ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ভূগর্ভে মানুষের সৃষ্ট বড় ধরনের ফাটল

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ভূগর্ভে মানুষের সৃষ্ট বড় ধরনের ফাটল

সমুদ্র হক ॥ মাঝারি ভূমিকম্পেই বগুড়ার পরিণতি ভয়াবহ। পরিণত হবে ধ্বংসযজ্ঞের নগরীতে। এমনই আভাস দিয়েছে এশিয়ান ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রিপার্ডনেস সেন্টার (এডিপিসি)। ভূকম্পন ঝুঁকি জরিপকারী এ দল বগুড়ার ভূগর্ভে বড় ধরনের ফাটল লক্ষ্য করেছে। দুর্যোগের পর উদ্ধার অভিযান পরিচালনার কোনো প্রস্তুতি নেই। ঢাকায় মাঝেমধ্যেই ভূকম্পন উদ্ধারের মহড়া হয়। বগুড়া ঝুঁকির মধ্যে থাকার পরও এ ধরনের কোনো মহড়া নেই। অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং বগুড়ার চার ধারে মাটির নিচ থেকে যান্ত্রিক শক্তি প্রয়োগে বালি ও পানি উত্তোলনই বগুড়াকে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলেছে। ভূকম্পনের অন্যতম কারণ মানুষের সৃষ্ট। সূত্র জানায় পূর্বাঞ্চলের সিলেট থেকে বগুড়ার ওপর দিয়ে বড় ধরনের একটি ফল্ট উত্তর পূর্বে চলে গেছে। ভূবিজ্ঞানীরা এই ফাটলকে ডাউকি ফল্ট বলে। মাটির নিচে পানি বালি শিলা স্তর সাজানো থাকে। বগুড়া অঞ্চলে গত প্রায় ২০ বছর ধরে বড় ব্যাসার্ধের পাইপ ভূঅভ্যন্তরে ড্রিলিং করে উচ্চক্ষমতার শ্যালো ইঞ্জিনের শক্তিতে চিকন বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রথমে আসে পানি। তারপর চিকন মসৃণ বালি পানির সঙ্গে ওপরে ওঠে। এ সময়ে সাজানো শিলা স্তরে বিচ্যুতি ঘটে। ভূগর্ভে সৃষ্টি হয় বড় ধরনের ভ্যাকিউম। এ আঘাতের ফলে প্রকৃতির বিরূপ আচরণে ভ্যাকিউমের ওপর তৈরি করে দিয়েছে ডাউকি ফল্ট। এই ফল্টে মাঝারি ঝাঁকুনি সহ্য করার ক্ষমতা আর নেই। ভূকম্পন মাঝারি হলেও তা হবে বড় ভূকম্পনের মতোই। বগুড়ার পূর্বে ও পশ্চিমাংশের অনেক এলাকার সমতল ভূমি দেবে গিয়েছে। যা খালি চোখেই দেখা যায়। অনেকে বালি উত্তোলনের পর মাটি দেবে যাওয়ার সঙ্গেই আরও খুঁড়ে পুকুর বানায়। এমনও দেখা গেছে যন্ত্র শক্তি প্রয়োগে বালি উত্তোলন এলাকার কাছেই নির্মিত হয়েছে বহুতল ভবন। এদিকে উত্তরাঞ্চলের মধ্য নগরী বগুড়ায় কোন নিয়মনীতি এবং বিল্ডিং কোড না মেনে নির্মিত হচ্ছে বহুতল ভবন। নগরীর পাড়া মহল্লার ফিডার রোড সরু পথের দুই ধারেই নির্মিত হচ্ছে বহুতল ভবন। দিনে দিনে পরিণত হয়েছে এক ঘিঞ্জি নগরীতে। যা অব্যাহত রয়েছে। এভাবেই সম্প্রসারিত হয়েছে নগরায়ন প্রক্রিয়া। এ অবস্থায় মাঝারি ভূকম্পনেই নেমে আসতে পারে ভয়ঙ্কর দুর্যোগ। ধ্বংসযজ্ঞে উদ্ধার অভিযান ঠিকমতো চালানো যাবে না। রেসকিউয়ের জন্য ঢুকতে পারবে না ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সসহ কোন রেসকিউ টিম। বেড়ে যাবে মৃত্যুর সংখ্যা। ভূকম্পন অঞ্চল ম্যাপের নক্সায় ও বর্ণনায় আছে, বগুড়া মাঝারি ভূকম্পনপ্রবণ এলাকা। কম্প্রিহেন্সিভ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের (সিডিএমপি) অনুসন্ধানে দেখা গেছে বগুড়ার মাটি দুই প্রান্তে দুই রকম। পূর্ব দিকের মাটি (মৃত্তিকা) কিছুটা নরম আলগা। যেখানে চিকন বালির পরিমাণ বেশি। পশ্চিমাংশের মাটি ঘন শক্ত ও আঠালো। এমন মাটি দিয়েই নিকট অতীতে শহরের অনেক বাড়ি নির্মিত হতো। বলা হতো মাটির বাড়ি। বর্তমানে তা অনেক কম। নির্মিত হয়েছে অট্টালিকা ও বহুতল ভবন। মাটি যত শক্তই হোক ফল্ট ও ভ্যাকিউমের কারণে মাঝারি কম্পন সহনীয় অবস্থা থাকবে না। এডিপিসির সূত্র জানায় ভূকম্পনের ঝুঁকি নিরূপণ করতে গিয়ে দেখা গেছে বগুড়া নগরীর ঘরবাড়ি ও স্থাপনা নির্মাণে বিল্ডিং কোড মানা হয়নি। পৌর এলাকায় ৬ তলার ওপর ঘরবাড়ি নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও ১০ তলার ওপর অট্টালিকা নির্মিত হচ্ছে। এ বিষয়ে পৌর মেয়রের কথা, বহুতল ভবন নির্মাণের অনেক মালিক ঢাকায় গিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিয়ে আসে। আরেক সূত্র জানায় অধিকাংশ ঘরবাড়ি সয়েল টেস্ট করে নির্মিত হয় না।
×