ে বাংলা একাডেমির বক্তৃতানুষ্ঠান ॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক সাতই মাচের ভাষণ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি মঙ্গলবার বিকেলে একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ও স্বাধীনতার ঘোষণা’ শীর্ষক একক বক্তৃতানুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে একক বক্তৃতা করেন ইতিহাসবিদ ড. ফিরোজ মাহমুদ। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। সভাপতিত্ব করেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম। একক বক্তৃতায় ড. ফিরোজ মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের আলোচনায় তার স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টি খুবই প্রাসঙ্গিক। কারণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার ইতিহাস শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বিশ্ব- ইতিহাসের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ স্বাধীনতার ভাষণ এবং এই ভাষণ থেকে উৎসারিত বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাগুলো বিশ্বের শ্রেষ্ঠ স্বাধীনতার ঘোষণা। ১৯৭১ সালের মার্চে পৃথিবীর ছয়টি মহাদেশের কোটি কোটি লোক জানতে পারে যে, শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন যা মানবজাতির ইতিহাসে অনন্য। সভাপতির বক্তব্যে ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এক ও অবিচ্ছেদ্য বিষয়। স্বাধীনতার ঘোষণা বঙ্গবন্ধুর কাছে কোন আকস্মিক বিষয় ছিল না বরং ধারাবাহিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অনিবার্য জাতীয় স্বাধীনতার দিকে তিনি বাংলার জনগণকে প্রস্তুত করেছিলেন। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ Ñএই ঐতিহাসিক ঘোষণার মধ্যে যেমন দেশের ভৌগোলিক স্বাধীনতার কথা অন্তর্ভুক্ত ছিল তেমনি মানুষের সার্বিক মুক্তি ও কল্যাণের আকাক্সক্ষাও ধারণ করেছে ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। স্বাগত ভাষণে অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ভাষণ। এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে স্বাধীনতার কথা বারংবার উচ্চারণ করেছেন। সম্প্রতি মানব-ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ স্বীকৃতি পেয়েছে, যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য পরম আনন্দ ও গর্বের বিষয়। লৌহজংয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক নাট্যমেলার সমাপনী ॥ স্টাফ রিপোর্টার মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, লৌহজংয়ে সমাপ্ত হলো সপ্তাহব্যাপী মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক নাট্যমেলা। লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে ১ মার্চ বুধবার থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী এ নাট্যমেলা চলে লৌহজং বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে। মঙ্গলবার বিকেলে ‘সাম্প্রদায়িকতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে তরুণদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আব্দুর রশিদ শিকদারের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সাংসদ সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি। মুখ্য আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট নাট্যব্যাক্তিত্ব ড. বিপ্লব বালা। আলোচক ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব চৈতালী চৈতী। এছাড়া উপস্থিত ছিলেনÑ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল রশিদ মোল্লা, লৌহজং ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক, কনকসার ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ও বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীবৃন্দ। আলোচনা শেষে ইনফরমার নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয় সপ্তাহব্যাপী মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক নাট্যমেলা। স্মরণে চিত্রশিল্পী ও চলচ্চিত্রকার খালিদ মাহমুদ মিঠু ॥ চিত্রশিল্পী, চলচ্চিত্রকার ও আলোকচিত্রী খালিদ মাহমুদ মিঠুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল মঙ্গলবার। গত বছরের ৭ মার্চ রাস্তায় কর্মক্ষেত্র থেকে বাসায় রিক্সায় ফেরার পথে হঠাৎ মাথায় গাছ ভেঙ্গে পড়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। অকালপ্রয়াত এই শিল্পীকে প্রথম প্রয়াণবার্ষিকীতে স্মরণ করা হয় আলোচনা ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে। প্রদর্শনীতে রয়েছে গত ৫ বছরে খালিদ মাহমুদ মিঠুর তোলা ১৪টি আলোকচিত্র ও ২৫টি চিত্রকর্ম। এ আয়োজন করে আর্য চলচ্চিত্র ফাউন্ডেশন। এছাড়াও ছিল শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে মঙ্গলবার বিকেলে শুরু হয়েছে খালিদ মাহমুদ মিঠুর তোলা ছবি ও আঁকা ছবি নিয়ে একটি প্রদর্শনী। এই প্রদর্শনীর পূর্বে গ্যালারির সামনে ছিল মিঠুকে নিয়ে আলোচনা। চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার, আবুল বারক আলভী, শিল্পসমালোচক মইনুদ্দীন খালেদ, খালিদ মাহমুদ মিঠুর স্ত্রী চিত্রশিল্পী কনকচাঁপা চাকমা প্রমুখ। কনকচাঁপা চাকমা স্বামীর স্মৃতিচারণ করে বলেন, মিঠুর চলে যাওয়ার ক্ষতি অপূরণীয়। তিনি তার শিল্পকর্মের ভেতর দিয়ে বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন। সরকারের উচিত, রাস্তায় যেসব মৃত বা অর্ধমৃত গাছ রয়েছে, সেগুলো কেটে পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গাছ ভেঙ্গে পড়ে যেন আর কোন প্রাণ না ঝরে। অনুষ্ঠানে অঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এছাড়া শিল্পীর প্রয়াণবার্ষিকীতে খালিদ মাহমুদ মিঠুর বাসা থেকে শুরু হয়ে ধানম-ির দুর্ঘটনাস্থল পর্যন্ত একটি শোভাযাত্রা বের হয়।
×