ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আপনাকে কত জরিমানা চাপাব, প্রশ্ন কোর্টের

প্রকাশিত: ১৯:৪৪, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আপনাকে কত জরিমানা চাপাব, প্রশ্ন কোর্টের

অনলাইন ডেস্ক ॥ কাঁচুমাচু মুখে দাঁড়িয়ে দুঁদে বাঙালি আইএএস অফিসার অর্ণব রায়। ছুটে আসছে একের পর এক বাক্যবাণ। প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর বলছেন, ‘‘আপনি এই আদালতকে এতটাই বেপরোয়া ভাবে অগ্রাহ্য করছেন, যেন এর কোনও অস্তিত্বই নেই। আমরা বিস্মিত। পাঁচ বছর লেগে গেল আপনাকে এখানে আনতে। এ বার আপনার উপর কত জরিমানা চাপানো হবে? আদালতের নির্দেশে আপনি এসেছেন। সরকার কেন আপনার যাতায়াতের খরচ দেবে? আপনাকেই দিতে হবে। আশা করি, আপনি নিজের দফতরের কাজটা অন্তত ঠিক মতো করেন, সেখানে কোনও গাফিলতি থাকে না!’’ পশ্চিমবঙ্গের পরিবেশ সচিব অর্ণববাবুর ‘অপরাধ’, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও তাঁর দফতর ঠিক সময়ে হলফনামা জমা দেয়নি। শিল্প থেকে পরিবেশ দূষণ রুখতে রাজ্যে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, আরও কী করা দরকার, তা জানতে চাওয়া হলেও ঠিক সময়ে জবাব দেননি। পাঁচ বছর আগে গুজরাতের ‘পর্যাবরণ সুরক্ষা সমিতি’ নামের একটি সংগঠন এই বিষয়ে জনস্বার্থ মামলা করে। রাজ্যগুলির কাছে জবাব চাওয়া হলেও সব রাজ্যই টালবাহানা করছিল। গত ১৬ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব না পেলে মুখ্যসচিব বা পরিবেশ সচিবকে ডেকে পাঠানো হবে। দু’দিন আগে শুনানির সময় দেখা যায়, সব রাজ্য হলফনামা জমা দিলেও পশ্চিমবঙ্গ বাদ। চটে গিয়ে হলফনামা হাতে সশরীরে হাজির হতে রাজ্যের পরিবেশ সচিবকে সমন পাঠায় সুপ্রিম কোর্ট। আজ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হলফনামা দেখেই প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, কোথায় সেই অফিসার? অর্ণববাবু এগিয়ে যেতেই গর্জে ওঠেন প্রধান বিচারপতি। প্রশ্ন তোলেন, ‘‘কবে আপনাকে ডেকে পাঠানোর নির্দেশ জারি করেছিলাম?’’ অর্ণববাবু জবাব দেন, ‘‘২০ ফেব্রুয়ারি।’’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘পাঁচ বছরে যে হলফনামা তৈরি হল না, গত চার সপ্তাহেও হল না, তা দু’দিনে তৈরি হল কী করে!’’ অর্ণববাবু কিছু একটা জবাব দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘এটা ঠিক নয়। এমন চললে আমরা কাজ শেষ করব কী করে! সবাইকে কি আদালতে ডাকতে হবে জবাবের জন্য! এর পর আপনারাই বিচার বিভাগকে দোষারোপ করবেন!’’ শেষে অবশ্য রাজ্যের আইনজীবী জয়দীপ মজুমদার রাজ্যের হয়ে দুঃখ প্রকাশ করায় প্রধান বিচারপতি অর্ণববাবুকে মাফ করে দেন। জানিয়ে দেন, আসা-যাওয়ার বিমান ভাড়ার খরচ তাঁর পকেট থেকে দেওয়ার দরকার নেই। তবে গোটা দেশেই শিল্প থেকে পরিবেশ দূষণ, বিশেষ করে কারখানা থেকে নদী বা জলাশয়ে অশোধিত বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে কড়া নির্দেশ জারি করেছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বিজ্ঞাপন দিয়ে সমস্ত শিল্প সংস্থাকে তিন মাসের মধ্যে প্রাথমিক বর্জ্য শোধনের ব্যবস্থা বা ‘প্রাইমারি এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ চালু করতে বলবে। জনস্বার্থ মামলাকারী সংগঠনের আইনজীবী কলিন গঞ্জালভেসের অভিযোগ ছিল, প্রথমে পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র পেতে কারখানাগুলি ওই ব্যবস্থা তৈরি করে। তার পর সেটি আর চালু থাকে না। আদালতের নির্দেশ, বিজ্ঞপ্তির তিন মাস পরে পর্ষদ সমীক্ষা চালাবে। বর্জ্য শোধনের ওই ব্যবস্থা চালু না থাকলে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে। পরে ওই ব্যবস্থা চালু হলে ফের কারখানা খোলার অনুমতি মিলবে। পশ্চিমবঙ্গ হলফনামায় জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশিকা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক রাজ্যের তিনটি শহরকে আশঙ্কাজনক দূষিত এলাকা বলে চিহ্নিত করেছে। এগুলি হল—হলদিয়া, হাওড়া ও আসানসোল। প্রচণ্ড দূষিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে দুর্গাপুর। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এই এলাকাগুলির দূষণ কমাতে ব্যবস্থা নিয়েছে। পরিবেশ সংক্রান্ত নিয়ম না মানার জন্য মহেশতলার ৭৯টি ডাইং ও ব্লিচিং কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। ওই কারখানাগুলির সকলের ব্যবহারের জন্য একটি বর্জ্য শোধন ব্যবস্থা বা ‘কমন এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ তৈরি হচ্ছে। যেমনটা রয়েছে বানতলা চর্মনগরীতে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, যেখানে এমন ব্যবস্থা নেই, সেখানে তিন বছরের মধ্যে তা তৈরি করতে হবে। পুরসভা বা স্থানীয় প্রশাসনের হাতে তার অর্থ না থাকলে, কারখানাগুলি থেকেই তা আদায়ের জন্য ৩১ মার্চের মধ্যে একটি নীতি তৈরি করতে হবে। যাতে আগামী অর্থবর্ষ থেকেই তা চালু হয়। না হলে রাজ্য সরকার এই অর্থ বরাদ্দ করবে। ছয় মাসের মধ্যে সব রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে নিজেদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত দূষণ মাত্রা জানানোর ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। পর্ষদের সদস্য-সচিব ও পরিবেশ সচিব শীর্ষ আদালতের নির্দেশ রূপায়ণের দায়িত্বে থাকবেন। তাঁরা এই তথ্য পাঠাবেন কেন্দ্রীয় ভূগর্ভস্থ জল কর্তৃপক্ষকে। তারা এ বিষয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে রিপোর্ট পাঠাবেন। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×